তাদের মধ্যে কোনো ‘ইসলাম’ ছিল না : আইএসে অনুপ্রবেশকারী ছদ্মবেশী সাংবাদিক
ফ্রান্সে হামলার পরিকল্পনাকারী এক আইএস সমর্থকদের সেলে এক সাংবাদিক ছদ্মবেশে প্রবেশ করেছিলেন। সেখানে তিনি, কতগুলো ‘হতাশ’ ‘আত্মঘাতী’ ও সহজে প্রণোদিত করা যায় এমন কিছু তরুণ পেয়েছেন সেখানে, যাদের মধ্যে কোনো ইসলাম নেই।
সাইদ রামজি ছদ্মনামে ওই সাংবাদিক ‘সোলজার অব আল্লাহ’ নামের একটি পেজের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২০১৫ সালে ছয় মাস তাদের সঙ্গে অবস্থান করেছেন এবং তাদের কর্মকাণ্ড ভিডিও করেছেন লুকোনো ক্যামেরা দিয়ে। তখন সেই জঙ্গিরা ফ্রান্সের একটি নাইটক্লাবে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
জঙ্গি নেটওয়ার্কে ১০ জন সদস্য ছিল যার নেতৃত্বে ছিল ওসামা নামের ২০ বছর বয়সী এক তরুণ। ফরাসি সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়ে সাটানিস্ট দর্শনের অনুসারী হয়। তুর্কি বংশোদ্ভূত ফরাসি মদ্যাসক্ত এই তরুণ এক সময় মৌলবাদী ইসলামের সংস্পর্শে আসে এবং এই জঙ্গি সেলটি গড়ে তুলে।
আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া যাওয়ার পথে আটক হয়ে ৫ মাস কারাগারে কাটিয়ে সেল গড়ে তুলে এর ‘আমির’ হয় ওসামা। জামিনে বের হয়ে এনক্রিপটেড অ্যাপ টেলিগ্রামের মাধ্যমে আইএস সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করে।
রামজির তোলা গোপন ভিডিওতে দেখা যায় ওসামা পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়ার কথা কল্পনা করে। সে বলে, শহীদরা কখনো যন্ত্রণাবোধ করে না। সে সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসেবে একটি সামরিক ঘাটি অথবা সাংবাদিকদের হামলা করা হবে বলে উল্লেখ করবে। ওসামা বলে, আমাদের অবশ্যই একটি সামরিক ঘাটিতে হামলা করা উচিত যখন তারা খেতে লাইনে দাঁড়াবে তখনি গুলি! অথবা সাংবাদিকদের। বিএফএম, আইটেলে টিভি ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। চার্লি হেবদো হামলার মতো, তাদের খুব বেশি নিরাপত্তার আয়োজন নেই। ফরাসিদের হাজারে হাজারে মরা উচিত।
রামজির ধারণ করা কিপে দেখা যায়, ওসামা তাকে বেহেশতের পথে তাকে অনুসরণের আহ্বান জানাচ্ছে, যেটি তার মতে অর্জন সম্ভব একমাত্র আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে। ওসামা বলে, সেখানে আমাদের নারীরা অপেক্ষা করছে, ফেরেশতারা থাকবে আমাদের সেবক। তোমার একটি প্রাসাদ থাকবে, আরো থাকবে একটি সোনা ও রুবি পাথরে মোড়ান উড়ন্ত ঘোড়া।
তবে প্যারিসের ক্লাবে হামলার প্লটটা আসে আবু সুলাইমান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে যে কি না সিরিয়ায় আইএসের কথিত রাজধানী রাকা ঘুরে এসেছে। ওসামার নির্দেশে একটি রেলস্টেশনে গিয়ে সম্পূর্ণ হিজাবে ঢাকা এক নারীর কাছ থেকে সুলাইমানের লিখিত নির্দেশ নিয়ে আসে।
সেই নির্দেশে একটি নাইটক্লাবে হামলার কথা বলা হয়। আমৃত্যু গুলি করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসার পরে আত্মঘাতী বোমা হামলা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। টেলিগ্রাম অ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে বিস্ফোরক ও গাড়িবোমা তৈরির নির্দেশনা পেয়ে গিয়েছিল ওসামা। ওসামা ও তার সেলের সদস্যরা ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিল এবং ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তাদের সবাইকে আটক করা হয়। ছদ্মবেশী সাংবাদিক রামজিকেও সন্দেহের মধ্যে পড়তে হয়। কিন্তু পরে নিজের উদ্দেশ্য পুলিশকে বোঝাতে সক্ষম হলে নিষ্কৃতি পান তিনি।
২৯ বছর বয়সী ওই নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক সাংবাদিক নিজেও মুসলিম। যারা গত নভেম্বরে প্যারিসে হামলা চালিয়ে ১৩০ জনকে হত্যা করেছে সেই প্রজন্মের মুসলিম বলেই দাবি করেন তিনি। উত্তর আফ্রিকার বংশোদ্ভূত এই মুসলিম তরুণ বলেন, আমার লক্ষ্য ছিল ওই জঙ্গিদের মাথায় কি চলছিল সেটা বোঝা। সেখানে আমি যা শিখেছি, সেটা হচ্ছে তাদের মধ্যে কোনো ইসলাম ছিল না অথবা বিশ্বকে আরো ভালো একটি জায়গা পরিণত করার ইচ্ছা ছিল না। তারা ছিল কেবল হতাশ, আত্মঘাতী ও সহজে প্রণোদিত করা যায় এমন কিছু তরুণ। দুঃখের বিষয় যে তারা আইএসের যুগে জন্মগ্রহণ করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এরা ছিল তরুণ যারা কোনো কিছুর খোজ করছিল এবং তারা পেয়েছে আইএসকে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
মন্তব্য চালু নেই