২ বছর পর মেয়েকে নতুন জামা, কাঁদলেন বাবা
কাওসার হোসেন ভিক্ষা করে জীবন চালান। একমাত্র মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে থাকেন ফুটপাতে।
হয়তো দু’বেলা ঠিকমতো খাবারই জোটে না তাদের। দুই বছর মেয়েকে কোনো নতুন জামা কিনে দিতে পারেননি কাওসার।
কয়েক দিন আগে মেয়ের জন্য জামা কিনতে গিয়েছিলেন এক দোকানে। জামার দাম হিসেবে তিনি ৬০টি পাঁচ টাকার নোট তুলে দেন দোকানির হাতে। এভাবে খুচরো টাকায় জামার দাম পেয়ে দোকানদার কাওসারকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি ভিখিরি?’
দোকানদারের প্রশ্ন শুনে কেঁদে ফেলে কাওসারের ছয় বছর বয়সী মেয়ে সুমাইয়া।
বাবার হাত ধরে টেনে সে বলতে থাকে, ‘আমার কিচ্ছু চাই না। বাবা, তুমি চলো এখান থেকে।’
মেয়ের চোখের জল মুছে দিয়ে দোকানদারকে শান্তস্বরে কাওসার জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভিখিরি।’ এরপর মেয়ের পছন্দের হলুদ ফ্রকটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দোকান থেকে।
দুই বছরের মধ্যে এটাই সুমাইয়ার জন্য কেনা একমাত্র নতুন জামা। বাবার মনে তখন আনন্দ আর ধরে না!
গায়ে চাপানো হাফ-হাতা শার্টটার ডান হাতাটা হাওয়ার হালকা দুলছে। ওই হাতটা যে নেই কাওসারের! বাঁ হাত বাড়িয়ে কলকাতা শহরের বড় রাস্তার ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করেন তিনি।
অবশ্য এমনটা ছিল না কাওসারের জীবন। তিনি জানান, ‘বছর দশেক আগের সেই ঘটনা মনে পড়লে আজও আতংকে শিউরে উঠি। দুর্ঘটনায় আমার ডান হাতটা কাটা যায়। আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি এইভাবে ভিক্ষা করে বেঁচে থাকতে হবে।’
মেয়ে সুমাইয়া তাকে খাইয়ে দেয়। বাবাকে কখনও একলা ছাড়ে না। কাওসার যখন ভিক্ষা করেন, মেয়ে তখন তার পাশেই থাকে।
কাওসার বলেন, ‘মেয়ের সামনে এভাবে লোকের কাছে হাত পাততে আমার খুব লজ্জা করে! তবু, কী করব!’
সারা দিন ভিক্ষে করে দুটো মানুষের খোরাক জোগাড়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের ভবিষ্যতও সাধ্যমতো গড়তে তৎপর কাওসার।
অবৈতনিক স্কুলে পড়াশোনা করে ছোট্ট সুমাইয়া। মেয়ের প্রয়োজনীয় বই, খাতাপত্রও সুযোগ মতো কিনে দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
সুমাইয়ার নতুন জামা কিনে আজ আর বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়াননি কাওসার।
গর্বিত এ বাবা বলেন, ‘আজ আর ভিক্ষা নয়! দু’বছর পর মেয়েকে একটা নতুন জামা কিনে দিতে পেরেছি। ওই জামা পরে ও কিছুক্ষণ খেলুক আমার সামনে। আজ ওর বাবা আর ভিখিরি নয়। সে রাজা। আর ও আমার একমাত্র রাজকন্যে।’
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
মন্তব্য চালু নেই