ধান সংগ্রহ যুবলীগ নেতার মাধ্যমে ॥ বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক
কল্যাণ কুমার চন্দ, বরিশাল থেকে : জেলার গৌরনদী উপজেলা খাদ্য গুদামে বোরো ধান সংগ্রহে চরম কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও অতিগোপনে সরকারী দলের কতিপয় স্থানীয় নেতার মাধ্যমে ধান নিয়ে খাদ্য গুদাম ভরে ফেলা হয়েছে।
সূত্রমতে, গৌরনদী খাদ্য গুদামে ৫০ মেট্রিক টন ধান কারসাজির মাধ্যমে প্রবেশ করানোর অভিযোগ উঠেছে। গোডাউনে জায়গা না থাকার অজুহাতে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ বন্ধ রেখেছেন। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারন কৃষকরা।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মে থেকে শুরু হওয়া বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। ইউনিয়ন ভিত্তিক প্রান্তিক চাষিদের তালিকা তৈরী করে কৃষি উকরণ সহায়তা কার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্রধারী কৃষকদের অন্তর্ভূক্ত করার নিয়ম রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিপত্রে। প্রতি কেজি ধান ২৩ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয়ের কথা সরকারের। কিন্তু গৌরনদীতে বোরো ধান সংগ্রহে নানা কারসাজির অভিযোগ ওঠে। কৃষকদের অভিযোগ, নানা অজুহাতে ধান নিচ্ছে না গৌরনদী খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। গৌরনদী উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আগেই খাদ্য গুদামে বোরো ধান সংগ্রহ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বিকল্প পন্থায় গোপনে অবৈধভাবে বোরো সংগ্রহ করছেন তারা।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, তাদের বঞ্চিত করে আগৈলঝাড়া খাদ্য গুদাম থেকে ৫০ মেট্রিক টন বোরো ধান গৌরনদী খাদ্য গুদামে ঢোকানো হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন হাওলাদার এবং গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার খাদ্য কর্মকর্তারা। ওই প্রভাবশালী নেতার কারসাজীতে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করে পরে একই মিলারের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করা হবে বলেও কৃষকেরা উল্লেখ করেন।
এমনকি মানসম্মত ধান না হওয়ার অজুহাতেও কৃষকদের কাছ থেকে ধান নেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে হাট-বাজারে প্রতি মন ধান ৬’শ থেকে ৬৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক মিলন সন্যামাত, সোহেল সরদার, শামচুল হক জানান, কৃষি অফিসের তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে গেলে তারা মানসম্মত না হওয়ার অভিযোগে ধান নেয়নি। অথচ উপযুক্তভাবে ধান উৎপাদন করেই তারা খাদ্য গুদামে ধান নিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারী গুদামে ধান না নেয়ায় এখন তারা উৎপাদন খরচ তুলতে কম দামে বাজারে ধান বিক্রি করছেন।
কারসজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদীর বার্থী এলাকার এলাহী অটো রাইস মিলের মালিক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সী বলেন, বরিশালের ১০ উপজেলার খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ তাদের কেনা ধান চালে রূপান্তরের জন্য তার মিলে দিচ্ছেন। উপজেলা গোডাউনের ধান দিয়ে চাল তৈরি করে পূর্ণরায় গোডাউনে সরবরাহের জন্য তার সাথে চুক্তি হয়েছে। তার মাধ্যমে এক উপজেলার ধান অন্য উপজেলায় যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
গৌরনদী খাদ্য গুদাম পরিদর্শক শেখ আব্দুস সালাম বলেন, তার গোডাউনে যে ধান উঠছে তা রাখার জায়গা নেই। তাই গত ৩/৪ দিন ধরে ধান সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। আগৈলঝাড়া খাদ্য গুদামের পরিদর্শক মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, তার খাদ্য গুদাম থেকে গত দুইদিনে ৫০ মেট্রিক টন ধান চাল করার জন্য গৌরনদীর বার্থী এলাহী অটো রাইস মিলে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই