মুখ্যমন্ত্রী হিসেব ১ টাকা বেতন নিতেন জয়ললিতা
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জয়ললিতা জয়রাম সোমবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
চলচ্চিত্রের নায়িকা থেকে রাজনীতিতে এসে দেশটির রাজনীতির অন্যতম প্রধান নায়িকায় পরিণত হয়েছিলেন।
জয়ললিতা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাজ্য তামিলনাড়ু শাসন করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেতন নিতেন মাত্র ১ টাকা।
সাদামাটা জীবনযাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া জয়ললিতা তামিলনাড়ুবাসীর কাছে ‘আম্মা’ নামে পরিচিত ছিলেন।
জয়ললিতা কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো
মায়ের হাত ধরে চলচ্চিত্রে
জয়ললিতার মা নাট্যদল কর্মী এবং তামিল ছবির অভিনেত্রী ছিলেন। মায়ের হাত ধরে শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন জয়ললিতা। এরপর ১৫ বছর বয়সে ‘ চিন্নাডা গোম্বে’ চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।
সঙ্গীত-নৃত্যে পারদর্শী
জয়ললিতা শুধু অভিনয়েই তার প্রতিভার ঝলক দেখাননি। তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ছাড়াও ভরতনাট্যম, মোহিনীআট্যম, মণিপুরী এবং কত্থক নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন। পিয়ানোর উপরও ভালো দখল ছিল তার।
পুরাতচি থালাইভা
জয়ললিতার আরেকটি নাম ছিল পুরাতচি থালাইভা। তবে নিকট আত্মীয় এবং সহ-অভিনেতারা তাকে ‘আম্মা’ নামে ডাকতেন।
নায়ক-নায়িকা উভয়েই মুখ্যমন্ত্রী
জয়লললিতা ‘আইরাথিল ওরুভান’ চলচ্চিত্রে এম জি রামচন্দ্রণের বিপরীতে অভিনয় করেন।
রামাচন্দ্রন রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরে তার হাত ধরেই জয়ললিতা রাজনীতিতে যোগ দেন।
রামাচন্দ্রনের মৃত্যুর পর একই দল থেকে পাঁচবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন জয়ললিতা।
১২০টি ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র
জয়ললিতা ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি ১৪০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে ১২০টিই ছিল ব্লকবাস্টার হিট।
জয়ললিতা তার সুবর্ণ সময়ে অভিনয় জীবনের শিখরে ছিলেন। তার অভিনীত সব চলচ্চিত্রই ছিল নারী প্রধান। ওই সময় তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পেতেন।
শাড়ির ছেঁড়ায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রতিজ্ঞা
১৯৮৯ সালে বিধানসভায় নির্বাচনে তামিলনাড়ুর প্রথম বিরোধী নারী নেত্রী হিসেবে আবির্ভূত হন জয়ললিতা। ওই সময় বিধানসভার ভেতরে হেনস্থার শিকার হন তিনি। ছেঁড়া শাড়ি এবং এলো চুলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রতিজ্ঞার কথা জানান।
সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী
জয়ললিতার মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীনের প্রতিজ্ঞা পূরণ হতে বেশি সময় লাগেনি। দুই বছরের মাথায় ১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর প্রথম নারী এবং সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি।
ছেলের বিয়ে, রেকর্ড এবং হার
তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে জয়ললিতার জনপ্রিয়তা প্রবাদপ্রতীম। কিন্তু ‘আম্মা’ হিসেবে খ্যাত এই নেত্রীও এক পর্যায়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং এ জন্য নির্বাচনে হারেরও মুখোমুখি হন।
জয়ললিতা পালিত ছেলে সুধাগরনের বিয়েথে ১০ কোটি টাকা খরচ করে দেড় লাখের বেশি অতিথিকে খাওয়ান। এ বিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়।
কিন্তু এই বিলাসবহুল বিয়ে ‘আম্মা’ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দেয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে অর্থবিত্ত করার অভিযোগ ওঠে। যার প্রভাবে ১৯৯৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান তিনি।
মন্তব্য চালু নেই