মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর চলমান রক্তাক্ত অভিযানের কঠোর সমালোচনা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ মিয়ানমারে চলমান রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিধনে সেনা অভিযানের কারণে দেশটিতে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রাখাইন প্রদেশে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। শনিবার মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘রোহিঙ্গা নির্মূল’ বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা নিধনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ অভিযান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।
rohingya
রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের বিরুদ্ধে রোববার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নেতৃত্বে কুয়ালালামপুরে সংহতি মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।

সমাবেশের আগে শনিবার মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অানিফাহ আমান এক বিবৃতিতে সু চি নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রাখাইন প্রদেশের ১২ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযান শিগগিরই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন আমান।

তিনি বলেছেন, ‌‘রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযান বন্ধ করুন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য শিগগিরই এটি বন্ধ করতে হবে’।

এদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, সেখানে মানুষ কষ্টে আছে।
Rohingya
সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে রাখাইন রোহিঙ্গারা মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আঞ্চলিক প্রতিবেশী হওয়ায় মিয়ানমারের পরিস্থিতি মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলছে।

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে মালয়েশিয়ার প্রতিবাদ সমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‌‘এটি মালয়েশিয়ার অবস্থান; এটি কোনো ধর্মীয় ইস্যু নয়, তবে এক ধরনের তাৎক্ষণিক মানবিক উদ্বেগ।’

অন্যদিকে রাখাইনে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা নিধন অভিযানের কারণে ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেদেশে মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ করেছে।

গতকাল শুক্রবার ইন্দোনেশিয়া সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও তীব্র প্রতিবাদের মুখে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি।
rohingya
গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমারের তিনটি চেকপোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় পুলিশ সদস্যসহ ৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরপর রাখাইনে অপারেশন ক্লিয়ারেন্স নামে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।

সেনা অভিযানের মুখে অন্তত ৩০ হাজার রোহিঙ্গা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এদের মধ্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে এলেও দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে মনে করে। রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে হামলার ঘটনাকে দীর্ঘদিনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের একটি ছোট অংশের পাল্টা প্রতিরোধ হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
rohingya
শনিবার মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানিয়েল রাসেল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের সমালোচনা করে বলেছেন, মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা চরমপন্থী জঙ্গিদের উসকে দিতে পারে।

ড্যানিয়েল রাসেল বার্তাসংস্থা এপিকে বলেন, পরিস্থিতি ভুলভাবে পরিচালিত হলে রাখাইন জিহাহিদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে; যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বন্ধুবিহীন জাতি হচ্ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। ২০১২ সালের দেশটিতে অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মুসলিম চরমপন্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ওই সময় বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ও এক লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।

৯ অক্টোবরের পর থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪ শতাধিক মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ। তবে মিয়ানমার সরকার বলছে, অভিযানে ১৭ সেনা সদস্যসহ ৮৬ জন নিহত হয়েছে।

সূত্র : চ্যানেল নিউজ এশিয়া, এপি, আনাদোলু নিউজ অ্যাজেন্সি, দ্য মালয় মেইলঅনলাইন।



মন্তব্য চালু নেই