‘রাখাইনে রোহিঙ্গা শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারছে সেনারা’
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গত অক্টোবরে শুরু হওয়া কঠোর অভিযানের মুখে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ২১ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের চেষ্টা করছে মিয়ানমার; যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল। দেশটিতে সীমান্তের নিরাপত্তা চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলায় ৯ পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর পর অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের হাত থেকে রেহােই পাচ্ছে না রোহিঙ্গা শিশুসহ গর্ভবতী নারী ও কিশোরীরাও। ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক টাইম এক প্রতিবেদনে বলছে, নাফ নদী যদি কথা বলতে পারতো, তাহলে প্রথমেই ভয়াবহ গল্পগুলো বলতো।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের মাঝে ছোট্ট পানিপথ রয়েছে। কক্সবাজার সীমান্তের কাছে রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমরা দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রহীন, বন্ধুবিহীন ও উপেক্ষিত একটি জাতি হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠতো যদি নাফ নদী কথা বলতে পারতো।
নভেম্বরের কোনো এক রাতে ২৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী আরাফা ছয় সন্তানকে নিয়ে নদী পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি গর্ভবতী। নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশের কাছে একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তার চারপাশ ঘিরে বসে আছে এক ছেলে ও চার মেয়ে। তারা সুন্দর, বিশ্রামহীন, ভীত অবস্থায় তাদের মায়ের পেছনে লুকিয়ে আছে।
তার দ্বিতীয় সন্তানের ভাগ্যে যা ঘটেছে; তা স্মরণ করলে আজও চমকে উঠেন তিনি। তার বয়স ছিল ৮ বছর। আরাফা বলেন, ২২ নভেম্বর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের গ্রামে হামলা চালায়। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বৌদ্ধ অধ্যুষিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে দীর্ঘসময় ধরে নিপীড়িত, বঞ্চিত, সহিংসতার শিকার।
এর আগে ২০১২ সালে চরম সহিংসতার শিকার হয়েছিল রোহিঙ্গারা। সেই সময় বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা সহিংসতায় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়ে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অথবা সহিংতায় অংশ নিচ্ছেন।
তবে এবারের সহিংসতা আগের সব ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে। আরাফা বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের কঠোর শাস্তি দিচ্ছে। আর এই শাস্তির প্রদানের তাদের অন্যতম হাতিয়ার আগুন।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। তার ঘরে যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তখন ছয় সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে আসেন। কিন্তু ৮ বছর বয়সী এক ছেলেকে তার হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় এক সেনাসদস্য। পরে তাকে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনে নিক্ষেপ করে ওই সেনা।
সেনাসদস্যরা তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। কিন্তু তার মরদেহ খুঁজে পাননি তিনি। আগুনে নিক্ষিপ্ত ছেলের মরদেহ রেখে পালিয়ে এসেছেন অন্য সন্তানদের নিয়ে। শোকাহত আরাফার কান্না থেমে নেই আজও। টাইমকে আরাফা বলেন, ‘আমার অন্য সন্তানদের বাঁচিয়েছি। আমরা বার্মা থেকে পালিয়ে এসেছি। তারা সবকিছু পুড়িয়ে দিচ্ছে। শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারছে।’
বাংলাদেশে আসার আগে সন্তানদেরসহ দুই দিন জঙ্গলে পালিয়েছিলেন এই রোহিঙ্গা নারী। তবে আরাফারাই শুধু একা নন। তাদের মতো আরো ২১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে গণমাধ্যম, মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবি বলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অমানবিক ও রক্তাক্ত অভিযান চালাচ্ছে দেশটির সেনারা।
মন্তব্য চালু নেই