সত্যিই কি ইইউ ছাড়ছে যুক্তরাজ্য?
ঐতিহাসিক গণভোটের পর লাখ টাকার প্রশ্ন হচ্ছে সত্যিই কি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ছে যুক্তরাজ্য। যদিও বৃহস্পতিবারের ওই ভোটে ‘লিভ’ পক্ষ জয়লাভ করেছে। হেরে গেছে ‘রিমেইন’পন্থিরা। ভোটের পর ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ‘বিচ্ছেদ’ প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য তাড়া দিয়েছেন স্বয়ং ইইউ প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন নিয়ে ব্রিটিশদের মধ্যে তেমন তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে ন। অনেকে তো পুনরায় ভোটের দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন। গত দু দিনে ৩০ লাখেরর বেশি মানুষ ওই পটিশনে স্বাক্ষর কেরছে। মোট কথা দেশটিতে এক হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন সাফ বলেই দিয়েছেন, তিনি ইইউ ত্যাগের কোনো কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। এ সংক্রান্ত সকল দায় দায়িত্ব পালন করবেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। এ কারণেই ঐতিহাসিক গণভোটের পর যুক্তরাজ্যে দ্রুত ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এটি আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা তা নিয়েও কেউ কেউ সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। ব্রিটেন কখনোই ইউরোপকে ত্যাগ করবে না-কেউ কেউ আবার এ জাতীয় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন এ ধরনের সম্ভবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তাইতো নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার সময় ক্যামেরন বলেছেন, ‘ব্রিটিশ জনগণের ইচ্ছাটাই একটা নির্দেশিকা যা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।’ ব্রিটেনে দীর্ঘ ৬ দশকের বেশি সময় পর কোনো প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে বিদায় নিচ্ছেন। এর আগে সুয়েজ সঙ্কটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতার কারণে ১৯৫৭ সালে পদত্যাগ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি ইডেন।
কিন্তু কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা আবার ইইউ ত্যাগের জন্য গণভোটকে যথেষ্ট মনে করছেন না। তারা চূড়ান্ত ব্রিক্সিটের জন্য পার্লামেন্টে ভোটাভুটির প্রস্তাব দিয়েছেন। কেননা তাদের মতে এই গণভোটের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইইউ নেতারা এবারই সবচাইতে কঠিন হুমকির মুখে পড়েছেন। যদিও তারা যতটা সম্ভব সহজভাবে ব্রিটেনকে মুক্ত করতে চাইছেন। প্যারিসও যত দ্রুত সম্ভব ব্রিটিশ জনমতের রায় বাস্তবায়িত করার পক্ষে। কিন্তু এ নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয় জার্মানি। জার্মান চ্যান্সেলর এ নিয়ে সবাইকে ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ ইউঙ্কার যুক্তরাজ্যকে দ্রুত বিচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে গত রোববার স্কটল্যান্ডের এক নেতা বলেছেন, তারা ইইউর সঙ্গে থাকার পক্ষে। তাই তারা বৃহস্পতিবারের ওই ব্রেক্সিট ভোটকে ভেটো দেবে। যুক্তরাজ্যের হাউস অফ লর্ডস কর্তৃক প্রণীত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইইউ ত্যাগ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি নিয়ম অনুযায়ী স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসের পার্লামেন্ট পাস হতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে দেশটি খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যাওয়ার মত অবস্থায় পৌঁছে গেছে।
তবে গণভোটের পর ব্রিটেন যে সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে আসবে এ ব্যাপারে অধিকাংশ নেতাই একমত। এর ব্যত্যয় হওয়ার অর্থ হচ্ছে গণতন্ত্রের আঁতুরঘর হিসেবে বিবেচিত ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চপোটাঘাত করা। আর বৃহস্পতিবারের ওই ভোটে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দিয়েছে। ইইউ ছাড়ার পক্ষে ৫২ ভাগ এবং এতে থাকার পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৮ ভাগ।
কিন্তু ইউ’র সঙ্গে যুক্ত থাকার পক্ষের লোকজন যারা রিগ্রেক্সিট বলে পরিচিত, তারা কিন্তু এখনও ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সক্রিয় রয়েছেন। ইউরোপকে তালাক দিলে দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যেসব সমস্যায় পড়তে পারে সে সম্পর্কে তারা অব্যাহতভাবে নসিয়ত দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এসব হুঁশিয়ারী যে শুধু কথার কথা নয় তা কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড়ের পূর্বাভাষ দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন ধরেছে দলগুলোতেও। প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন ক্ষমতা ছাড়ছেন অক্টোবর মাসে। দেশের রাজনীতিতে তিনি এখন শুধুই এক খোঁড়াহাঁস। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিতেও শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খলা। রোববার দলের প্রধান নেতা জেরেমি করবিনের পদত্যাগ দাবি করেছেন তার ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এই দাবি মেনে নেয়া না হলে পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছেন অর্ধেকের বেশি মন্ত্রী। ইতিমধ্যে নয় মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।
এজন্যই লন্ডনের কিংস কলেজের ইউরোপীয়ান পলিটিক্স এন্ড ফরেন অ্যাফেয়ার্স বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ মেনন বলেন,‘বিচিত্র ব্রেক্সিট কেবল ইইউ’র সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ককে নাড়িয়ে দেয়নি। ঝড় তুলেছে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোতেও। এখন কে সরকার গঠন করবে, কে দল চালাবে এবং দেশ কীভাবে চলবে এগুলো নিয়েও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।’
রয়টার্স অবলম্বনে মাহমুদা আক্তার
মন্তব্য চালু নেই