ছেলে হয়ে জন্মেছিলেন বারাক ওবামার স্ত্রী? (ভিডিও)
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা যখন শপথ নিলেন, তখনই ইতিহাস রচিত হলো। ওবামাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ওবামার সাথে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন তার স্ত্রী মিশেল ওবামাও। তিনিও যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথ্ম কৃষ্ণাঙ্গ ফার্স্ট লেডি। ফার্স্ট লেডি হওয়ার পর মিশেল ওবামার ফ্যাশন, হেয়ার স্টাইল খুব আলোচিত হলেও আড়ালে আবডালে তার শারীরীক গঠন ও পুরুষসুলভ অঙ্গভঙ্গি নিয়েও আলোচনা-বিতর্ক শুরু হয়েছিল।
পরে বিভিন্ন সময় মিশেল ওবামার তোলা বেশ কিছু ছবি, হাঁটা চলার ধরন এমনকি বারাক ওবামার এক মন্তব্য এ বিতর্কের পালে আরো হাওয়া দেয়।
২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর ভার্জিনিয়ায় সামরিক বাহিনীর এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় তার স্ত্রীকে ‘মাইকেল’ বলে উল্লেখ করেন ওবামা। ওবামর মন্তব্য ছিল হুবহু এরকম, ‘দেশের জন্য আপনারা (সামরিক বাহিনীর অফিসাররা) যে অসাধারণ কাজ করছেন, মাইকেল এবং আমি সবসময় কৃতজ্ঞচিত্তে তা স্মরণ করি’। সাধারণত ‘মিশেল’ নামটি হচ্ছে ‘মাইকেল’র স্ত্রীবাচক নাম। অনেকে ভেবে থাকতে পারেন ওবামা মনে হয় মিশেল বলতে গিয়ে ভুলে মাইকেল বলে থাকবেন। কিন্তু ওবামার বক্তব্যের পর হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে তার পুরো বক্তব্যের যে লিখিত রূপ প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানে স্পষ্টত লেখা ছিল, ‘দেশের জন্য আপনারা (সামরিক বাহিনীর অফিসাররা) যে অসাধারণ কাজ করছেন, মাইকেল এবং আমি সবসময় কৃতজ্ঞচিত্তে তা স্মরণ করি।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এডমিরাল মুলেন নামে একজন সেনা কর্মকর্তার প্রথম নাম হচ্ছে মাইকেল। কিন্তু বক্তৃতার প্রথম থেকেই মুলেন কে ‘মাইক’ বলে সম্মোধন করছিলেন ওবামা, ‘মাইকেল’ বলে নয়।
অনেকে তাই দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে বলেছেন, পারিবারিক অভ্যাসবশতই বারাক ওবামা মিশেলকে ‘মাইকেল’ সম্মোধন করে ফেলেছেন।
ওবামার সে মন্তব্যের ভিডিও
https://youtu.be/8cgk732vfGQ
মিশেলের জন্ম নাম মাইকেল?
জনসম্মুখে মিশেলকে মাইকেল বলার অনেক আগেই মিশেলের আসল নাম নিয়ে অনেকে লেখালেখি করেছেন। ২০১১ সালের জুনে (ওবামার মন্তব্যের দুই সাম আগে) ব্লগার ম্যাথিউ বি গ্লোসার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ একজনের বরাতে নিজের ব্লগে মিশেলকে মাইকেল বলে উল্লেখ করেছিলেন। এ ‘বিশ্বাসযোগ্য’ ব্যাক্তিটি হচ্ছেন হোয়াইট হাউজের একজন সাবেক স্টাফ এবং অরও নির্দিষ্ট করে বললে, মিশেল ওবামার সাবেক ব্যাক্তিগত সহকারী। হোয়াইট হাউজ থেকে অবসরের পর তিনি নিজ উদ্যোগেই গ্লোসারের সাথে এ ‘ভয়ঙ্কর’ সত্য উন্মোচন করতে দেখা করেছিলেন।
এ ব্যাক্তি গ্লসারকে বলেন, মিশেল ওবামার পুরো নাম হচ্ছে মিশেল লা ভন রবিনসন ওবামা। ১৯৬৪ সালের ১৭ জানুয়ারী ইলিনয় রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফ্রেজার রবিনসন ছিলেন ইলিনয়ে কুখ্যাত কোকেন ব্যবসায়ী এবং মিশেল (মাইকেল) তার দ্বিতীয় সন্তান। ১৯৮২ সালে তিনি (মাইকেল) ছিল হাইস্কুলের খুবই জনপ্রিয় একজন অ্যাথলেট এমনকি এ জন্য বৃত্তিও পেয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই স্কুল ছেড়ে দেন মাইকেল। তার সহপাঠিরা সেসময় প্রায়ই শুনতেন, মাইকেল তার শরীরে ‘নারীর অস্তিত্ব’ আবিস্কার করেছে। ১৯৮৩ সালের ১৩ জানুয়ারি জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে তিনি লিঙ্গ পুননির্ধারণের অপারেশন করান। পরে সমালোচনা এড়াতে ওরেগন ছেড়ে ‘মিশেল রবিনসন’ নতুন নামে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। লিঙ্গান্তরের পরে ওবামাকে বিয়ে করেন এবং পরে দু’টি সন্তান দত্তক নেন।
ওবামা কি সমকামী?
ওবামা নিজে সমকামী কিনা এটি নিয়েও বিতর্ক আছে। শিকাগোর সমকামীদের বাথহাউজ “ম্যান’স কান্ট্রির”র আজীবন সদস্যপদ আছে ওবামার। আবার কলেজে থাকাকলীন ওবামার মোহাম্মদ হাসান চান্ডো নামে একজন পাকিস্তানি ছেলেবন্ধুও ছিল। তার সাথে হাতে ধরা একটি ছবি আছে ইন্টারনেটে।
ওবামার কথিত সমকামি বন্ধু
মিশেলের বিতর্কিত ছবি
মিশেল একসময় পুরুষ ছিলেন কিনা, এরকম বিতর্ক সবচেয়ে বেশি উস্কে দিয়েছে বিভিন্ন সময় তার বেশ কিছু ছবি। এসব ছবি যে ফটোশপ করা কোনো ছবি নয়, তার যথেষ্ঠ প্রমান আছে। ওবামার প্রেসিডেন্সিয়াল প্রচারণার সময়কার অনেক ভিডিও, ফার্স্ট লেডি হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভিডিও এমনকি জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক অ্যালেন ডিজেনারেসের এক টিভি শোতেও মিশেলের উরুসন্ধিস্থলে ‘পুরুষলিঙ্গ’ সদৃশ কিছু একটার উপস্থিতি দেখা গেছে।
২০০৮ সালের ২৫ আগষ্ট বারাক ওবমাার পক্ষে এক নির্বাচনী প্রচারণার সময় মিশেল ওবামার এরকম একটি ভিডিও তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়।
২০১৪ সালের ৩ জুলাইয়ে নিউইয়র্কে এক সমকামী যুগলের বিয়েতে কমেডিয়ান জন রিভারকে একজন টিভি সাংবাদিক অফ দ্য ক্যামেরায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কখনো কোনো সমকামী বা নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা? জবাবে খুবই সিরিয়াসভাবে রিভার উত্তর দেন, আমাদের ইতিমধ্যেই একজন সমকামী প্রেসিডেন্ট আছে। আমরা সবাই জানি মিশেল ওবামা ট্রান্সজেন্ডার।’ জন রিভাবের মন্তব্য ধরে তখন অনেক প্রথম সারির মিডিয়াও এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছিল।
https://youtu.be/cvR9Knn-DQ0
এ অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকরা আবারও প্রশ্ন করলে একই জবাব দেন জন রিভার।
https://youtu.be/Et38_Ufv-Jw
২০১৫ সালের ১৩ মার্চ বিখ্যাত টিভি উপস্থাপক অ্যালেন ডিজেনারেস তার পরবর্তী শো’র একটি ক্লিপ প্রকাশ করেন যেখানে দেখা যাচ্ছে তার সেদিনের অতিথি মিশেল ওবামার সাথে একটি গানের সাথে নাচছেন তিনি। মিশেল একটি সাদা প্যান্টের সাথে কালো টপস এবং কোমরের উপর পর্যন্ত জ্যাকেট পরা ছিলেন। নাচের সময় মিশেলের সাদা প্যান্টের নিচে ’পুরুষলিঙ্গ’ সদৃশ কোনো কিছুর উপস্থিতি স্পষ্টতই দৃশ্যমান ছিল।
অ্যালেন ডিজেনারেসের শোতে মিশেল। নিচের ভিডিও থেকে নেয়া ছবি
নিচের ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, মিশেল ওবামা একজন পুরুষ এবং এর স্বপক্ষে নানা রকম প্রমাণ দেয়া হয়েছে।
https://youtu.be/S2EKzoh6AAo
সমালোচকদের দাবি, মিশেলের পেট ও কোমর নারীসুলভ নয়
তবে মিশেলকে ‘পুরুষ প্রমানের’ সমালোচনাও করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, বর্ণবাদী এ জাতি একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ও তার কৃষ্ণাঙ্গ স্ত্রীকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাই সংকীর্ণ মস্তিস্কের মানুষজন এসব অপপ্রচারে লিপ্ত।
মিশেলের পক্ষে আরেকপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, মিশেল যদি ট্রান্সজেন্ডার হয়, তাহলে তিনি সন্তান জন্ম দিতে পারতেন না। কিন্তু তার দুটি কন্যাসন্তান আছে। একজন ট্রান্সজেন্ডার নারীর জন্য সন্তান জন্ম দেয়াটা খুবই কঠিন ও আজকের দিন পর্যন্ত প্রায় অবিশ্বাস্য।
তবে মিশেল ট্রান্সজেন্ডার হন বা না হন, সেটি আদতে কোনো সমস্যাই নয়। ট্রান্সজেন্ডার হয়েছেন বলে তো আর তাকে হোয়াইট হাউজ থেকে বের করে দেয়া যাবে না। তাই নিন্দুকের সমালোচনাকে এক পাশে রেখে মিশেলকে জন্মদিনের উষ্ণ শুভেচ্ছা। আজ (১৮ জানুয়ারি’১৬) যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান এ ফার্স্ট লেডির জন্মদিন।
মন্তব্য চালু নেই