২১৭১ কোটি টাকার অনিয়ম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে

চলতি বছরে তৈরি করা বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) অফিসের রিপোর্টে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ২ হাজার ১৭২ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম শনাক্ত করা হয়েছে। সিএজির গত বছরের রিপোর্টে ব্যাংকগুলোতে আর্থিক অনিয়মের পরিমাণ ছিল ৬৫২ কোটি টাকা। এই অনিয়ম এক বছরের মাথায় দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম বেড়ে যাওয়ায় গোটা ব্যাংক খাতে সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সিএজি অফিস তাদের এই রিপোর্ট সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ রিপোর্ট রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংক পরিচালনার শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং নিয়মনীতি অনুসরণ না করা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষাকে কাজ করতে না দেয়ার কারণেই আগের তুলনায় খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়েছে।

২০১০-২০১১ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক কর্মকাণ্ডের ওপর সিএজি নিরীক্ষা পরিচালনা করে। তাদের রিপোর্টে শীর্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংকে বড় ধরনের ২২টি অনিয়মের ঘটনা শনাক্ত করেছে। এসব অনিয়মের সঙ্গে ৬৬৩ কোটি টাকা জড়িত। রাষ্ট্রায়ত্ত আরেক ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংকে ২৪টি ঘটনার মাধ্যমে ৭১৩ কোটি টাকা আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়ে। এ বছর ওই দুটি ব্যাংক হিসাবের ওপর পৃথক দুটি অডিট রিপোর্ট তৈরি করেছে সিএসজি।

এছাড়া জনতা, রূপালী, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি ব্যাংকসহ সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। সবগুলো ব্যাংকে আর্থিক অনিয়মের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি টাকা।

অডিট বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা গেছে কতিপয় ব্যবসায়ী বিভিন্ন কৌশলে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে ও হাতিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে ঋণের বিপরীতে ভুয়া পোস্টিং, অনিয়মিত প্রকল্পে ঋণ প্রদান, জামানত ছাড়া পার্টির সঙ্গে আঁতাত করে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে অনিয়মিতভাবে সুদ মওকুফ ও ঋণের আসল সুদবিহীন ব্লক হিসেবে স্থানান্তর করে পুনঃতফসিলি, কনসোর্টিয়াম লোন এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না করে অতিরিক্ত ঋণ সৃষ্টি, মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ঋণ বিতরণ, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পুনঃতফসিলিকরণ, সিসি ঋণ, মেয়াদি আমানতের বিপরীতে ভুয়া পোস্টিংয়ের মাধ্যমে অনিয়মগুলো হয়েছে।

আরও দেখা গেছে, শ্রেণীকৃত ঋণের বিপরীতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সুদ মওকুফ, অনিয়মিতভাবে পুনঃপুন ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা, কিস্তি আদায়ে ব্যর্থতা, ঋণসীমার অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ ও অনিয়মিত স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদানের মতো অনিয়ম ধরা পড়েছে।

সিএজির প্রতিবেদন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণ হিসেবে দুর্বল অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থা, দুর্বল মনিটরিং ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতের শাস্তি না হওয়া, আর্থিক বিধিবিধানগুলো অনুসরণের অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। রিপোর্টে সরকার ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময় সময় জারিকৃত আদেশ, নির্দেশ ও প্রজ্ঞাপন, নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয়।। এছাড়া ত্র“টিপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট প্রণয়ন, পলিসি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ঊর্ধ্বতন ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃক কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া, জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সক্রিয়তার অভাব, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থার স্বাধীনতার ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া ঋণ বিতরণের আগে ব্যাংক স্বার্থে ঋণগ্রহীতা নির্বাচন, ঋণ খাতে সম্ভাব্যতা যাচাই, ঋণের সুদ ব্যবহারকরণ ও ডকুমেন্টেশন যথাযথ ও সতর্কতার সঙ্গে করা হয় না।



মন্তব্য চালু নেই