পাক ট্রলারে পাচারকারী নয়, ছিল জঙ্গি: ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

পোরবন্দরের কাছে বর্ষশেষের রাতে বিস্ফোরক ভর্তি ট্রলার বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে সোমবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। ওই ট্রলারে চোরাচালানকারী নয়, জঙ্গিরাই ছিল বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। তাঁর এই মতের স্বপক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর ব্যাখ্যা: “জঙ্গি না হলে কেউ আত্মঘাতী হওয়ার কথা ভাবে না। পাচারকারী হলে তারা আত্মসমর্পণ করত। নিজেদের উড়িয়ে দিত না।”
গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে গুজরাতের পোরবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দূরে একটি পাকিস্তানি ট্রলারের সন্ধান পায় উপকূলরক্ষী বাহিনী। যদিও আগে থেকেই ওই ট্রলারটির খোঁজ চালাচ্ছিল তারা। কেননা, ভারতীয় গোয়েন্দারা আড়ি পেতে ওই ট্রলারের সঙ্গে ওয়্যারলেসে করাচির এক ব্যক্তির কথোপকথন শুনে ফেলেন। তার ভিত্তিতে খবর দেওয়া হয় উপকূলরক্ষী বাহিনীকে।
এর পরই আরব সাগরের বুকে চলে ট্রলার সন্ধানের কাজ। শেষে ওই দিন রাতে ডর্নিয়ার বিমান তার সন্ধান পায়। সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে পৌঁছয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর টহলদারি জাহাজ। ট্রলারটিকে থামতে বলা হলে, উল্টো ঘুরে সেটি পাকিস্তানের দিকে পালাতে চেষ্টা করে। প্রায় এক ঘণ্টা ধাওয়া করে ট্রলারটিকে গুলি চালিয়ে থামানো হয়। এর পরেই বিস্ফোরণে উড়ে যায় সেটি।
সন্দেহ করা হয়, প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে ভারতের কোনও শহরে ২৬/১১-র মতো বড়সড় হামলা চালানোর উদ্দেশ্যেই ওই ট্রলারটিতে করে জঙ্গিরা এ দেশে ঢুকে পড়েছিল। পাশাপাশি এমনটাও মনে করা হয় যে, করাচি বন্দর থেকে ভাসা মাছধরার ওই ট্রলারটিতে চোরাচালানকারীরা ছিল। এ দিন পর্রীকর সেই ধারণার কথা কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে অনেক রকম জল্পনা আছে। কিন্তু আমি সে সব জল্পনার ভিতর ঢুকতে চাই না। এই প্রসঙ্গে শুধু একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথা বলতে চাই, ট্রলারটিকে যেখানে পাওয়া গিয়েছে, মাছধরা ট্রলারের জন্য সেটি কোনও স্বাভাবিক রুট নয়।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই এলাকাটি কোনও ভাবেই মাছধরার উপযুক্ত নয়। এমনকী, সেখানে অন্য কোনও ট্রলারও ছিল না। তাই মাছধরার তত্ত্ব খারিজ করেছেন পর্রীকর। শুধু তাই নয়, ওই ট্রলারটিতে যে কোনও চোরাচালানকারী ছিল না, এ দিন সে কথাও বলেন তিনি। তাঁর যুক্তি, “সোনা, মাদক বা অন্য কোনও নিষিদ্ধ বস্তু চোরাচালানের ক্ষেত্রে পাচারকারীরা সব সময় ব্যস্ত রুটকে বেছে নেয়। কেননা, তাতে অন্য ট্রলারের মাঝে লুকিয়ে পড়তে সুবিধা হয়। ধরা পড়ার আশঙ্কাও কম থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি।”
তাঁর প্রশ্ন, যদি মাছধরার ট্রলারই হবে, তবে কেন পাক সেনা ও পাক উপকূল বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়েছিল? কেনই বা বলা হয়েছিল, ‘উধার কি হাওয়া দেখকে কাম করনা’ জাতীয় কথা? যা আড়ি পেতে শুনে ফেলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। এর পরেই পর্রীকর জানান, প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে আকাশপথে ওই ট্রলারটিকে নজরে রাখা হয়েছিল।
তবে কী উদ্দেশ্য ছিল ওই ট্রলারের?
প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “চোরাচালানের কোনও উদ্দেশ্য তো লক্ষ করা যাচ্ছে না। অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু আমরা এখনও নিশ্চিত নই, সেই অন্য কারণটা ঠিক কী!”
মন্তব্য চালু নেই