তারা গেরিলা নারীবাদিকর্মি

নারীবাদি সংগঠনের কর্মি তাঁরা। যৌন হয়রানি ও গৃহনির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ক্যাম্পেইন চালাতেন তাঁরা। হুট করে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে চমক দিতেন তাঁরা। কোথাও বিয়ের পোশাকে হাজির। সেই পোশাকে আবার নির্যাতনের প্রতীক রক্তের চিহ্ন। আবার কোথাও গৃহকর্মির পোশাকে ব্যানার নিয়ে দাড়িয়ে গেছেন তাঁরা। রীতিমতো গেরিলা ধাঁচে তাঁরা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছিলেন। তবে তাদের এ কর্মকাণ্ডে বাদ সেধেছে পুলিশ। নারীবাদী এই দলের ১০ সদস্যকে আটক করেছে।

গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যৌন হয়ারানির বিরুদ্ধে গণপরিবহন ও পাতাল রেলপথে প্রচারপত্র ও স্টিকার বিতরণের পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু পুলিশ তা করতে দেয়নি। প্রায় এক মাস পর কারাগার থেকে পাঁচজন ছাড়া পেলেও বন্দী রয়েছে লি তিংতিং, ওয়াং ম্যান, ওয়েই তিংতিং , উ রংরং ও ঝেং চুরান। তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হতে পারে।

এদের মধ্যে দুই বন্দীর ব্যাপারে সহকর্মিদের উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ ওয়াং ম্যান ও উ রংরংয়ের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাঁরা হৃৎপিণ্ড ও যকৃতের দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন। তাঁদের কারা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের আইনজীবী জানান, তাঁদের স্বাস্থ্যের বেশি অবনতি ঘটেছে।

মুক্তি পাওয়া একজন নাম প্রকাশ না করে বিবিসিকে বলেন, ‘প্রথম দিকে আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। তবে এখন মনে হচ্ছে আমি অর্থপূর্ণ কিছু করেছি। কিন্তু অন্যদের কী হবে, তা নিয়ে এখন চিন্তিত। যদি তাঁদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি বড় ধরনের হোঁচট খাবে।’

আবার আন্দোলনে নামার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি রাস্তায় বিক্ষোভ করার মতো চূড়ান্ত কিছু করতে পারব না। মনে হচ্ছে আমাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু আন্দোলন চলবে।’

নারীবাদী এই কর্মীদের আটকের ঘটনায় বিশ্বে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তার পরও তাঁদের ছাড়তে নারাজ চীন সরকার।

গত সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হু চুনইং বলেন, তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে চীনকে কিছু বলার অধিকার কারও নেই। চীনের বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করবে না-এটাই তাঁদের প্রত্যাশা।

এ ঘটনাকে দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো সাম্প্রতিক সময়ে কঠোর দমনপীড়ন হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ক্ষমতায় আসার দুই বছরের মধ্যে সাংবাদিক, আইনজীবী, এনজিও কর্মী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীদের কারাগারে ঢোকানোর ঘটনা ঘটেছে।



মন্তব্য চালু নেই