মন্ত্রী-পুত্রের বিয়েতে ভোজেই খরচ কোটি টাকা ?
তিন হাজার অতিথি! একশোর কাছাকাছি খাওয়ার স্টল! নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করতে, তাবড় ব্যক্তিদের ঢল! পরিবহণমন্ত্রীর ছেলের বিয়ের রিসেপশন পার্টির তদন্তে নেমে সিবিআইয়ের হাতে উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, যা চোখ কপালে তুলেছে গোয়েন্দাদের। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে দাবি, পিসি চন্দ্র গার্ডেনে আয়োজিত এই পার্টিতে আমন্ত্রিতের সংখ্যাই ছিল কমপক্ষে ৩ হাজার।
অনুষ্ঠানস্থলে ছিল দুটি মঞ্চ। একটিতে বসেছিলেন নবদম্পতি। অন্যটিতে ছিল অতিথিদের জন্য মনোরঞ্জনের আয়োজন। তবে, সব আয়োজনকে ছাপিয়ে যায় ভোজের বাহার! নানা সূত্র মারফত সিবিআই জানতে পেরেছে, এই রিসেপশন পার্টিতে খানা-পিনার ব্যবস্থা ছিল এলাহি। সূত্রের দাবি,মেনুতে ছিল দেশের কমপক্ষে ১০টি রাজ্যের নানা পদ। শুধু ভারত নয়, ছিল বাংলাদেশি ব্যাঞ্জনও। পার্টিতে খাবারের স্টলের সংখ্যা ছিল ৪০ থেকে ৪৫টি। কী ছিল না সেই স্টলে! সিবিআই সূত্রে দাবি, শুধু বিরিয়ানিই ছিল ৩-৪ রকমের।খাসির মাংসের পদ ছিল ৭-৮ ধরনের। ছিল ৬ রকমের মুরগির মাংসের পদ। মাছ ছিল ৮-৯ রকমের। এতো গেল আমিষ। নিরামিষের সম্ভারও ছিল তাক লাগানোর মতো! ৬-৭ রকমের পনীরের পদ, ১০-১২ রকমের সব্জি। ভেজ বিরিয়ানি থেকে ভেজ ফ্রায়েডরাইস – সবই ছিল রসনা তৃপ্তির জন্য। শেষ পাতে, মুখ মিষ্টির জন্য ছিল ৩৫ রকমের মিষ্টি। শুধু শরবত ও ঠান্ডা পানীয়ের স্টলের সংখ্যাই ছিল ৮টি।
শুধু আহারের আয়োজন নয়, তা পরিবেশনের ঢঙেও ছিল চমকের ছোঁয়া! সিবিআই সূত্রে দাবি, যে প্রদেশের খাবার, পরিবেশনকারীদের পরনেও ছিল সেই প্রদেশের পোশাক।
সিবিআই সূত্রে দাবি, মদন মিত্রের ছেলের বিয়ের রিসেপশন পার্টির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শহরের নামজাদা ৪-৫টি ক্যাটরিং সংস্থাকে। পার্টিতে কাজে নেমেছিলেন ওই সংস্থাগুলির কমপক্ষে চার-পাঁচশো কর্মী। প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমান, এই পার্টিতে প্লেট প্রতি খরচ পড়েছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৩ হাজার অতিথিকে খাওয়াতেই শুধু খরচ হয়েছিল ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা।
কিন্তু, এত টাকা মদন মিত্র পেলেন কোথা থেকে? প্রশ্ন সিবিআইয়ের। প্রশাসনিক সূত্রে খবর,
রাজ্যের একজন মন্ত্রীর বেতন ৮৩০০ টাকা। ইলেকট্রিক ও ফোনের বিল মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এরসঙ্গে মন্ত্রীদের জন্য প্রত্যহ ১০০০টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স চালু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে মাসে ১২ হাজার টাকা প্লাস ৩০ হাজার টাকা অর্থাৎ ৪২ হাজার টাকা। অর্থাৎ বছরে প্রায় পাঁচ লক্ষ চার হাজার টাকা।
কিন্তু, এই বেতন পেয়ে শুধু খাওয়াতেই কোটি টাকা খরচ করলেন কী করে মদন মিত্র? জানতে চাইছে সিবিআই। শুধু এই নয়, সিবিআই সূত্রে দাবি, পার্টির ভিতরে মোতায়েন করা হয়েছিল ৮০ থেকে ১০০ জন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী। বাইরে পুলিশ। এমনকী, কলকাতা পুলিশের কয়েকজন পদস্থ কর্তাও এই পার্টিতে সাদা পোশাকে হাজির ছিলেন বলে সূত্রের দাবি। এখানেই শেষ নয়! অভিযোগ, নজরদারি চালানোর জন্য, অতিথিদের মাথার উপর দিয়ে, অবিরাম চক্কর কেটেছিল কলকাতা পুলিশের ড্রোন। যাবতীয়, দাবি ও অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
এ বিষয়ে মদন মিত্রর বড়ে ছেলে স্বরূপ মিত্রের প্রতিক্রিয়ার জন্য তাঁর বাড়িতে যাওয়া হলেও, তাঁকে পাওয়া যায়নি।মদন মিত্রর ছোট ছেলে শুভরূপ মিত্রর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও, প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি তিনি।
মন্তব্য চালু নেই