আমি রাজনীতিতে আসতে চাইনি, আমি চাইনি রাজীব রাজনীতি করুক : সোনিয়া গান্ধী

সোনিয়া গান্ধী, ভারতীয় রাজনীতির ‘মাতা কুন্তী’। চাণক্য, কৌটিল্য কিংবা ভীষ্ম যেই হোন না কেন, মহাভারত এবং রাজনীতির কুরুক্ষেত্রে ‘মাতা কুন্তী’ বোধহয় সোনিয়ায়ই। রাষ্ট্র আছে, রাষ্ট্রের ক্ষমতা আছে, অথচ এসব থেকেই বঞ্চিত তিনি। যে কংগ্রেস একসময় দেশ শাসন করেছে, এখন সেই কংগ্রেস মাত্র ৪৪ (লোকসভা)। ইতিহাসের পাতায় এর থেকে খারাপ ফল কংগ্রেসের এর আগে কখনও হয়নি।

আবার এটাও ঠিক কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারের আধিপত্যে সোনিয়ায় এখনও অপরাজিত ১৫ বছর…। কংগ্রেসের সভানেত্রী পদে একজন ‘অ-ভারতীয়’, এটাও প্রথমবার করে দেখিয়েছেন সোনিয়াই। অবশ্য যার পরিচয়ই শুরু হয় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নব-বধূ হিসেবে তাকে ‘অ-ভারতীয়’ বলাটাও ‘অন্যায়’! ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধু, প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর স্ত্রী, যিনি এমন সব ‘আরোপিত মর্যাদা’ বহন করে এগিয়েছেন, তার কাছে অর্জন করাটাই কেবল বাকি ছিল।

ভারতীয় রাজনীতির পাঠ্যক্রমে হয়ত একটা অধ্যায় লেখা হতে পারত, যেখানে ভারতের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম থাকত সোনিয়া গান্ধীরই। তেমনটা হয়নি। নিজে না বসে, মসনদে বসিয়েছেন ডঃ মনমোহন সিংকে। একবার নয়, পরপর দু’বার। মন্ত্রীত্ব না নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসা একমাত্র সাংসদ সোনিয়াই। এমন নজির ভারতের লোকসভার ইতিহাসে আর আছে?

ভারতীয় কংগ্রেসের মাথা হয়েই থেকেছেন, তবে কখনও মুখ হননি। ভারতীয় রাজনীতি তো বটেই, বিশ্ব দরবারে সোনিয়া একটা ফ্যাক্টর। আর সেই তিনিই কিনা বলছেন, “আমি কখনই রাজনীতিতে আসতে চাইনি। আমি চাইনি আমার স্বামী (রাজীব গান্ধী) কখনও রাজনীতিতে আসুক”। তাহলে কেন রাজনীতির মঞ্চে ব্যাটন ধরতে হল তাকে?

সোনিয়া গান্ধীর সাফ উত্তর, “আমি রাজনীতিতে কোনও দিনই আসতাম না, আসতে হল, কারণ ইন্দিরা গান্ধী…”। সাল ১৯৬৮, ‘পাইলট’ রাজীব গান্ধীর স্ত্রী। তারপরের ইতিহাসটা সবার জানা। ১৯৯১ সালেই রাজীব হত্যাকাণ্ড। রক্ত দেখলেন। দেখলেন নিজের স্বামীকে চিতায় উঠতে। তখনও রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা ছোট। ৬৮ থেকে ৯১, মাত্র ২৩ বছরেই দেখলেন রাজীনীতির চড়াই-উতরাই। ইন্দিরা গান্ধীর ইমার্জ্যান্সি থেকে ইন্দিরা হত্যাকাণ্ড, সরকার থেকে কংগ্রেসের চলে যাওয়া, অটল বিহারী বাজপেয়ির শাসন, তারপর আবার কামব্যাক। ২১ দশকে এসে সোনিয়া গান্ধীই হয়ে উঠলেন কংগ্রেসের সুপ্রিমো।

এক সাক্ষাৎকারে নিজের স্মৃতিচারণায় জীবনের অতীত ঘাঁটলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর তুলনার প্রসঙ্গ আসতেই সোনিয়া গান্ধী যেন স্মৃতি বিভোর। প্রথম কথা, “ওদের কোনও তুলনা হয় না”। তারপর বললেন ,”রাজনীতি অবেচতন মনেই শিখে নিয়েছি।”

ইন্দিরা গান্ধী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উনি আমাকে কখনওই আউট সাইডার মনে করেননি। বরং আমাকে আমার মত করে ভাবার পরিসর দিয়েছেন। উনি যখন প্রধানমন্ত্রী তখন একজন পার্সোনাল সেক্রেটারি এবং সোশ্যাল সেক্রেটারি ছিল তার। আমি বলব আমার রাজনীতির পাঠ্যক্রম শিখতে ‘তিন শাশুড়ি’ মিলে আমাকে সাহায্য করেছেন।” জি নিউজ



মন্তব্য চালু নেই