বিপাকে ট্রাম্প, স্বাধীনতা চায় ক্যালিফোর্নিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রেটিংয়ে অবস্থান করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম এক মাসের ব্যবধানে জনপ্রিয়তায় অতীতের সব প্রেসিডেন্টের চেয়ে নিন্মে অবস্থান করছেন তিনি। নতুন এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের গড় রেটিং বা জনপ্রিয়তা হল শতকরা ৬১ ভাগ।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবস্থান করছেন শতকরা ৪০ ভাগে। অর্থাৎ অন্য প্রেসিডেন্টদের তুলনায় তিনি গড়ে ২১ ভাগ জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে আছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে নেমেছে ক্যালিফোর্নিয়া। স্বাধীন ক্যালিফোর্নিয়ার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করতে সেখানকার একটি গ্রুপ গণস্বাক্ষর অভিযান চালাচ্ছে। খবর দ্য ইনডিপেনডেন্ট ও ওয়াশিংটন পোস্টের।
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেয়ার এক মাস পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা নিয়ে জরিপ চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জরিপ সংস্থা গ্যালাপ। এতে ১ হাজার ৫২৭ জন মার্কিন নাগরিক অংশগ্রহণ করেন। জরিপ অনুযায়ী, মধ্য ফেব্রুয়ারির এ সময়ে ইতিহাসের যে কোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে কম অ্যাপ্র“ভাল রেটিং ট্রাম্পের।
এর আগে ক্ষমতার মেয়াদের প্রথম মাসের শেষদিকে জনপ্রিয়তায় সর্বনিন্মে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তার জনপ্রিয়তা ছিল শতকরা ৫১ ভাগ। তবে জনপ্রিয়তার সর্বনিম্ন রেটিংয়ের একটু উপরে ছিলেন আরেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। এ পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা ছিল শতকরা ৫৫ ভাগ।
ক্ষমতা গ্রহণের সময়ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ছিল সর্বনিন্মে, শতকরা ৪৫ ভাগ। সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুমোদন ছাড়াই তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে হোয়াইট হাউসে প্রথম মাসে জনপ্রিয়তা শুধু তার একারই কমেনি। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম মাসে উল্লেখযোগ্য হারে জনপ্রিয়তা কমে যায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামার।
গ্যালাপ রেকর্ড অনুযায়ী, বিল ক্লিনটনের জনপ্রিয়তা কমে যায় শতকরা ৭ ভাগ। এটিই তখন ছিল সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার ঘটনা। তবে প্রেসিডেন্সির প্রথম মাসে জনপ্রিয়তা শতকরা ৭০ ভাগের ওপরে পেয়েছিলেন দু’জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাদের একজন হলেন জন এফ কেনেডি এবং অন্যজন জিমি কার্টার।
ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমার প্রধান কারণ মুসলিমবিরোধী নির্বাহী আদেশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার ওই আদেশ পরে আদালতে স্থগিত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবিরের ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার যোগাযোগ উল্লেখযোগ্য কারণ। এ ইস্যুতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীন হতে চায় ক্যালিফোর্নিয়া : বিলাসবহুল ভবনের একটি কক্ষে জড়ো হয়েছেন ১৫ জন মানুষ। তারা এক গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। আর তা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাধীন হওয়ার কার্যকর নকশা। গ্রুপের এক সদস্য জিউফ লিউস। তার হাতে একটি পতাকা।
ধূসর রঙের ভালুক আঁকা ক্যালিফোর্নিয়ার ওই পতাকার দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, আমি স্বাধীন ক্যালিফোর্নিয়ার এ পতাকার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলাম। তার পাশে আরেক পোস্টারে লেখা- ‘ক্যালিফোর্নিয়া কোনো অঙ্গরাজ্য নয়, একটি জাতিরাষ্ট্র।’
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাধীনতার দাবিটি জোরালো হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে একটি গ্রুপ ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে একটি আবেদনে স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ করছে। আবেদনটি আলোচনায় নিতে হলে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৭ জন ভোটারের স্বাক্ষর লাগবে।
এ আবেদনটির লক্ষ্য হচ্ছে, ক্যালিফোর্নিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীন করে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে কাজ গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে অঙ্গরাজ্যজুড়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তারা প্রতিবাদ ও সভা আয়োজন করছেন। গোষ্ঠীটির নেতা জানিয়েছেন, তারা এ পর্যন্ত ৫৩টি শাখা খুলেছেন। এসব শাখা নতুন স্বেচ্ছাসেবী সংগ্রহ ও আন্দোলনের কৌশল প্রণয়নের কাজ করছে।
সান ফ্রান্সিসকোর এক একাডেমিক কনসালটেন্ট টিম ভলমার বলেন, আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি, তা একটি নতুন জাতির ভূমিষ্ঠ হওয়ার লক্ষণ। ৫৭ বছর বয়সী টিম আরও বলেন, ‘মুক্ত বিশ্ব যা ত্যাগ করেছে, আমরা এখন তাতে নেতৃত্ব দিতে পারি।’
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া। এর জনসংখ্যা ৪ কোটি। অন্য রাজ্যগুলোর ক্ষতিতে ভর্তুকি দেয় এ রাজ্য। জাতীয় বাণিজ্য নীতিতে বৈষম্যের স্বীকার। অন্য রাজ্যগুলোর পরিবেশ নীতি ও অভিবাসন নীতি থেকে আলাদা।
স্বাধীনতা আন্দোলনের এক শীর্ষনেতা মার্কাস রুইজ ইভান্স বলেন, ক্যালিফোর্নিয়া আমেরিকার থেকে একেবারেই আলাদা। অন্যদের দ্বারা ঘৃণিত, তাদের কাছে আমরা অদ্ভুত। আরও কয়েক বছর আগেই তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। ২০১২ সালে তিনি ৫৪০ পৃষ্ঠার স্বাধীনতার প্রচারপত্র প্রকাশ করেছিলেন।
আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করে তিনি বলেছিলেন, আমি গ্যালিলিও-কোপার্নিকাসের মতো। আমার তত্ত্ব একেবারেই বিপ্লবী, যদিও তা সত্য প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই মানতে চাইবেন না।
প্রাথমিকভাবে ফেসবুকে একটি পেজ খোলার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাধীনতার প্রচারণা। এখন পেজটিতে ৩৯ হাজার মানুষ যুক্ত রয়েছেন। ২০১৯ সালের ৫ মার্চ একটি গণভোট আয়োজনের লক্ষ্যে স্বাক্ষর গ্রহণ হচ্ছে। ওই গণভোটে মার্কিন সংবিধানের একটি ধারা বাতিল করতে জনগণের সম্মতি নেয়া হবে, যাতে বলা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মন্তব্য চালু নেই