ছিন্নমূল শিশুদের পাশে দাঁড়ানোই কি তাদের অপরাধ!
রাজধানীর রামপুরা অঞ্চল থেকে শিশু উদ্ধার ও চারজনের আটকের ঘটনায় তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আটককৃতরা নিজেদের শিশুদের জন্য কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী দাবি করলেও পুলিশ বলছে, তারা মানব পাচারের উদ্দেশ্যেই শিশুদের বাড়িতে রেখেছিলো। তবে তা মানতে চাইছে না আটককৃত ৪ এনজিও কর্মীর বন্ধু-স্বজনেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন তারা। বলছেন, স্বেচ্ছাসেবা দিতে গিয়েই ফেঁসে গেছেন তাদের ওই চার বন্ধু।
শনিবার দুপুরে বনশ্রীর সি ব্লকের ১০ নম্বর বাড়ির ২০৬ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে দশ শিশুকে উদ্ধার করা হয়, গ্রেপ্তার করা হয় চার এনজিও কর্মীকে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন, আরিফুর রহমান (২৪), হাসিবুল হাসান ওরফে সবুজ (১৯), জাকিয়া সুলতানা (২২) ও ফিরোজ আলম খান ওরফে শুভ (২১)। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে করা একটি মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এ ঘটনায় ওই ১০ শিশুর একজনের তরফে তার চাচা মানব পাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। রোববার আদালতে শুনানি শেষে ওই চার এনজিও কর্মীকে দুই দিনের রিম্যান্ডে নেয়া হয়। পুলিশের অভিযোগ, তারা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য। তারা রাজধানীসহ আশপাশ জেলা শহর হতে শিশু সংগ্রহ করে পাচার করে আসছে। কিন্তু আটককৃতদের দাবি, তারা ‘অদম্য বাংলাদেশ’ নামে একটি এনজিও পরিচালনা করেন। পথশিশুদের শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তারা। ওই শিশুরাও এই কর্মসূচির আওতায়ই এই ফ্লাটে ছিলো।
গ্রেপ্তারকৃতরা শিশু পাচারকারী নয় উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খুলেছেন ওই চার আটককৃত এনজিও কর্মীর বন্ধুরা।
ইভেন্ট: আরিয়ান আরিফ ও জাকিয়ারা শিশু পাচারকারী নয়।
এছাড়াও বিভিন্ন স্ট্যাটাস-কমেন্টে এই গ্রেপ্তার আর রিম্যান্ডের সমালোচনা করছেন তারা।
এস এম সৈকত ফেসবুকে লিখেন,
উদ্ধারকৃত ওই ১০ শিশুর মধ্যে নয়জনের সাথে কথা বললে সবাই একবাক্যে রিমান্ডকৃত কর্মকর্তাদের প্রশংসা করে। ওইসব বাচ্চাদের মধ্যে স্বপন, বাবলু, আকাশ, রফিক, রাসেলকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তোমরা সেখানে কেমন আছো? উত্তরে জানায়, সেখানে বেশ ভালো আছে তারা। তোমরা আবারো সেখানে ফিরে যেতে চাও কি না। শিশুরা বলে, হ্যাঁ আমরা ফিরে যেতে চাই।
তখনই পাশে থাকা এক পুলিশ কনস্টেবল বলে, কিসের ফিরবে? ওইখানে কোনো পড়ালেখার ব্যবস্থা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা নেই, কোথায় যাবে এরা?’ সাথে সাথেই ওই পুলিশের মুখের উপর কড়া প্রতিবাদ জানায় ওই শিশুরা। তারা বলে, হেয় তো দেহি কিচ্ছুই জানে না।
আমি এই শিশুদের কথা বিশ্বাস করতে চাই। গায়ে আইনের পোশাক থাকলেই আইন হয়না। বরং মানবতার পাশে দাড়ানো মানুষকে বাঁচানোই আইন। আমার আইনজীবী বন্ধুদের অনুরোধ জানাব, বিষয়টিতে দৃষ্টি দিন। আইনের মারপ্যাচে স্বেচ্ছাসেবার ব্রত থমকে যাবে এটা হতে পারে না।
হাসান যোবায়ের লিখেন,
মানব সেবা করতে গিয়ে পুলিশ রিমান্ডে যেতে হচ্ছে!! ছিঃ ছিঃ এই ঘটনা সম্ভবত শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব! গ্রেফতারকৃত একজনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। পথশিশু নিয়ে পাগলের মত কাজ করতো এই নিঃস্বার্থ লোকটি আর তাকেই কিনা গ্রেফতার হতে হলো!! মুখভর্তি থুতু জমে গেছে। ওয়াক থু
সজল নামের এক ব্যক্তি লিখেন,
তারা নিজেরা কিছু করবে না বরং কেউ কিছু করতে গেলে তাকে উল্টো গ্রেফতার। দিস ইজ বাংলাদেশ। অন্য কোন দেশ হলে সরকার পুলিশ প্রসাশন সাহায্যের হাত বাড়াতো।
মোবারক হোসেন লিখেন,
আরিয়ান আরিফ আমার ফেসবুক বন্ধু মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে। এর অনেক আগে থেকেই মজার স্কুল : পথশিশু আর আমরা কতিপয় এর কর্মকান্ড দেখি আমার ওয়ালে, নেটওয়ার্কে কমন বন্ধুদের সৌজন্যে।
আরিফের সাথে আমার ফেসবুকে কথা হয়েছে অনেকবার। সে আমার কাছে তার ভলান্টারি প্রজেক্ট নিয়ে পরামর্শ চেয়েছিল, ডোনেশন চেয়েছিল, আমাকে বনশ্রীতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, এমনকি একটা মোবাইল অ্যাপ বানাতে অনুরোধ করেছিল।। ব্যস্ততা/অলসতার কারনে কিছুই হয় নি শেষ পর্যন্ত। যতদিন কথা হয়েছে ওকে আমার যথেষ্ট ভদ্র, ধৈর্য্যশীল মনে হয়েছে। হঠাত দেখি আরিফ আর টিমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে শিশু পাচারকারী সন্দেহে! আমাদের দেশের পুলিশ অনেক স্মার্ট, তারা ধরে নিতেই পারে। আশা রাখি আরিফ এবং তার বন্ধুরা খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসবে। কিন্তু অলরেডি বড় ক্ষতি হয়ে গেছে এবং আরো হবে এইটাই আফসোস।
কাজল নামের ওপর এক ব্যক্তি লিখেন,
আমরা যদি না জাগি মা ,
কেমনে সকাল হবে !
এটাই লিখা ছিল ঐ টি- সার্ট এ !!!
এই ছিল প্রতিদান ?? লজ্জা থাকা উচিত এই কথা এখন আর বলব না । তোমরা ইতি মদ্ধে লজ্জার মাথারে মুরি ঘণ্ট বানিয়ে খেয়ে ফেলেছ। একবারও কি এদের নিয়ে এত বড় মিথ্যাচার করতে তোমাদের হৃদয়ে লাগে নি ?
প্রসঙ্গত, উদ্ধারকৃত শিশুদের মধ্যে নয় শিশুকে রাখা হয়েছে সিএমএম আদালতের নীচে বিচারপ্রার্থীদের ওয়েটিং রুমে। আর কুমিল্লার মোবারক হোসেনকে অন্যসবার কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে গারদখানার ভেতর কোনো একটা রুমে। অনেক চেষ্টা করে তার সাথে কথা বলা যায়নি। মামলার এজাহারের ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যম জানায়, ওই শিশুর চাচা মো. মনির হোসেনের মামলার ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এজাহারে বর্ণিত বাদীর বক্তব্য মতে, গত ছয়মাস ধরে মোবারককে সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল।
আরো পড়ুনঃ
মন্তব্য চালু নেই