ট্রাম্প নিয়ে যুক্তরাজ্যের কঠোর সমালোচনায় রুশনারা-টিউলিপ
যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী প্রকল্প বন্ধ এবং সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের নির্লিপ্ত আচরণের কঠোর সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ রাজনীতিক রুশনারা আলী ও টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার হাউস অব কমন্সে দেওয়া বক্তৃতায় লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের এমপি রুশনারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশগুলোকে বিভক্তিকর ও বিপজ্জনক বলে আখ্যা দেন।
রুশনারা বলেন, এসব ভীতিকর নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের শক্ত অবস্থানের কথা জানাতে হবে।
অন্যদিকে, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের কাছে লেখা এক চিঠিতে ট্রাম্পের নীতির তীব্র সমালোচনা করেন টিউলিপ। তিনি বলেন, থেরেসা মে এসব বিতর্কিত ও অমানবিক নীতির জোরালো প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। লেবারদলীয় কয়েকজন এমপিসহ টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী বরাবর ওই চিঠি লেখেন।
ট্রাম্প ক্ষমতা নিয়েই একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন। তাঁর নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের পুনর্বাসন প্রকল্প অন্তত ১২০ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। সিরিয়ার শরণার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় তাঁর যুক্তরাজ্য সফর বাতিলের দাবি উঠছে। এই দাবিতে যুক্তরাজ্যে চালু হওয়া এক আবেদনে (পিটিশন) চার দিনে ১৭ লাখের বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছে। বিষয়টি নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি সংসদে আলোচনার দিন ধার্য রয়েছে। একই দাবিতে দেশটির সংসদে উত্থাপিত একটি মোশনে ১১০ জন এমপি স্বাক্ষর করেছেন।
গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে বারবার উঠে আসে ট্রাম্পের প্রসঙ্গ। ট্রাম্পের বেপরোয়া নীতির বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট না করায় সমালোচনার শিকার হন প্রধানমন্ত্রী।
রুশনারা বলেন, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বিশ্বে একটি আতঙ্কের বার্তা দিয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে বিষয়টি তাঁর জন্য গভীর উদ্বেগের বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কানাডায় মসজিদে হামলার কথা উল্লেখ করে রুশনারা বলেন, বিভক্তি ও ঘৃণার বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদেরা যদি সাহস নিয়ে না দাঁড়ান, তবে তা ভুল বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ট্রাম্পের বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনের এমপি টিউলিপ গার্ডিয়ানকে বলেন, ট্রাম্পের তুমুল বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে থেরেসা মের দুর্বল সুর যুক্তরাজ্যের সামাজিক সহাবস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলবে।
ট্রাম্পের নীতি যুক্তরাজ্যের মানুষের মধ্যে মুসলিমবিদ্বেষ ও বিভাজন উসকে দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ। কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের নীতির নিন্দা জানিয়ে সহাবস্থান ও সম্প্রীতির বার্তাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য থেরেসা মের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি-অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার মেয়র জন বিগস গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসে ট্রাম্পের কোনো স্থান নেই। ট্রাম্পের বিভক্তির নীতি হিংসা ও ঘৃণা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো ফল বয়ে আনবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে মেয়র জন বিগসের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। তবে চলতি বছরের দ্বিতীয় ভাগে তাঁর সফর অনুষ্ঠিত হবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই