‘নেতা-পুলিশকে চাঁদা দেই, আমাদের কেউ কিছু করতে পারবে না’

প্রায় দিনের মত শনিবারও অ্যাসাইনমেন্টের উদ্দেশ্যে রাজধানীর ঝিগাতলা থেকে ফার্মগেটের দিকে লেগুনায় চড়ে যাচ্ছি। ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার রোডের মাথায় আসতে লেগুনা থেমে গেল। এক ভদ্রলোক লেগুনা থেকে নেমে দুই এক কথায় হেলপার ও ভদ্রলোকের চিৎকার – চেচাঁমেচি। এরই মধ্যে চালক এসে লোকটিকে কলার ধরে টানা-হেচড়া শুরু করল। ঘটনাটি দেখে আমি লেগুনা থেকে নেমে পরলাম বিষয়টি জানার জন্য।

তারা কি করণে ভদ্রলোকটিকে লাঞ্চিত করছে? জানতে চাইলে, উত্তরে চালক পাল্টা প্রশ্ন করলেন, আপনি লেগুনায় গিয়ে বসেন আপনার এখানে কাম নেই। ভদ্রলোকটির কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাই আমি ঝিগাতলা থেকে ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার রোডের মাথায় নামলাম।এখানে ভাড়া ৫ টাকা আমি ১০ টাকা দিয়েছি, তার পর তারা আমার কাছ থেকে ১৫ টাকা ভাড়া চায়। আমি দিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে লাঞ্চিত করা হয়।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমি লেগুনার হেলপারকে জিজ্ঞেস করি এখানে ৫ টাকা ভাড়া, সে ১০ টাকা দিয়েছে তারপরও কেন তাকে লাঞ্চিত করছেন? উত্তরে হেলপার জানাল, শংকর নামলে পাঁচ টাকা এর পর একহাত ব্যাবধানে যাত্রী নামলেই ১৫ টাকা নেই আমরা। শংকর বাসস্ট্যান্ড থেকে ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার রোডের মাথার দূরত্ব মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাত এর জন্য ১০ টাকা কেন যাত্রীরা বেশী দিবে? এটা আপনাদের বাড়াবাড়ি হচ্ছে না? জবাবে হেলপার বলল, আমরা প্রতিদিন নেতা ও পুলিশকে চাঁদা দেই আমাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। মালিক পক্ষ যে ভাবে বলেছে সেভাবে ভাড়া উঠাব।

লেগুনার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও টনক নড়ে না প্রশাসনের। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক ক্যাডার, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পুলিশ প্রশাসনের মুখ বন্ধ রাখতে লাখ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করছে লেগুনা মালিকরা। চাঁদা আদায়ে প্রতিটি রুটেই রয়েছে তাদের নিজস্ব লোক।

বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে নিবন্ধিত লেগুনার সংখ্যা প্রায় ৪ হাজারের বেশি। নগরীর মোহাম্মদপুর-মহাখালী-গুলশান-ফার্মগেট-মিরপুর, নিউমার্কেট-ফার্মগেট-ট্যানারি মোড়, গুলিস্তান-খিলগাঁও-লালবাগ-সদরঘাট-যাত্রবাড়ীসহ আরও বেশ কয়েকটি রুটে এগুলো চলাচল করছে। সরেজমিনে প্রতিটি রুটেই দেখা গেছে কিছু কমন চিত্র।

বেশিরভাগ লেগুনার ড্রাইভারই ১৪-১৫ বছরের কিশোর। আর হেলপার হিসেবে কাজ করছে ৭-৮ বছরের শিশু। অল্পবয়সী এই গাড়িচালকদের নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ। নেই লাইসেন্স। ‘ওস্তাদের’ কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে হেলপার থেকেই তারা ড্রাইভার হয়েছেন। আশপাশের গাড়ি-ঘোড়া ট্রাফিক আইন কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করে তারা। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করায় খানিক পরপরই দেখা যায় কড়া ব্রেক। ফের জোরে টান। এতে প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা থেকে শুরু করে হাতাহাতি-মারামারি ঘটনাও ঘটে।

প্রতিটি লেগুনা ১০ জন যাত্রীর জন্য উপযুক্ত হলেও বসানো হয় ১২ জন। পেছনে ঝুলতে থাকে আরও চার-পাঁচজন। চালকের পাশে অতিরিক্ত দু’জন। এছাড়ও বেশিরভাগ লেগুনাই ফিটনেসহীন।বিডি২৪লাইভ



মন্তব্য চালু নেই