চারদিকেই চেকপোস্ট, তবুও আতঙ্ক কাটেনি গুলশানে

রাজধানীর গুলশানে প্রবেশের চারদিকেই পুলিশি চেকপোস্ট। ভেতরেও তাই। বের হওয়ার রাস্তায়ও একই অবস্থা, যা কিছুদিন আগেও ছিল না। এতো নিরাপত্তার পরও আতঙ্ক কাটছে না কূটনীতিক পাড়াখ্যাত গুলশান ও বনানী এলাকায়।

গুলশান হামলার ৯ দিন পরও সুনসান নীরবতা বলে দেয় সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা খুব প্রয়োজন না হলে বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত তৎপরতাও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রোববার সরেজমিনে গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি রাস্তায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। মাঝখানেও রয়েছে কয়েকটি চেকপোস্ট। ঈদের ছুটি শেষে রাজধানী ফেরত মানুষ যারা গুলশানে বসবাস করেন কিংবা যাদের কর্মস্থল সেখানে তাদের মধ্যেও এক রকম আতঙ্ক বিরাজ করছে। হামলার পর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে বিরাজ করছে পিনপতন নীরবতা।

১ জুলাই রাতে অস্ত্রধারী জঙ্গিরা ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে জিম্মি করে দেশি-বিদেশি অতিথিদের। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে রেস্টুরেন্টটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। তবে জঙ্গিদের হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। হামলায় মারা যান দুই পুলিশ সদস্য। এরপর থেকে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে পুলিশ। চারদিকে পুলিশের টহল, নিরাপত্তা প্রাচীর। গুলশান-১ ও ২ এলাকায় সাঁজোয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

গতকাল (শনিবার) গুলশানের নিকেতন এলাকায় রীতিমতো চলাচল সীমিত করে দিয়েছিল পুলিশ। মাত্র একটি এলাকা খোলা রেখে পুরো এলাকার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মেহরাব চৌধুরী বলছিলেন, ‘চলাফেরায় ভয় পাই। এই বুঝি কোথাও কিছু ঘটে যাবে। কাউকে আর বিশ্বাস পাই না। খুব বেশি জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছি না। সব সময় আতঙ্কে থাকি।’

বিশেষ করে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্ট এলাকার আশপাশের বাসিন্দারা রয়েছেন ভয়ে। কারণ তারা নিজ কানে শুনেছেন বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ও আর্তনাদ। নাকে গন্ধ, চোখে-মুখে আতঙ্ক।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আলী আহসান নেছারী বলেন, শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলেই হবে না। এর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে ও সামষ্টিক প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থান গড়ে তুলতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবেই নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।

গুলশান-২ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে নতুনবাজারের মোড়ে বসানো চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা এএসআই অহিদুল ইসলাম বলেন, যথা সম্ভব প্রত্যেকটি যানবাহন চেক করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। যে যানবাহনের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে, তা ভালো করে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আগাম তথ্য পেলে কোনো কোনো প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল আটকে দেয়া হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এতে ভয়ের কিছু নেই। উপরের নির্দেশে কাজ করছি। যা করা হচ্ছে সবই কিন্তু সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থেই।

পাশেই অপর চেকপোস্টের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কনস্টেবল ইবাদুল ইসলাম বলছিলেন, মানুষের মধ্যে ভীতি লক্ষণীয়। কিন্তু আবারো যাতে হামলা না হয় কিংবা সে ধরনের পরিবেশ তৈরি না হয়, সেজন্য চেকপোস্টে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।

ডিপ্লোম্যাটিক এলাকার উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন জানান, আসলে কি করলে আপনি নিরাপদ ভাববেন তা আপনাকেই জানতে হবে। আমরা কিন্তু সব ধরনের ব্যবস্থাই নিচ্ছি। যারা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করবেন জানাবেন আমরা শতভাগ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।



মন্তব্য চালু নেই