সফল ভবিষ্যদ্বাণী নস্ত্রাদামুসের
ভবিষ্যত জানা নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তাদের কাছে নস্ত্রাদামুস এক পরিচিত নাম। ১৫০৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফ্রান্সের বিখ্যাত সেন্ট রেমি দি প্রদেশে জন্মানো নস্ত্রাদামুস একাধারে ছিলেন ভবিষ্যদ্বক্তা, জ্যোতিষী, লেখক ও ওষুধ প্রস্তুতকারক। পিতা জম দে নস্ত্রাদামুসের নাম জানা গেলেও তার শৈশব সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। মাত্র ১৫ বছর বয়সে আভিগনন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন তিনি, যদিও বছর খানেক অধ্যয়নের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ হয়ে যায় তার জন্য। এরপর তিনি টানা আট বছর চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সময় থেকেই ভিন্নমত পোষণের জন্য কিছুটা বিতর্কিতও ছিলেন তিনি। কিন্তু তার শুভাকাঙ্ক্ষির সংখ্যার কম ছিল না। তৎকালীন রেনেসাঁ পণ্ডিত জুল সিজার স্ক্যালিগারের আমন্ত্রণে তিনি এজেনেও গিয়েছিলেন। ভবিষ্যত পৃথিবীতে কি ঘটতে যাচ্ছে এরকম ভবিষ্যদ্বাণীর জন্যই মূলত তিনি বিখ্যাত। রাজা দ্বিতীয় হেনরির মৃত্যু, অ্যাডলফ হিটলারের পরিণতি, ৯/১১ এর ঘটনাসহ নানান বিষয়ে তার ভবিষ্যদ্বাণী প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী বেড়েছে নস্ত্রাদামুসের প্রতি আকর্ষণ। আগামী কয়েক শতাব্দীর ভবিষ্যদ্বাণী তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। প্রতিটি ভবিষ্যদ্বাণী ৪ লাইনের কবিতায় রচিত। চলতি শতাব্দী নিয়ে তার করা ভবিষ্যদ্বাণীর কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
খ্রিষ্টান ধর্ম বিদ্বেষ
মানব প্রজনন সংখ্যা বাড়বে ও নিয়মতান্ত্রিক দর্শণ শাস্ত্র যা মার্ক্স এবং এ্যাঙ্গেলসের হাত ধরে বিকশিত হয়েছে তার ফলে খ্রিষ্টান ধর্ম বিরোধী বিদ্বেষ বাড়বে। অতীতে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে দেশ পরিচালনা করার কারণে রাশিয়া এবং চীন কিছুটা দোদুল্যমান অবস্থায় থাকবে। গোটা বিশ্ব দখলের আগে একদল খ্রিষ্টধর্ম বিরোধী শক্তি এশিয়ার বৃহদাংশ দখলের চেষ্টা চালাবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের দর্শন প্রচারিত হবে।
যুদ্ধাবস্থা
খ্রিষ্টানদের ধ্বংস করার মাধ্যমে একদল বিরোধী শক্তি খ্রিস্টানদের অঞ্চলকে দূষিত করবে এবং সে নিজেও ইসলাম ধর্ম থেকে বিচ্যুত হবে। জীবনধারা এবং ধর্মের ছদ্মবেশে তারা নিজেদের এজেন্ডা পূরণ করবে। হিটলার এবং তার কৌশল হবে তাদের পাঠের বিষয় এবং হিটলারের ভুলগুলো উতরে যাবে তারা। সাধারণ মানুষ যেসব বই এবং পদার্থ সচরাচর পাঠ বা জানার জন্য পায় না, তারা সেগুলো পাবে এবং কাজে লাগাবে।
বিশ্ব নিয়ন্ত্রনের খায়েশ
খ্রিস্ট বিরোধীরা ক্ষমতায় আসার আগে অন্যান্য নেতারা তার প্রতি অনুগত হবে এবং ক্ষমতা কাঠামোকে নিয়ন্ত্রন করবে। বাস্তবে খ্রিস্ট বিরোধীরা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ওই নেতাদের স্রেফ পাথরের মতো ব্যবহার করবে। এই সময়ে তারা বিশ্বাসঘাতকের ভূমিকায় আবতীর্ণ হবে এবং দ্বিতীয় পোপ থেকে সর্বশেষ পোপ পর্যন্ত গুপ্তচরবৃত্তির শিকার হবে।
শেষ পোপ নির্বাচন নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা
রোমান সাম্রাজ্যের এক প্রাচীন সমাধি সৌধ আবিষ্কারের কিছুদিন পরেই সর্বশেষ পোপ নির্বাচিত হবে। ওই সমাধিস্ত ব্যক্তি ছিলেন একজন দার্শনিক এবং তার মতাদর্শে পশ্চিমা চিন্তকরা প্রভাবিত ছিল। সম্ভবত সর্বশেষ পোপ হবে ফ্রান্সের এবং তার চোখের রং হবে নীল। তাকে ঘিরে অনেক রহস্যের আনাগোনা হবে। এই পোপের কিছু শারিরীক প্রতিবন্ধকতা থাকবে।
অপেক্ষমান মহাপ্লাবন
মানবসৃষ্ট এবং প্রকৃতিসৃষ্ট কারণে দুর্যোগ হবে। সমুদ্র এবং আকাশ থেকে আসা শক্তির কারণে ভূ-ভাগের পরিবর্তন আসতে পারে। এটাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলা হবে কারণ একে প্রতিহত করার মতো কোনো শক্তি থাকবে না মানুষের হাতে। কেউই এই দুর্যোগের কোনো কারণ বের করতে পারবে না। তাই সর্বশেষে এই ঘটনাকে ‘প্রকৃতিসৃষ্ট’ বলে অভিহিত করা হবে।
তুরস্কের খ্রিষ্টানবিরোধী আক্রমন
খ্রিষ্টান ধর্ম বিরোধীদের সময়ে বেশ কিছু ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা ঘটবে এবং ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। রাজনীতির মাঠের পুতুলেরা অনেক দেশ, সরকার এবং বিশ্বের মূল বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রন করবে। তারা একত্রিত হবে কিন্তু চালাকি করে ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকবে। দৃশ্যত তারা খুব ছোটো কোনো পদ দখল করে থাকবে, যেমন উপদেষ্টা অথবা সচিব শ্রেণির। কিন্তু ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি এই পদগুলোই নিয়ন্ত্রন করবে।
ইউরোপে আক্রমন
খ্রিষ্টান ধর্ম বিরোধীরা সফলভাবেই ইউরোপের অধিকাংশ জায়গা দখল করে নেবে। খ্রিস্টান বিরোধীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারক এবং ব্যাংকাররা থাকবে না। তারা অন্যদিকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। ফ্রান্সের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেই নতুন কিছুর সূচনা হবে।
খ্রিষ্টান বিদ্বেষীদের দ্বারা চক্রান্ত নস্যাত
কোনোভাবে খ্রিষ্টান বিদ্বেষী শক্তি বিশ্বের সাত নেতাদের দ্বারা সংঘঠিত ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দেবে। শত্রুদের মাঝে দোদুল্যমানতা আর ঝগড়া বাধিয়ে দেয়ার জন্য একই কৌশল অবলম্বন করবে তারা। একই কৌশলে তারা রাষ্ট্রকে দুর্বল ও সম্পদ লুট করে নেবে। অমন অবস্থায় তাদের সামনে ইউরোপীয় বাহিনীকে অর্থায়নকারী সকলেই শত্রু বলে বিবেচিত হবে।
এশিয়ায় রাশিয়ার বিজয়
রাশিয়াকে ধোকা দেয়ার জন্য সে(খ্রিষ্টধর্ম বিদ্বেষী) কৌশল অবলম্বন করবে। কিন্তু রাশিয়াকে সেই কৌশলে আটকাতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্য দখলের পর তারা রাশিয়ার দিকে আগাতে চাইলে তা হবে না। চীনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য তারা প্রচলিত কৌশল না খাটালেও ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করবে। বৃহত্তর এশিয়ার শক্তি নিয়ে তারা পরবর্তীতে রাশিয়ার দিকে আগাবে।
একজন বিশ্বনেতার মৃত্যু
মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক নেতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। প্রায় পাঁচ শতাধিক দিন ধরে ওই অস্থিতিশীল অবস্থা চলবে। শতাধিক মানুষ বিদ্রোহ করবে এবং এতটাই বিস্তৃত হবে সেই বিদ্রোহ যে গোটা বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নেবে।
মন্তব্য চালু নেই