কিশোরীর নাম ধর্ষিতা !
নামে অনেক কিছুই আসে-যায়। বিশেষত, এক কিশোরীর নামকে অশালীনভাবে বিকৃত করলে তার পরিণতি কত অপমানজনক হতে পারে, পুলিশ হয়তো তা জানে না। অথবা জেনে-বুঝেই ক্ষমতার জোরে এফআইআরের পাতায় সেই নাম নথিভুক্ত করে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লালবাজারের মুচিপাড়া থানার একটি ঘটনা পুলিশের এমনই এক বিকৃত মানসিকতা সামনে নিয়ে এসেছে।
বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের অশান্তি-সংক্রান্ত একটি ঘটনার অভিযুক্ত হিসেবে সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া এক কিশোরীর নাম এফআইআরে লেখার সময় মুচিপাড়া থানার এক অফিসার লেখেন, ‘ধর্ষিতা চক্রবর্তী’। বাড়িওয়ালাদের পদবী চক্রবর্তী। কিশোরীর বাবার দাবি, এফআইআরের প্রতিলিপি হাতে পেয়ে তিনি থানায় গিয়ে ওই অফিসারকে জানিয়েছিলেন, তার মেয়ের নাম ভুল লেখা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, মেয়ের ঠিক নাম বলার পরে সংশ্লিষ্ট সাব ইনস্পেক্টর অতনু পাণিগ্রাহী তাকে বলেন ‘তোর মেয়েকে নতুন নাম দিলাম।’’
অভিযোগ রয়েছে, ওই অফিসার কিশোরীর বাবাকে আরও বলেন, বাংলা হরফে তার মেয়ের নাম যেভাবে লেখা হয়েছিল সেটা দেখে তিনি ‘ধর্ষিতা’ শব্দের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন। কিশোরীর বাবা গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে রাজ্য মহিলা কমিশনে জানিয়েছেন।
ঘটনার শুরু ২৯ জানুয়ারি। মুচিপাড়ার শ্রদ্ধানন্দ পার্ক সংলগ্ন একটি রাস্তার এক ভাড়াটে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রবর্তী পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। এরা হলেন বাড়ির কর্তা, তাঁর স্ত্রী এবং ওই কিশোরী কন্যা। এফআইআর দায়ের হওয়ার পরে ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে তার প্রতিলিপি চক্রবর্তীরা হাতে পান দিন বিশেক পরে। কিশোরীর বাবার দাবি, সেখানেই তারা প্রথম দেখেন মেয়ের ওই বিকৃত নাম।
২২ ফেব্রুয়ারি মহিলা কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে কিশোরীর বাবা জানান, ‘এফআইআরে সংশ্লিষ্ট এসআই ইচ্ছাকৃতভাবে আমার মেয়ের নাম ‘ধর্ষিতা চক্রবর্তী’ লিখেছেন। আমরা বিষয়টি দেখিয়ে মেয়ের আসল নাম বলার পরে সংশ্লিষ্ট এসআই উদ্ধতভাবে বলেন, বাংলা হরফে নামটি ধর্ষিতা চক্রবর্তী বলে মনে হয়েছিল। তার পরেও নাম সংশোধনে অস্বীকার করে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, যা, তোর মেয়েকে নতুন নাম দিলাম। এখন থেকে তোর মেয়ে এই নামেই পরিচিত হবে।’ এই অভিযোগের ভিত্তিতে মুচিপাড়া থানার ওসির কাছে ঘটনার কারণ জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মহিলা কমিশন।
ওসি প্রদীপ দাস এই নাম বিকৃতির কথা স্বীকার করেছেন। শনিবার টেলিফোন করা হলে তাঁর বক্তব্য, ‘হ্যাঁ, ওটা একটা ‘মিসটেক’ হয়েছে।’’ একটি মেয়ের নাম কখনও ‘ধর্ষিতা’ হতে পারে কি না, সেটা এফআইআর লেখার সময় একবার মনে হল না? তাঁর জবাব, ‘সেটা আপনাকে বলব না।’ ফোন রাখার আগে ওসি আরও জানান, ‘আপনাদের কৈফিয়ৎ দিতে বাধ্য নই। কোনও ব্যাখ্যা দেব না।’
এ দিনই ঘটনাটি আনন্দবাজারের কাছে প্রথম জানেন ডিসি (সেন্ট্রাল) অখিলেশ চতুর্বেদী। পরে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওসির কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, ওটা ভুল হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী নথিতে ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টা আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোন জায়গায় যাচ্ছে আমাদের সমাজ, দুনিয়া— তা ভাবতে পারছি না। পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমার পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠছে। যাঁদের উপর নিরাপত্তার জন্য নির্ভর করি, দেখা যাচ্ছে তাঁদের অনেকে এই কাজের বা দায়িত্বের যোগ্যই নন।’
মন্তব্য চালু নেই