ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?

ধর্ষন সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বা ধর্মীয় সকল কিছুতেই মারাত্মক ও জঘন্য অপরাধ। সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান থাকলেও ধর্ষন থেমে নেই। সাম্প্রতিক ভারত বেশ আলোচিত হচ্ছে এ কারনে। ধর্ষক এবং ফেসবুক বা সমাজ জীবনে তাদের সমর্থনকারীরা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের স্বল্প পোষাককে ধর্ষনের একটি কারন হিসাবে চিহ্নিত করে। কিন্তু আসলেই কি তাই? আসুন দেখি পরিসংখ্যান কি বলে। ভারতে বিভিন্ন সময়ের গবেষনায় যা উঠে এসেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে স্বল্প পোষাক বা মেয়েদের চলাফেরা কখনো জন্য দায়ী নয়। দায়ী হল ধর্ষক নামক জানোয়ারদের বিকৃত মানসিকতা।

 

ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?

যুগের সাথে পোশাক

যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷

 

ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?

শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?

ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷

 

ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?

আইনের ভয় নেই

২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷

 

ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?

ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম

ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷

 

ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?

নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার

রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷

 

ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?

পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ

২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷

 

ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?

যৌন নিগ্রহ সর্বত্র

ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?

 

এছাড়াও সকল পরিসংখ্যান বলে ছোট পোশাক কখনই ধর্ষনের কারন নয়। ফেসবুকের জনপ্রিয় পুলিশ কর্মকর্তা জনাব মাশরুফ হোসেন গতকাল ও আজ ধর্ষকদের সতর্ক করতে আইনের বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করেছেন তার ফেসবুক পেজে। আওয়ার নিউজের পাঠকদের জন্য সেগুলো তুলে ধরছি

শিরোনাম দেখে চমকে উঠছেন?

আপনার মত আমারও শুরুতে বিশ্বাস হয়নি যে এটা শেয়ার করাটা আসলেই জরুরী।কিন্তু কঠোর বাস্তবতা হচ্ছে হ্যা, অনেকেই জানেন না অথবা না জানাকে অজুহাত বানিয়ে নেন(“আমি আইন জানতাম না” এটা বলে কোর্টে রেহাই পাবেন না নিশ্চিত থাকুন)।একারণেই আজ সাদা বাংলায় এই অতি সেন্সিটিভ বিষয়টি ব্যাখ্যা করছি।

আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে হয়ত সবচেয়ে বেশি প্রাসংগিক ছবির ২ নম্বর পয়েন্টটি, তবে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী নিচের ক্ষেত্রগুলোও রেইপ হিসেবে গন্য হবেঃ

১) কোন নারীর ইচ্ছের বিরূদ্ধে

২) তার সম্মতি ছাড়া

৩) সম্মতি যদি মৃত্যুভয় বা আঘাতের ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয়

৪) ওই মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে (“আমিই তোমার হারিয়ে যাওয়া স্বামী”) নিজের পরিচয় গোপন করে

৫) সম্মতি সহ বা ছাড়া যেটাই হোক না কেন, চোদ্দ বছরের কম বয়সী কোন মেয়ের ক্ষেত্রে।

৩৭৬ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড।এছাড়া স্বামীর ক্ষেত্রে ১৩ বছরের কম বয়েসী স্ত্রীর ইচ্ছার বিরূদ্ধে অপকর্মটি করলে দুই বছরের জেল এবং জরিমানা।

ধর্ষণের ধ এর ধারেকাছেও যাতে আপনি না যান,এজন্যে দন্ডবিধির ১০০ ধারার একটি অংশ উল্লেখ করছিঃ

Aআপনি যদি কাউকে রেইপ করতে যান এবং নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে যদি আপনার ভিকটিম আপনাকে মেরে ফেলে বা আপনার শরীরের খুব “গুরুত্বপূর্ণ কোন অংশ” পারমানেন্টলি ড্যামেজ করে দেয়, আত্মরক্ষার অধিকারবলে(Right to Private Defence) সে আইনের পূর্ণ সুরক্ষা পাবে।

“বিগ স্ট্যান” নামে একটি প্রিজন কমেডির একটি ডায়ালগ আমার খুব পছন্দ হয়েছিলঃ

Rape is NOT an act of sex, it is an act of VIOLENCE.

পুলিশ অফিসার হিসেবে রেইপ বা এর কাছাকাছি কোনকিছুর শিকার হয়েছেন বা হতে গিয়েছিলেন এরকম সবার প্রতি আমার অনুরোধ,

BREAK the goddamn culture of silence.

এই সমাজে দুর্নীতিবাজ পুলিশ আছে, দুষ্ট উকিল আছে, আর ভিকটিমকেই দোষারোপ করা তথাকথিত সমাজের “বিবেক” রা তো আছেই।

তবুও, মনে রাখবেন- রেইপের শিকার যদি হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে দোষ আপনার নয়, দোষ ওই নরপিশাচের। আর ইনিয়ে বিনিয়ে রেপিস্টকে সমর্থন দেয়া সমাজের বিবেকদের পাত্তা দেবেন না, They didn’t save you when you were raped.

সবশেষে, বীরপুংগব সাজতে যাওয়া পটেনশিয়াল রেপিস্টদের ছোট্ট একটু জ্ঞান দিইঃ

Real men don’t rape.They don’t need to.

ধন্যবাদ।

তিনি আজকেও আবার ধর্ষকদের সতর্ক করেছেন বিশেষ আইনী ব্যাখ্যা দিয়ে

Bফেসবুকে প্রচুর পারভার্ট দেখা যায় নিয়মিতই, এদের মধ্যে এক দুইটা রেপিস্ট যে থাকবেনা এই কথা হলফ করে বলা যায়না।পটেনশিয়াল ধর্ষকদের জন্যে আজকের এই ছোট্ট আইনী শিক্ষাঃ

কাউকে রেইপ করতে যাবার সময় আত্ম্ররক্ষার্থে ভিকটিম যদি পাশে পড়ে থাকা স্ক্রু ড্রাইভার আপনার চোখের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়( যাস্ট উদাহরণ দিলাম আরকি) , তাতেও আইন অনুযায়ী সে পূর্ণ সুরক্ষা পাবে।

অলিগলিতে নির্জন স্থানে কাউকে দেখে কুচিন্তা মাথায় আসলে এই চিত্রটা মাথায় রাখুন!



মন্তব্য চালু নেই