অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর ঘাতক কুমিরকে হত্যা করলেন স্বামী
হ্রদে পানি আনতে গিয়েছিলেন মুবারাক বাটামবুজে স্ত্রী ডিমেটেরিয়া নাবিরে। এ সময় ওত পেতে থাকা কুমির খেয়ে ফেলে তাকে। স্ত্রী হত্যার প্রতিশোধে তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেন বাটামবুজে। এর চার মাস পর ওই কুমিরকে শিকারের মাধ্যমে স্ত্রী হত্যার প্রতিশোধ নিলেন তিনি।
আফ্রিকার দেশ উগান্ডার হ্রদ কিয়োগার তীরে এক দল নারীর সঙ্গে পানি সংগ্রহ করছিলেন ডিমেটেরিয়া নাবিরে। এ সময় তাকে কুমিরটি আক্রমণ করে।
কুমিরটি তার ঘাড় কামড়ে ধরে পানির নিচে নিয়ে যায়। এরপর নাবিরেকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তার স্বামী মুবারাক বাটামবুজে এ ঘটনায় শোকে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময় নাবিরে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
মুবারাক শুধু তার স্ত্রীকে হারাননি। জন্ম নেওয়ার আগেই তিনি তার অনাগত শিশুসন্তানকেও হারিয়েছেন। তিনি অসহায় হয়ে পড়েছিলেন।
শোকগ্রস্ত স্বামী বলেন, ‘কুমিরটি আমার স্ত্রীকে পুরোপুরি খেয়ে ফেলেছে। তার কোনো কিছুই আর দেখা যায়নি– কোনো কাপড় না, শরীরের এমন কোনো অংশ না। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কী করব। আমার জীবনের সেটাই শেষ ছিল, আমি একদম অসহায় বোধ করছিলাম।’ কিন্তু গত মাসে ৫০ বছর বয়স্ক মুবারাক বাটামবুজে জানতে পারলেন কুমিরটি আবার হ্রদ এলাকায় ফিরে এসেছে। খবর পেয়ে সেখানে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে ছুটে যান তিনি। কিন্তু কুমিরটি ঘায়েল করা সহজ ছিল না।
বাটামবুজে কুমির শিকারের ওই অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলেন, ‘কুমিরটি ছিল বিশাল এক জন্তু, আমরা তাকে লাঠিসোঁটা দিয়ে আর পাথর মেরে ঘায়েল করার চেষ্টা করি, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।
এরপর আমি স্থানীয় এক কামারকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললাম, আমি যে জন্তুর সঙ্গে লড়াই করছি, সে আমার স্ত্রী এবং সন্তানকে কেড়ে নিয়ে গেছে। আমি প্রতিশোধ চাই। কামার পাঁচ ডলারের বিনিময়ে তাকে একটা বল্লম বানিয়ে দেয়।’ টাকার পরিমাণ বাটামবুজের জন্য বেশ বড় অঙ্কই ছিল, কিন্তু যে জন্তু তার ভবিষ্যৎ কেড়ে নিয়েছে তাকে হত্যা করার জন্য তিনি বদ্ধপরিকর ছিলেন।
নতুন বল্লম হাতে বাটামবুজে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে বিশাল আকারের কুমিরটির সঙ্গে না লাগার জন্য উপস্থিত অনেকে আকুতি জানিয়েছিলেন।
কিন্তু বাটামবুজে নাছোড়বান্দা। তিনি বলেন, ‘আমি জন্তুটাকে মারতে প্রথমবার ব্যর্থ হয়েছি। আমি মৃত্যুর তোয়াক্কা করি না, যদি আমি এই জন্তুকে মারতে গিয়ে মরি। আমি এই বল্লম দিয়ে তাকে ঘায়েল করব।’
বাটামবুজে বল্লমটা কুমিরের শরীরে ঢুকিয়ে দেন। বন্ধুরাও তাকে সহায়তা করে। পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে ওঠে এবং সেখানে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তিনি ভীত ছিলেন না। কুমিরটি শিকার না করা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি।
টানা দেড় ঘণ্টা ক্ষিপ্ত কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার পর অবশেষে জন্তুটির মৃত্যু হয়। ক্লান্ত হয়ে সবাই তাদের গ্রামে ফিরে যায়।
উগান্ডা ওয়াইল্ডলাইফ অথরিটির রেঞ্জার অসওয়াল্ড তুমানিয়া বলেন, ৬০০ কিলোগ্রাম ওজনের এই কুমিরটি চার মিটারের বেশি দীর্ঘ ছিল।
মৃত কুমিরকে দেশের রাজধানী কামপালার মাকারেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পশু চিকিৎসক উইলফ্রেড এমনেকু কুমিরটি পরীক্ষা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের কুমির বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম ব্রিটন বলেন, কুমিরটির পেটে নাবিরের দেহের কোনো অংশ পাওয়া গেলে তিনি আশ্চর্যই হবেন। কারণ, ১২ সপ্তাহের পর কুমিরের পেটে কোনো হাড্ডি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বাটামবুজেকে গ্রামবাসীরা তারকা মর্যাদা দিয়েছে গেলেও, কুমিরের পেটে তার স্ত্রীর থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এর আগেও রাইজিংবিডিতে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, ডেইলি মেইল।
মন্তব্য চালু নেই