বইপ্রেমীদের পদচারণা
এটাই যেন নিয়ম, এটাই যেন ঐতিহ্য। প্রধানমন্ত্রী মেলা প্রাঙ্গণে সারছেন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা; আর বাইরে হাজারও মানুষ অপেক্ষমাণ। বইপ্রেমীদের এমনই আবেগের মধ্য দিয়ে রবিবার গোধূলীলগ্নে উদ্বোধন হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও বিদায় লগ্নে হাজারো মানুষ উপস্থিত থাকলেও কিছুক্ষণ পরই মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীর উপস্থিতি কমতে থাকে। শুধু মানুষ কম ছিল এমন নয়। বই মেলার প্রস্তুতিও শেষ করেনি অধিকাংশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এ দৃশ্য বাংলা একাডেমি ও দ্বিতীয় বারের মতো সম্প্রসারিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পর্যন্ত সম্প্রসারিত। যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন বই দিয়ে সাজানো হয়েছে; চোখে পড়ার মতো দর্শনার্থী ছিল না সেখানেও।
যারা এসেছে তারাও কেবলই দর্শনার্থী বলে জানিয়েছেন আগামী প্রকাশনীর সত্বাধিকারী ওসমান গনি, অন্যপ্রকাশের সত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম, চারুলিপি প্রকাশনীর সত্বাধিকারী হুমায়ুন কবির, আদর্শ প্রকাশনীর সত্বাধিকারী মামুনুর রশীদ।
আগামী, অন্য প্রকাশ, আদর্শ, পললসহ শিশুতোষ স্টলগুলোতে সামান্য বিক্রি হলেও অধিকাংশ স্টলে একটি বইও বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রকাশনা সংস্থার সত্বাধিকারীরা। তবে তারা হতাশ নন।
জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থার সভাপতি ও আগামী প্রকাশনীর সত্বাধিকারী ওসমান গনি বলেন, ‘বইমেলা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনেকদিনের। মেলার প্রথম দিনটা এমনই হয়। হরতালের দিনে জীবনের হুমকি নিয়েও মেলার প্রথম দিনে যে পরিমাণ দর্শক এসেছে তা দেখে আমাদের হতাশ না হয়ে বরং আশান্বিত হবার কথা। আশা রাখছি প্রথম সপ্তাহ শেষে সকল প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে পুর্ণ উদ্যোমে জমে উঠবে মেলা।’ এমনটাই প্রত্যাশা করছেন অন্যান্য প্রকাশনা সংস্থার সাথে সম্পৃক্তরা।
প্রথমবারের মতো স্থাপিত হয়েছে প্যাভিলিয়ন। যেখানে শুধুই প্রকাশকরা বসেছেন নতুন বইয়ের পসরা সাজিয়ে। নানা রঙ আর বর্ণের স্টলের সঙ্গে নতুন বইয়ের মাতাল হাওয়া মাঘের শেষ বিকেলকে যেন অন্যরকম করে তুলেছিল। সোহরাওয়ার্দীতে প্রকাশকরা বসেছেন বলে, একাডেমি প্রাঙ্গণ মিয়ম্রান- তা কিন্তু না! সেখানেও রয়েছে শিশু-কিশোরদের বই নিয়ে শিশুকর্নার আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণাধর্মী প্রকাশনা।
আর ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউজের পাশের বহেড়া তলায় বসেছে লিটল ম্যাগের বড় আড্ডা।
অমর একুশের চেতনাঋদ্ধ এই মেলা। আর সেজন্যই বরাবরের মতো আগত দর্শনার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় উত্তাল সেই দিনের কথা। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সচিত্র ব্যানার, ভাষার মর্যাদা রক্ষায় শহীদদের আত্মাত্যাগের স্মৃতি স্মরণ করে কবি-সাহিত্যিকদের নানা উক্তি সংবলিত ব্যানার, ভাষা শহীদদের প্রতিকৃতিসহ অঙ্গসজ্জায় নানাভাবে ফুটে ওঠে সেই দিনগুলোর কথা।
এদিকে, মেলার পরিধি গতবারের চেয়েও বাড়ানোয় খোলামেলা পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে আগতদের জন্য বসার জায়গাও। এতে পাঠকদের পাশাপাশি খুশি প্রকাশকরাও। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি বলেন, ‘এবারের মেলা বেশ খোলামেলা হওয়ায় পাঠকরা বই দেখে কিনতে পারবে। সেই সঙ্গে বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকাটাও বেশ ভালো।’
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ চলছে, কিন্তু বইপ্রেমীদের ভিড় রয়েছে। আমরা বরাবরই দেখেছি, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে মেলা আরও বেশি জমজমাট থাকে। এবারও তাই হবে বলেই মনে করছি। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ, বইমেলাকে এসবের বাইরে রাখুন।’
প্রতিবারের মতো এবারও বাঙালির প্রাণের এই মেলার শুরুতেই চোখে পড়ে কিছুটা অসঙ্গতি। বেশ কিছু প্রকাশনী এখনো শেষ করতে পারে নি স্টল সাজানোর কাজ। পাশাপাশি মেলার অনেক জায়গাতেই ছড়িয়ে ছিলো কাঠ, বাঁশ, দড়ি-দড়া, শোলা, হার্ডবোর্ড। প্রধানমন্ত্রী আসার কারণে মেলার প্রথম দিন প্রচুর পানি ছিটানো হয়েছে। তারপরও মেলার কোথাও কোথাও উড়তে দেখা গেছে ধুলাবালি। আবার কোথাও কোথাও ছিলো কাদা-জলের মাখামাখিও।
নতুন বই
মেলার প্রথমদিনে তথ্যকেন্দ্র উন্মুক্ত না হওয়ায় একাডেমির সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রথম দিনে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সঠিক সংখ্যা জানা যায় নি। তবে বিভিন্ন স্টল ঘুরে জানা গেছে, নতুন শতাধিক বই প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন বই ‘শেখ মুজিব : আমার পিতা’। অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের ‘তব ভুবনে তব ভবনে’ ও মোস্তফা কামালের ‘ডাকাতের কবলে ফটকু মেলা’, বিভাষ থেকে এসেছে মজিবর রহমানের ‘নির্মলেন্দু গুণ : উজান তরীর মাঝি’, সাইফুজ্জামানের ‘মহাদেব সাহা : আনন্দ অশ্রুতে’, ঐতিহ্য থেকে এসেছে শারমিন আহমদের ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’ ও আসাদুল ইসলামের ‘দ্য ম্যাড’।
মন্তব্য চালু নেই