এবারের বইমেলার চমক

বইমেলার আগের দিন বাংলা একাডেমি জানিয়েছিল এবার চমক থাকবে। রোববার সন্ধ্যায় সাধারণ পাঠক বইমেলায় প্রবেশ করার সুযোগ পায়। গতবারের মতো এবারও দুটো অংশে বইমেলা হচ্ছে। তবে চমক বলতে সোহরাওয়ার্দীতে বইমেলার পরিসরটা বেড়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতবারের চেয়ে বেশি জায়গাজুড়ে স্টল বসেছে। বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা রেখে স্টলগুলো সাজানো হয়েছে। তবে এখনো অনেক স্টল সেজে ওঠেনি।

তবে গতবারের মতো এবারও ধন্দে পড়েছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা- বাংলা একাডেমিতে আগে ঢুকবেন নাকি সোহরাওয়ার্দীতে।

প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবিবও ধন্দে পড়েছিলেন। প্রথমে সোহরাওয়ার্দীর অংশে মেলায় ঘণ্টাখানেক ঘুরেছেন। কিন্তু তিনি সেখানে যেনো বইমেলার আনন্দটা খুঁজে পেলেন না। শেষে সঙ্গীদের নিয়ে বাংলা একাডেমিতে গিয়ে বইমেলার আবহ খুঁজে পান।

এদিন বাংলা একাডেমি চত্বরে পাঠকদের ভিড়ই ছিল বেশি।

বইমেলার প্রথম দিনে বর্ধমান ভবনের উত্তর পাশে টেলিটকের স্টলে ভিড় জমে যায়। টেলিটক এবারের মেলার প্রধান স্পন্সর। টেলিটক মেলা উপলক্ষে ‘বর্ণমালা’ নামে একটি প্যাকেজ দিচ্ছে। ৫০ টাকার ওই সিমটি কিনতে প্রথম দিনে তরুণদের ভিড় দেখা গেল। তাদের অনেকে কেবল সিম কিনতেই মেলায় এসেছেন।

ঝিনুক নামের ক্রেতা বলেন, ‘বইমেলার প্রথম দিন আজ দিন। মেলায় টেলিটকের সিমের খোঁজ নিতে এসেছি।

দেশের রাজনৈতিক অবস্থা আর মেলার প্রথম দিন। এই দুই কারণে মেলায় দর্শক সমাগম কম ছিল। ভবিষ্যতে এমন অবস্থা চলার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

মেলায় দুই অংশের মাঝে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং রাস্তায় প্রচুর হকার বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি করছে। এমনকি বাংলা একাডেমি চত্বরের মধ্যেও ঝালমুড়ি, ফুসকাওয়ালেদের অবাধে ঘুরতে দেখা গেল।

ফেরিওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রশাসনের শৈথিল্যতার সুযোগ নিয়ে বাংলা একাডেমিতে বেচাবিক্রি করতে ঢুকেছে। একাডেমির মূল ফটকের বাইরে একজনকে দেখা গেল হকারদের কাছ থেকে বিশ টাকা করে চাঁদা তুলতে। তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে দারোগার লোক বলে পরিচয় দেয়। হকারদের মধ্যে একজন টাকা না দিতে চাইলে দারোগা দিয়ে বইমেলা চত্বর থেকে বের করে দেবে বলে শাসায়।

এদিকে বাংলা একাডেমির আনসার বাহিনীর সদস্যরা জানান, মেলার প্রথম দিন হওয়ায় হকারদের ঢুকতে দেয়া হয়েছে। আগামীকাল থেকে হকারদের ঢুকতে দেয়া হবে না।

এবারের বইমেলার বড় চমক হলো মেলার পরিসর। বইমেলা এখন আর কেবল বর্ধমান ভবনের আশেপাশে বন্দি নয়। সেটি এখন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছড়িয়ে পড়েছে।

টিএসসির পূর্ব পাশে গেট বানানো হয়েছে। দোয়েল চত্বরে আরকটা গেট। সোহরাওয়ার্দীতে ঢুকতে বের হতে একটাই গেট। বাংলা একাডেমির মূল গেট ঢুকতে বের হতে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশে আগের গেটটাও খোলা আছে।

আগে বাংলা একাডেমির বাইরে রাস্তায় মেলা বসতো। এবার সেখানে স্টল না থাকলেও পুরাতন বইয়ের বাজার বসেছে। তবে সে বাজারেও ভাটা। রাস্তায় অবৈধ স্টল তৈরি করতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুতি নিতে দেখা গেল। পুলিশের বাধার মুখে তারা সেখানে সুবিধা করতে পারেনি। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের দাবি আগামীকালের মধ্যে ঠিকই ম্যানেজ করা হবে।

এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির আনসার বাহিনীর সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, রাস্তায় কাউকে স্টল বসাতে দেয়া হবে না।

বর্ধমান হাউজের সামনের কোণে টেলিটক টাওয়ার অস্থায়ী টাওয়ার স্থাপন করেছে। তবে মেলায় টেলিটকের ওয়াইফাইয়ের কোনো সিগন্যাল পাওয়া গেল না। বরং টাওয়ারের মূল বিদুৎ নিয়ন্ত্রণ বাক্স উন্মুক্ত। এমন উন্মুক্ত তারের বাক্স দেখা গেল সোহরাওয়ার্দীর বইমেলার অংশেও। শিশুদের জন্য এসব বিদ্যুৎতের তার বিপজ্জনক হতে পারে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার পরিসর বড় হলেও শৌচাগারের সংখ্যা কম। প্রথম দিনে দর্শকসমাগম কল হলেও শৌচাগারে লাইন দেখা গেল।

সময় মাঘের শেষ। সবখানে ধূলার রাজত্ব। বইমেলার দু’অংশেই ধূলা উড়ছে। প্রচুর পরিমান পানি না ছিটালে এ ধূলো দর্শকদের অস্বস্তিতে ফেলবে। প্রথম দিনে বাংলা একাডেমি চত্বরের নজরুল মঞ্চ ছিল অনেকটাই শূন্য। বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য সেখানে লেখকদের ভিড় নেই।

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশাসন দেখছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন তিনি। এবিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে নারাজ।



মন্তব্য চালু নেই