টুকরো করা সুচেতা ছিল যথেষ্ট সুন্দরী
পশ্চিমবঙ্গের শেওড়াফুলিতে গত ২৯ আগস্ট যে ৩২ বছরের সুচেতা চক্রবর্তীকে টুকরো টুকরো করা হয়, তিনি ছিলেন যথেষ্ট সুন্দরী। একটি ব্যাগে ছিল সুচেতার মাথা থেকে কোমরের অংশ পর্যন্ত। অন্য ব্যাগে ছিল তার কোমরের নিচ থেকে পায়ের পাতাটুকু। সুচেতার কোমরের নিচ অর্থাৎ নাভি থেকে শরীরের নিম্নাংশ মিলেছিল যে রঙের সুটকেসটিতে, তা ছিল মেরুন রঙের।
এই সুটকেসটি খুনি ব্যাংক ম্যানেজার সমরেশই কিনেছিলেন। যে দোকান থেকে সুটকেসটি কেনেন, মঙ্গলবার তার কর্মচারী সমরেশকে শনাক্ত করা হয়েছে। ব্যাগটি কেনেন ৪৬০০ রুপি দিয়ে। দোকানে রসিদের যে কার্বন কপি রয়েছে, সেখানে অন্য নাম থাকলেও রয়েছে সমরেশের মোবাইল নম্বর।
খুন হওয়ার স্থল সুচেতার ফ্ল্যাটে গিয়ে পুলিশ দেখেছে, সব ধুয়েমুছে সাফ করা। কোথাও কিছু নেই। প্রশ্ন উঠেছিল, তা হলে নাড়িভুঁড়ি গেল কোথায়? কারণ, সুটকেসে সেসব কিছু ছিল না। পরে সুচেতা ও তার মেয়ে চার বছরের ছোট্ট দীপাঞ্জনার নাড়িভুঁড়ির খোঁজ মিলল সুচেতার ফ্ল্যাটের পেছনে একটি সেপটিক ট্যাঙ্কে কাপড়ে-মোড়া।
পুলিশ জানায়, ঘরের ভেতর থেকে বঁটি, চপার, শিল-নোড়া, ঠান্ডা পানীয়র খালি বোতল, ঘুমের ওষুধের খালি ও ভর্তি ‘ফাইল’, তোয়ালে, একটি নাইলনের ব্যাগে রাখা ফাঁকা ফিনাইলের ডজনখানেক বোতলও উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ মনে করছে, চপার ও শিল-নোড়া ব্যবহার করে সুচেতার দেহ কাটা হয়। তোয়ালে দিয়ে রক্ত মুছে ফিনাইল দিয়ে ঘর পরিষ্কার করে ঘরের ফ্যান চালিয়ে, তোয়ালে শুকোতে দিয়ে, দেহাংশ-ভরা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যান সমরেশ।
আরেকটি ব্যাপার এই যে, গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকে এ পর্যন্ত সমরেশ নানাভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনো ভুল তথ্য দিচ্ছেন, কখনো স্পষ্ট উত্তর দিচ্ছেন না। তার বয়ানের ধোঁয়াশা কাটাতে টানা জেরা চলছে।
যেভাবে সুচেতাকে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল, তা শুনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তার আত্মীয়রা। মঙ্গলবার সুচেতার ছোট মাসি সুনীপা পাঠক বলেন, ‘মাছের রক্ত দেখলেও ভয়ে সিঁটিয়ে যেত ছোট মেয়েটা। সেই মামনকে (সুচেতা) টুকরো টুকরো করে কাটা হয়েছে, ভাবতে পারছি না।’ ছোটবেলার বেশির ভাগটাই মামাবাড়িতে কেটেছে সুচেতার। সুনীপাদেবী বলেন, ‘বড়দি দীপালির একমাত্র মেয়ে সুচেতা। খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে ও সামান্য চোট পেলেই আমরা অস্থির হয়ে যেতাম। তাকে এভাবে খুন করা হলো!’
অপরদিকে প্রথম দিকে তদন্তকারীরা একরকম নিশ্চিত ছিলেন, বিয়ের জন্য নাছোড় প্রেমিকাকে জীবন থেকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতেই সুচেতা ও তার শিশুকন্যাকে খুন করেছেন সমরেশ সরকার। দুজনের দেহ লোপাট করতে টুকরো টুকরো করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তদন্তে পাওয়া তথ্য থেকে পুলিশের ধারণা, সুচেতার টাকা ও গয়নার দিকেও নজর ছিল সমরেশের। সুচেতার অনুপস্থিতিতে সেসব হাতিয়ে নেওয়ার ছক কষেছিলেন তিনি। ব্যাংকের লকারে আনুমানিক ৫০ ভরি সোনার গয়না রেখেছিলেন সুচেতা, তাও নাকি পাওয়া যাচ্ছে না এখন।
কেবল সুচেতা নয়। জেরায় দ্বিতীয় এক তরুণীর নামও জানিয়েছে সমরেশ, যার আট লাখ রুপির মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পের কাগজপত্র সমরেশের কাছেই রয়েছে। ওই তরুণীর বাবা একসময়ে সমরেশের সহকর্মী ছিলেন। তার মৃত্যুর পরে মা ও মেয়েকে কবজা করেন সমরেশ। তার ওই পরিবারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এমনকি ওই তরুণীর সঙ্গে সমরেশকে বাইরেও একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। দেখাশোনার নাম করে ওই পরিবারের আর্থিক দিকসহ সবটাই কুক্ষিগত করে নিচ্ছিলেন সমরেশ।
ওই তরুণীর সঙ্গে মঙ্গলবার ফোনে কথা বলে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, সমরেশের হাতে আর্থিক কাগজ থাকার কথা স্বীকার করলেও তার সঙ্গে ‘অন্য’ কোনো সম্পর্কের কথা মানতে চাননি ওই তরুণী। যদিও অভিভাবকহীন মেয়েদের সাহায্যের ভান করে তাদের নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন সমরেশ, এমনই মনে করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২৯ আগস্ট ব্যাংক ম্যানেজার সমরেশ চার ব্যাগ ভর্তি রক্তাক্ত লাশের টুকরো গঙ্গার পানিতে ফেলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন।
তথ্য সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, আজকাল
মন্তব্য চালু নেই