সাদ্দামকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রকে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন গাদ্দাফি
ইরাকের সাদ্দাম ও লিবিয়ার গাদ্দাফি! গোটা বিশ্বের কাছে এই দুটি নাম খুব পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে শাসন করেছেন নিজেদের দেশকে। এদের দুই জনেই শেষ পরিণতি হয়েছে প্রায় একই। প্রথমে পতন, তারপর মৃত্যু।
এঘটনা আমরা সবাই জানি। কিন্তু যেটা জানতাম না তাহলো, ইরাকের সেনাশাসক সাদ্দাম হোসেনকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রকে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন লিবিয়ার প্রয়াত রাষ্ট্রপ্রধান কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি।
আল-আরাবিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরাকের বিচারক মুনির হাদ্দাদ এ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিনিরা সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের চেষ্টা চালিয়েছিল।’
২০০৬ সালে সাদ্দামকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া ইরাকের স্পেশাল ক্রিমিনাল কোর্টের উচ্চতর বিচারক ছিলেন হাদ্দাদ। ইরাকি রাষ্ট্রপতি জালাল তালাবানি সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করেছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের সংশোধন বা স্থগিত করার কোনো ক্ষমতা তার ছিল না।
অবশ্য ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঈদুল আজহার দিনে কার্যকর হওয়া সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যু নিয়ে বেশ সমালোচনা রয়েছে। বিচারক হাদ্দাদ বলেন, ইরাকের আইনে ঈদের দিনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কোনো বিধান নেই। কিন্তু সাদ্দাম হোসেন জেল থেকে পালাতে পারেন এমন যুক্তি দিয়ে সেটি অনুসরণ করা হয়নি।
জুডিশিয়াল কাউন্সিল অনুমোদিত বিশেষ আদালতে সাদ্দাম হোসেনের বিচারকাজ চলে। হাদ্দাদ জানান, এই বিচারকাজে ৩৫ জন বিচারক অংশ নেন। তারা যখন এই বিচারকাজ করছিলেন, তখন দেশটিতে চরম সংঘাত চলছিল। সে সময়ের অনেক মামলারই বিচার বর্তমান সরকার করছে।
মার্কিন বাহিনীর হাতে ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর আটক হন ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। তিনি নিজ বাড়ির একটি খামারের গর্তে লুকিয়ে ছিলেন। তাকে সেখান থেকে টেনে বের করে আনা হয়। এই মানুষটি সত্যিই ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কিনা তা নিয়ে প্রথম গোয়েন্দা বাহিনীর মনে সন্দেহ দেখা দেয়।
কারণ তারা শুনেছেন সাদ্দাম নিজের মতো অনেক লোককেই সংগ্রহ করে রেখেছেন। কিন্তু, সাদ্দামের ডান হাতে আঁকা পাহাড়ি ট্যাটু, নিচের ঠোঁট একদিকে ঝুলে যাওয়া, আর বাম পায়ে গুলির দাগ দেখে তাকে ঠিকই চিহ্নিত করা যায়।
অন্যদিকে, লিবিয়ার স্বৈরশাসক কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি (১৯৪২-২০১১ খ্রি.) দীর্ঘ ৪২ বছর একক ক্ষমতায় দেশ শাসন করেছেন। ১৯৬৯ সালে এক রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজা ইদরিসের রাজতান্ত্রিক শাসনকে বিদায় জানিয়ে ক্ষমতায় আসেন সেনাবাহিনীর তৎকালীন তরুণ অফিসার ২৭ বছর বয়স্ক সুদর্শন গাদ্দাফি। সেই থেকে তার অপ্রতিহত পথচলা।
২০১১ সালের বিশ্বের তাবত স্বৈরশাসকের মতো তারও পরিণতি হলো মর্মান্তিক ও ভয়াবহ। পাশ্চাত্য- সমর্থিত ন্যাটো বাহিনী এবং লিবিয়ার বিদ্রোহী ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল- এনটিসি গেরিলাদের আট মাসব্যাপী যৌথ আক্রমণে তছনছ হয়ে যায় ‘লৌহমানব’ গাদ্দাফির ৪২ বছরের একচ্ছত্র শাসন। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর নিজ জন্মশহর সির্তে-তে দু’মাস ধরে পাইপের মধ্যে লুকানো থাকা অবস্থায় তিনি বিদ্রোহী সেনাদের হাতে ধরা পড়েন এবং রোষোন্মত্ত বিদ্রোহীদের গুলিতে মারা যান।
মন্তব্য চালু নেই