গরু খাওয়ায় মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা!

ভারতে গরুর মাংস খাওয়ার গুজবকে কেন্দ্র করে প্রাণ হারিয়েছেন পঞ্চাশ বছরের এক মুসলিম ব্যক্তি। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে একই গ্রামের ধর্মান্ধ হিন্দু প্রতিবেশীরা। সোমবার রাতে উত্তর প্রদেশের দাদরি গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
গ্রামের এক মুসলিম পরিবার গরুর মাংস খেয়েছে এই গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী মোহাম্মদ আখলাকের বাড়ি ঘেরাও করে। তারা ওই বাড়িতে প্রবেশ করে প্রথমে সেখানে ভাঙচুর চালায়। এরপর আখলাক এবং তার ২২ বছরের ছেলেকে বাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে বের করে আনে বিক্ষুব্ধ জনতা।তারা তাদের রাস্তায় ফেলে ইট দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে মারা যান আখলাক। পরে পুলিশ এসে তার আহত ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে জানা গেছে।
দাদরি গ্রামের লোকজন নিহত আখলাকের স্ত্রীসহ বাড়ির মেয়েদের ওপরও হাত তুলেছিল। আখলাকের স্ত্রী বলেছেন,‘ওরা আমার স্বামীল মাথা থেতলে দিয়েছিল। মাথা দিয়ে সমানে রক্ত পড়ছিল। তারা আমাদের ওপরও হাত তুলেছিল।’
এনডিটিভি প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ আসার পরও আখলাক ও তার ছেলেকে ছাড়েনি গ্রামবাসী। পুলিশের সামনেই তারা বাপবেটাকে পিটিয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে আখলাকের মেয়ে দাবি করেছে, এটি পুরোটাই ছিল গুজব। গুজব শুনেই গ্রামের লোকজন তার নিরীহ বাবাকে হত্যা করেছে। সে জানায়, ঘটনার দিন তাদের বাড়িতে গরুর মাংস নয়,খাসি রান্না করা হয়েছিল। পরে পুলিশ তাদের ফ্রিজ থেকে মাংস জব্দ করে পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়েছে।
এদিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা এস কিরণ বলেছেন,‘গরুর মাংস খাওয়ায় গ্রামের লোকজন আখলাক ও তার ছেলেকে পিটিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছি। বাকিদেরকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি।’
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ওই গ্রামে বাস করে আসছে এই মুসলিম পরিবারটি। তাদের কারো সঙ্গে কোনো শক্রতা নেই বলেও দাবি করেছে আখলাকের স্ত্রী।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে ভারতের মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ ও কাশ্মীরসহ বেশ কিছু রাজ্যে আইন করে গোমাংস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চরমপন্থি হিন্দু সংগঠনগুলো গোটা দেশেই গরুর মাংস নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। ধর্মীয় কারণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গরুর মাংস না খেলেও ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম ও খিস্টানদের কাছে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
































মন্তব্য চালু নেই