রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া উচিত মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার

গত ৯ অক্টোবর পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার জেরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের মধ্যে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।

রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নিধন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে মিয়ানমার সরকার। এ প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের এগিয়ে আসা উচিত। রোববার মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারের এক নিবন্ধে এমন দাবি তোলা হয়েছে।

নিবন্ধে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রতিক এ উত্তেজনার মধ্যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়েছেন। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তবে সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী গোষ্ঠীর প্রবেশাধিকারে বাধা থাকায় উভয়ের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

ইউএনএইচসিআরের তথ্যানুসারে, এরই মধ্যে সর্বমোট ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২০১৪ সালের সমীক্ষা অনুসারে ৯৪ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণঘাতী সমুদ্রযাত্রা করে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গেছেন। মালয়েশিয়ায় প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ১ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তবে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের বেশ কিছু অনিবন্ধিত শরণার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য গন্তব্য মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের উচিত আরও শরণার্থী গ্রহণে প্রস্তুত থাকা। বিশেষ করে তীব্র সংকটের মধ্যে থাকা নারী ও শিশুর নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান করতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিগত দিনের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘যৌথ পদক্ষেপ’ খুবই প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ওপর এমন নির্যাতনের কষাঘাতকারী জঙ্গি বৌদ্ধদের ঘৃণা করাও এ পদক্ষেপের অংশ হতে পারে। মানবিকতা ও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে কর্তব্যের খাতিরে আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা প্রেরণের জন্য এদেশগুলোকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

সাউথইস্ট এশিয়া হিউম্যানিটারিয়ান কমিটি পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ ত্রাণ সহায়তা প্রদানকারী গোষ্ঠী হিউম্যানিটারিয়ান ফ্লোটিলা ফর রোহিঙ্গা মিশন, ইন্দোনেশিয়ার পিকেপিইউ, এসিটি এবং মালয়েশিয়ার মুসলিম এইডের মতো এনজিও নেটওয়ার্কগুলোকে ত্রাণ ও মেডিকেল সহায়তা নিয়ে সেখানে পাঠানো উচিত। এক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা আরও জরুরি। মূলত রোহিঙ্গা সমস্যা সরাসরি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গাদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্য দূরীকরণে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আসিয়ানকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের আশ্রয় নিয়ে তার নিরসনে চেষ্টা চালাতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই