বাংলাদেশকে টার্গেট করে ভারতীয় রেডিও’র মহাপরিকল্পনা
বাংলাদেশের ঘরে ঘরেই চলছে ভারতীয় চ্যানেলের আগ্রাসন। শিশুরা ভারতীয় চ্যানেল দেখতে দেখতে আজ হিন্দীতে কথা বলছে। নারীরা ভারতীয় বাংলা চ্যানেল যেমন জি বাংলা, স্টার জলসা, চ্যানেল আট, ইটিভি বাংলা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যেই বাংলাদেশের শ্রোতাদের টার্গেট করে ভারতের রাষ্ট্রীয় বেতার সংস্থা আকাশবাণীও শুরু করতে যাচ্ছে এক নতুন বেতার সার্ভিস।
এ লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে এক শক্তিশালী ট্রান্সমিটারও বসানো হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়াতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন বাংলাদেশের মানুষদের একাংশের মধ্যে যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা কূটনৈতিক প্রয়াসই হচ্ছে এ রেডিও স্টেশন।
শুনুন শোনান… দুই বাংলার মনের কথা… এই শ্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া বেতার সার্ভিসটিতে যেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে, তেমনই একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে সংবাদ আর বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান। সংবাদ বুলেটিন ছাড়াও বিশ্ব সংবাদ, উপমহাদেশের সংবাদ আর চলতি ঘটনাবলী নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠানও থাকবে বলে জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা ‘প্রসার ভারতী’র প্রধান নির্বাহী জহর সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে এতো সাংস্কৃতিক মিল, অথচ অনেক সময়ই অন্যরা কী করছে, সেটা জানা যায় না। এই চ্যানেলে আমরা ভারতের শিল্পী-বিশ্লেষকদের সঙ্গেই বাংলাদেশের শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদেরও ডাকবো। যাতে একে অন্যকে আরো ভালো করে বোঝা যায়, মতের আদানপ্রদান হয়। বাংলাদেশের মানুষ এই চ্যানেলের শুধু শ্রোতা হিসেবে থাকবেন না, তারা এতে অংশও নেবে।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আকাশবাণী বিশেষ বাংলা অনুষ্ঠান ‘এসবিএস’ শুরু করেছিল। ২০১০ সালে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে মিডিয়াম ওয়েভে বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরুর জন্য পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক ১০০০ কিলোওয়াটের ডিআরএম ট্রান্সমিটার। আকাশবাণীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৈত্রী চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন এফএম কেন্দ্রের মাধ্যমে রিলে করার ব্যাপারেও কথাবার্তা চলছে।
জহর সরকার বলেন, ‘নতুন উদ্যোগ সফল হওয়ার পর পুরো অনুষ্ঠান বাংলাদেশ আর ত্রিপুরাসহ পূর্ব ভারতে শোনা যাবে। মিডিয়াম ওয়েভে ডিজিটাল আর অ্যানালগ প্ল্যাটফর্মে বিরাট এলাকা জুড়ে সম্প্রচারিত হবে তা। ওয়েবসাইট আর মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে থাকা বাংলাভাষীরাই এ অনুষ্ঠান সরাসরি শুনতে পাবেন।’
এদিকে ভারতীয় বেতার-দূরদর্শনের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রযোজক উপেন তরফদার বলেন, ‘দুই দেশেই এমন কিছু অশুভ শক্তি রয়েছে, যারা নিজেদের স্বার্থেই চায় না যে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী-বন্ধন দৃঢ় হোক। এই শক্তিকে পরাস্ত করার জন্যই তো একসময়ে আকাশবাণীর হয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বেতারের মাধ্যমে লড়াইতে নেমেছিলাম। আমার মনে হয় আকাশবাণীর এই নতুন চ্যানেলের মাধ্যমে আদানপ্রদান বাড়বে, ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে, অশুভ শক্তি পরাজিত হবে।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নিয়মিত জনপ্রিয় সংবাদ অনুষ্ঠান প্রযোজনা করতেন।
মন্তব্য চালু নেই