মিসরের রানি ‘দিলেন’ মহাবিপর্যয়ের সতর্কবার্তা!
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রবল ঝুঁকির মুখে আছে বর্তমান পৃথিবী। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ করে পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষার জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। করা হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। মিসরে সাম্প্রতিক এক প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিসরের পুরোনো সাম্রাজ্য ধ্বংস হওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরার ব্যাপক অবদান আছে বলে ধারণা করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
২০১৫ সালের নভেম্বরে মিসরের পুরোনো সাম্রাজ্যের (২৬৪৯-২১৫০ খ্রিস্টপূর্ব) এক রানির সমাধি খুঁজে পেয়েছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের গবেষক মিরোস্লাভ বারতা। দেয়ালচিত্র থেকে জানা গিয়েছিল যে তাঁকে ডাকা হতো ‘রানি মা’ বা ‘কুইন মাদার’ বলে। তাঁর মৃত্যুর ২০০ বছর পরেই ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে পড়েছিল মিসরের পুরোনো সাম্রাজ্য।
মিসরের বিখ্যাত নীল নদের বন্যা কমে গিয়েছিল এবং অঞ্চলটি পড়েছিল ব্যাপক খরার মুখে। মিরোস্লাভ বারতা এই সময়টাকে অভিহিত করেছেন ‘মিসরের পুরোনো সাম্রাজ্যের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে’। মিসরের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের সভ্যতাও পড়েছিল হুমকির মুখে। পুরোনো সাম্রাজ্যের এই রানির সমাধিটি পাওয়া গেছে মিসরের রাজধানী কায়রোর দক্ষিণ-পশ্চিমে, আবুসির অঞ্চল থেকে। সাড়ে চার হাজার বছর আগে মিসর শাসন করা ফারাও নেফেরেফ্রের সমাধির ৬৫০ ফুট নিচে সমাহিত করা হয়েছিল ‘কুইন মাদার’কে।
সমাধিক্ষেত্রে রানির মৃতদেহের সঙ্গে পাওয়া গেছে বেশ কিছু মাটি, কাঠ ও তামার সামগ্রী। এগুলো পর্যালোচনা করলে সেই সময়ের অবস্থা সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। সে সময় নীল নদের বন্যা পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনেছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তাঁরা।
অধ্যাপক মিরোস্লাভ বারতা বলেছেন, ‘পর্যাপ্ত বন্যা না হওয়ার ফলে ফসল উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। কর আদায়ের ক্ষেত্রেও সমস্যার মুখে পড়েছিলেন শাসকরা। আর যথেষ্ট কর না পাওয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করা যায়নি। ফলে পুরো রাষ্ট্রের মতাদর্শ ও ঐক্যবদ্ধতা পড়েছিল হুমকির মুখে।’
প্রাচীন মিসরের এই ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি আধুনিক মানবসমাজের জন্যও একটা সতর্কবার্তা বলে মন্তব্য করেছেন বারতা। তিনি বলেছেন, ‘অতীতের ঘটনা পর্যালোচনার মাধ্যমে আমরা আমাদের বর্তমান সময় সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে পারি। আমরা তাদের থেকে ভিন্ন কিছু না। মানুষ হয়তো মনে করে যে আমাদের সময়টা ভিন্ন ধরনের আর আমরা আলাদা রকমের। কিন্তু আমরা তা নই।’
আমরা কি তবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে? –এমন প্রশ্নে বারতা বলেন, এটা সম্ভব। তবে সমাধিতে যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভিন্নপথও গ্রহণ করা সম্ভব।
মিসরের পুরোনো সাম্রাজ্যের এই রানির সমাধি পর্যালোচনার কাজ শেষ করতে দুই বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। তারপর হয়তো আরো ভালোভাবে জানা যাবে সেই সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে।
মন্তব্য চালু নেই