৫ বছর ধরে ঘুমোচ্ছে বাস্তবের এই ‘স্লিপিং বিউটি’, ঘুমের কারণ জানলে চোখে জল আসবে

ইংল্যান্ডের স্টকপোর্টের মেয়ে বেথ গুডিয়ারের এতদিনে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। শিশু মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল তার। ছাত্রী হিসেবেও সে ছিল উজ্জ্বল। এতদিনে শিশু মনস্তত্ত্বের জগতে নিজের জায়গা করে নেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল ২০১১ সালে বেথের ১৭তম জন্মদিনে। নভেম্বর মাসের সেই দিনে সেই যে ঘুমোতে গেল মেয়ে, তার পর পাঁচ বছরেও পুরোপুরি ভাঙেনি সেই ঘুম।

আদপে বেথ এক বিরলতম রোগে আক্রান্ত, যে রোগের নাম ক্লেন লেভিন সিনড্রোম (কেএলএস), ওরফে স্লিপিং বিউটি সিনড্রোম। এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সর্বদাই ঘুম পায়। ঘুমের প্রকোপ এতটাই বেশি থাকে যে, দিনের অধিকাংশ সময়টায় ঘুমিয়েও কাটতে চায় না ঘুমের রেশ। অনেক সময়ে একটানা বেশ কয়েকদিন কিংবা কয়েক সপ্তাহও কেটে যায় ঘুমিয়ে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ১৬ বছর বয়সেই এই রোগ হানা দেয় মানুষের শরীরে। বেথের বয়স যখন ১৭, তখন তার শরীরে ধরা পড়ে কেএলএস-এর আক্রমণের লক্ষণ। প্রথম দফায় টানা প্রায় ছ’মাস ঘুমিয়েছিল সে। তার পরে সে জেগে ওঠে ঠিকই, কিন্তু পুরোপুরি জাগ্রত অবস্থায় সে কখনওই পৌঁছয়নি।

বেথের মা জেনাইন জানান, তিনি হিসেব করে দেখেছেন, বিগত পাঁচ বছরে তাঁর মেয়ে শতকরা ৭৫ ভাগ সময়ই ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। এখন শুধু নামমাত্র খাওয়া, জল পান এবং টয়লেটে যাওয়ার জন্য সে ওঠে। বাকি সময়টা সে ঘুমিয়েই কাটায়। যে সময়টা সে জেগে থাকে সেই সময়টাও তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় কাটে বেথের। বাচ্চাদের মতো করে কথা বলে, মুখ দিয়ে লালা গড়ায়, আর তেল-মশলা যুক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার জন্য বায়না করে। গত পাঁচ বছরে কেবল কয়েকবার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছে বেথ। সেই সময়েও হুইল চেয়ারে করে তাকে নিয়ে যেতে হয়েছে।

বেথের ডাক্তার স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ গাই লেসসাইজার জানালেন, সাধারণত কেএলএস রোগ ১৩ বছর স্থায়ী হয়। বেথের পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার মধ্যে উন্নতির কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না।

বেথের জীবনে তবু আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন তাঁর ভালবাসার মানুষ ড্যান। ২৫ বছর বয়সি এই প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে বছর তিনেক আগে হঠাতই আলাপ হয় বেথের। সৌভাগ্যবশত বেথ তখন জেগে ছিল। সেই যে সেই সময়ে বেথের হাত ধরেছিলেন, তারপর আর তাঁর হাত কখনও ছাড়বেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন ড্যান।



মন্তব্য চালু নেই