নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা: তিল ধারনের ঠাই নেই হাসপাতালে

কল্যাণ কুমার চন্দ, বরিশাল: জনগনের ভোট কারচুপি করে বিজয়ী হতে না হতেই প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গত চারদিনে উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পরাজিত প্রার্থী-সমর্থকসহ সংখ্যালঘু ভোটারদের উপর হামলা চালিয়ে প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ী ভাংচুর ও প্রায় ২ শতাধিক নারী পুরুষ আহত করেছে। এছাড়াও উজিরপুরের সংখ্যালঘু অধ্যুশিত ইউনিয়নগুলোর জনপদে প্রতিদিন ঘটছে বিজয়ী প্রার্থীদের হামলা,ভাংচুর,লুটপাট ও মামলা।

উল্লেখ্য যে, ২২ মার্চ ইউপি নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশের আগেই শুরু হয় বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতা আর ঘর বাড়ী ভাংচুর। প্রতিদিন হামলা,লুটপাট ও সংহিংস ঘটনা ভাইরাসের মতো বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে আহত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির পরে তিল ধারনের ঠাই মিলছেনা। আহত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত ডাক্তার ও সেবিকাদের। এ সকল কারনে ভিতি শঙ্কা আর জীবন বাঁচানোর তাগিদে সংখ্যালঘু পাড়া গুলো হয়ে পরেছে জনমানবশুন্য।

ওইদিন সন্ধ্যায় ভোট গননার সময় ওটরা ইউনিয়নের মশাং গ্রামে হালিম খান ও বাবুল বেপারীর নেতৃত্বে ১০/১২জন সন্ত্রাসী সংখ্যালঘু পাড়ায় হামলা চালিয়ে শ্যামল বালীর ঘর বাড়ী ভাংচুরসহ তার ৭০ উর্ধ্ব বৃদ্ধা চাচী রুপসী বালী,বোন শিখা রায়,মা কাজলী রানীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ওই দিন গভীর রাতে প্রশাসনের সহযোগীতায় তাদেরকে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।

হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ীতে আ’লীগের বিজয়ী চেয়ারম্যান (সাবেক বিএনপি নেতা) ডা: হরেন রায়ের সমর্থকরা প্রতিপক্ষ ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী বিমল করাতী ও তার সমর্থকদের বাড়ী ঘরে হামলা চালায়। বিনা প্রতিদন্ধিতায় নির্বাচিত ইউপি সদস্য নরেন্দ্র নাথ বাড়ৈকে ১ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রেখে তাকে লাঞ্চিত করা হয় এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সমর্থক দিলীপ মন্ডল,সুশীল বড়ালের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বাড়ীঘরে হামলা চালানো হয়েছে বলে বিমল করাতির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

২৩ মার্চ সকাল থেকে জল্লা ইউনিয়নের আ’লীগের বিদ্রোহী পরাজিত প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈসহ তার কর্মী সমর্থকদের দফায় দফায় লাঞ্চিত করে বাড়ী ঘর ভাংচুর ও মামলায় ফাসিয়ে দেয়ার হুমকি অব্যাহত আছে বলে উর্মিলা বাড়ৈর পক্ষ থেকে গনমাধ্যম কর্মিদের জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে ওইদিন সন্ধ্যায় টাকা বাড়ী বাজারে স্বপন বাড়ৈ,খোকন বাড়ৈ,সোনাতন টাকা,বিধান বাড়ৈ,রবি টাকাসহ ১০/১২জনের উপরে সসস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে এবং খোকন বাড়ৈ ও সোনাতন টাকার দোকানঘর ভাংচুর করা হয়েছে,এবং তাদেরকেও বিভিন্ন প্রকার হুমকী দিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে বলেও আহত স্বপন বাড়ৈ অভিযোগ করেছেন।

বড়াকোঠা ইউনিয়নের মালিকান্দা গ্রামে বিজয়ী প্রার্থী জামাল হোসেন বেপারী ও তার সমর্থকরা হামলা চালিয়ে নান্নু বেপারীর সমর্থকদের ৩০টি বাড়ীঘর ভাংচুর করে। এ সময় নান্নুর ভাবী লাভলী বেগম, সমর্থক সোহাগ হাওলাদার, কাছেম বেপারী, মাও: আব্দুল খালেক, সবুজ বেপারীসহ ২০ জন আহত হয়। এ ব্যাপারে নান্নু বেপারী বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০/৬০ জন আসামী করে মামলা দায়ের করে। একই ইউনিয়নের মিঞাবাড়ী সঃ প্রাঃ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টায় সদস্য প্রার্থী ও উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক লিটু হালদারের পিতা প্রফুল্ল হালদারকে মাথা ফাটিয়ে আহত করে তার প্রতিপক্ষ ইকবাল হোসেন, সে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পরেরদিন আহত প্রফুল্লর বাড়ীঘরে নারকীয় তান্ডব চালিয়ে ভাংচুর করে তার সমর্থক মুকুল বিশ্বাস, পুষ্প রানী, সুমতী হালদার, লিটু রায় সহ ১০ জনকে পিটিয়ে আহত করে এবং প্রফুল্লর বাড়ীর সামনে একটি কালী মন্দিরও ভাংচুর করে। এ ঘটনায় আহত প্রফুল্ল হালদার বাদী হয়ে ইকবাল হোসেনসহ ৩০ জনকে আসামী করে উজিরপুর থানায় মামলা দায়ের করে।

অন্যদিকে নির্বাচনের দিন সন্ধ্যা থেকে পরেরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সাতলা ইউনিয়নের পশ্চিম সাতলায় ওলামালীগের সভাপতি সাবেক জামায়ত নেতা মাওলানা রুহুল আমিন সরদারের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী প্রকাশ্য দিবালোকে ইফতেকার ফকিরের বাড়ীসহ ১০/১৫টি বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। তাদের হামলায় ইফতেকারের ৯০ উর্ধ্ব মা ও চাচীসহ ১১জন আহত হয়। গুরুতর আহতদেরকে প্রথমে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেয়ার পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় প্রেরন করা হয়।

এ ঘটনায় ইফতেকার বাদী হয়ে মাও: রুহুল আমিনকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
এ সকল ঘটনা সম্পর্কে উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম পিপিএম জানান, নির্বাচন পরবর্তী বিভিন্ন স্থানে হামলা ও আহতর ঘটনায় ইতিমধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই