মাথার খুলি ছাড়াই বেঁচে আছে শিশুটি!
সত্যি অলৌকিক বলতে হয়, মাথার খুলি এবং মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশ ছাড়াই জন্ম নেয়া এই শিশুটি সর্বোচ্চ কয়েকঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে- চিকিৎসকদের এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিব্যি এক বছর ধরে বেঁচে আছে জ্যাকসন। সুস্থভাবেই বেঁচে আছে শিশুটি।
ফ্লোরিডার বাসিন্দা ব্রিটনি এবং ব্যান্ডন দম্পতির সন্তান জ্যাকসন। এই দম্পতি জানিয়েছেন, তাদের সন্তান বিরল মস্তিষ্ক ব্যাধি মাইক্রোহাইড্রেনসিপালাই এর শিকার।
জ্যাকসনের মা-বাবা যখন জানতে পারে যে তাদের গর্ভের শিশুটি এই দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত, তখন তারা দিশাহারা হয়ে পড়ে। তবে শুরু থেকেই গর্ভপাত না করানোর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন এই দম্পতি। চিকিৎসকেরা তাদের কোনো আশার কথা শোনাতে পারেনি। গত মাসে ওই শিশুটি তার এক বছর পূর্তি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এই রোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে চার হাজার ৮৫৯ শিশু। এদের বেশিরভাগই জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। তবে জ্যাকসন এখনো কিভাবে সুস্থভাবে বেঁচে রয়েছে, এটি চিকিৎসকদের কাছেও বিস্ময়।
জ্যাকসনকে সহায়তায় গত বছরে ‘গো ফান্ড মি’ নামে একটি পেজ খোলা হয়। প্রায় এক হাজার ১৮১ জনের সহায়তায় ৫৪ হাজার ডলারের তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
ব্রান্ডন বলেন, ১৭ সপ্তাহ পরে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারি, ব্রিটনির গর্ভের শিশুটি পুত্র। কিন্তু শিশুটির কোনো সমস্যা রয়েছে এটি বুঝতে পেরেছিলাম আল্ট্রাসাউন্ডের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের অভিব্যক্তি দেখে। তবে সেদিন চিকিৎসকেরা আমাদের কিছুই বলেননি। পরের দিন গর্ভের শিশুর এমআরআই করে তবেই আমাদের ওর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়।
এরপর কয়েক সপ্তাহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে পরামর্শের জন্য ছুটেছেন এই দম্পতি। কিন্তু তারা শুরু থেকেই গর্ভপাতের বিরোধী ছিলেন। অবশেষে ২৩ সপ্তাহে চিকিৎসকের কাছে গেছে তাদের গর্ভপাতের পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু তারা শিশুটিকে জন্ম দিতে আগ্রহী ছিলেন। যদি শিশুটি বেঁচে যায়। বাবা-মার আশাকে সফল করে দিয়ে এক বছর ধরে সুস্থভাবে বেঁচে আছে ছোট্ট জ্যাকসন।
২৭ বছর বয়সী জ্যাকসনের মা বলেন, ‘আমি সত্যিই ভেঙ্গে পড়েছিলাম। এটি ছিল হৃদয় বিদারক খবর। তবে এখন যখন দেখি জ্যাকসন বেঁচে রয়েছে, এর চেয়ে বেশি আনন্দের আর কিছু হয় না। গত বছরের ২৭ আগস্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চার পাউন্ড ওজনের জ্যাকসনে জন্ম দিয়েছিলাম।’
জন্মের পর তিন সপ্তাহ ফ্লোরিডার হাসপাতালে ছিল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ছিল জ্যাকসন। ব্র্যান্ডন বলেন, ‘ওই সময়টা মনে করলেই ভয় লাগে। সত্যি বলতে ওই সময়ে চিকিৎসকেরাও আমাদের মনের অবস্থা বোঝেনি। তারা নেতিবাচক বিভিন্ন কথা বলেছে, এই যেমন আমার ছেলে কখনো হাঁটতে পারবে না, কখনো কথা বলতে পারবে না।
তবে এখনো প্রতিদিন সকালে ব্রিটনি এবং ব্রান্ডন দম্পতির দিন শুরু হয় আতঙ্ক দিয়ে। হয়তো আজই জ্যাকসনে জীবনের শেষ দিন!
মন্তব্য চালু নেই