১২ বছর পর মাফ চাইলেন টনি ব্লেয়ার
দীর্ঘ ১২ বছর শেষে ইরাক যুদ্ধের জন্য মাফ চাইলেন বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। বললেন- ‘আই অ্যাম সরি’।
একই সঙ্গে তিনি বললেন, এই যুদ্ধের কারণেই জঙ্গি গোষ্ঠী আইসিসের উত্থান ঘটেছে। ইরাককে এখন এক ‘নরক’ আখ্যায়িত করলেন তিনি। স্বীকার করলেন জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের উত্থানের জন্য তিনিও আংশিক দায়ী। এর আগে তিনি ইরাক যুদ্ধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
কিন্তু সিএনএন টেলিভিশন সাক্ষাতকারে তিনি যে স্বীকারোকি দিলেন তাকে ব্যতিক্রম বলে বলা হচ্ছে। তার ওই সাক্ষাতকার আজ প্রচার হওয়ার কথা রয়েছে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়া। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে আগ্রাসী হামলা শুরু করেন।
তখন সারা বিশ্ব থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠলেও তারা থোড়াই কেয়ার করেন। সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাতকারে ব্লেয়ার বার বার বলেছেন, ওই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার জন্য তিনি দুঃখিত। সিএনএন সরাসরি তার কাছে জানতে চায়, ইরাক যুদ্ধ কি একটি ভুল ছিল? এ প্রশ্নের উত্তর সরাসরি পেতে সিএনএনের দিকে নজর রাখতে হবে। তবে কখন তা প্রচারিত হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি।
তবে আগেভাগেই মিডিয়ায় চলে এসেছে ওই সাক্ষাতকারের মূল বিষয়বস্তু। ওই প্রশ্নের জবাবে ব্লেয়ার বলেছেন, গোয়েন্দারা আমাদেরকে যে তথ্য দিয়েছিলেন তা ছিল ভুল। এ জন্য আমি দুঃখিত। আমি ক্ষমা চাই আমাদের পরিকল্পনার ভুলের জন্য। একবার আমরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে গেলে কি ঘটবে তা নিয়ে আমাদের যে অনুমান ছিল তাও ছিল ভুল। সিএনএন তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলে, আইএস উত্থানের মূল কারণ ইরাক যুদ্ধ।
জবাবে ব্লেয়ার বলেন, এ কথার মধ্যে সত্যতা আছে বলে আমি মনে করি। ফরিদ জাকারিয়ার এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেয়ার বলেন, অবশ্যই আপনি বলতে পারেন না যে, আমরা যারা ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে সরাতে অভিযান চালিয়েছি ২০১৫ সালের পরিস্থিতির জন্য কোন দায় নেই তাদের।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের রোববার লন্ডনের ডেইলি মেইল হোয়াইট হাউজের একটি গোপন নথি প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, ইরাক আগ্রাসনের এক বছর আগে একটি ‘ডিল ইন ব্লাড’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন টনি ব্লেয়ার ও জর্জ ডব্লিউ বুশ। তার এক সপ্তাহ পর এসব কথা স্বীকার করলেন ব্লেয়ার।
২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল প্রেসিডেন্ট বুশকে একটি সংক্ষিপ্ত নোট দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, গোপনে ইরাক যুদ্ধে সমর্থন দিয়েছেন ব্লেয়ার। অথচ প্রকাশ্যে তখন ব্লেয়ার বৃটিশ এমপি ও ভোটারদের বলেছিলেন, তিনি ইরাক সমস্যার একটি কূটনৈতিক সমাধান খুঁজছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক আগ্রাসন শেষ। কিন্তু সেই ইরাকে শান্তি নেই। প্রতিদিন সেখানে অস্থিরতা। কেউ কারো কথা শুনছে না। পুরো অঞ্চল জুড়ে বিরাজ করছে রক্তাক্ত বিশৃংখল অবস্থা।
ওদিকে আলাদা এক খবরে জানা গেছে, ইরাক যুদ্ধের বিষয়ে টনি ব্লেয়ারকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন বৃটেনের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ব্লাঙ্কেট। তিনি নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন যে, সাদ্দাম হোসেনের পতনের পরে সেখানে বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।
কিন্তু ব্লাঙ্কেটকে ওই নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ব্লেয়ার। পরিবর্তে তিনি মার্কিন প্রশাসনের দু’কর্মকর্তা ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ডের ওপর অন্ধ আস্থা প্রকাশ করেন। ইরাক যুদ্ধ নিয়ে অনেক বিলম্বে গঠিত স্যার জন চিলকোট তদন্ত শুরু করেন। তিনিও ইরাক যুদ্ধ নিয়ে ব্লেয়ারের কাছে প্রমাণ চাইতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
সে যা-ই হোক এখন থেকে প্রায় ১১ বছর আগে বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্সে দাঁড়িয়ে টনি ব্লেয়ার জোর গলায় বলেন- ইরাক যুদ্ধের জন্য আমি ক্ষমা চাইবো না। আমি বিশ্বাস করি এ যুদ্ধ সঠিক। ২০০৭ সালে এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমি মনে করি না ইরাকে যা করছি আমরা তার জন্য আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত। বাজার এলাকায় গাড়ি বোমায় দায় আমরা নিতে পারি না। এ
কই বছর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার সময় তিনি বলেন, বলেন, আমি হয়তো ভুল করেছি। তবে আমার দেশের জন্য এটা সঠিকই বলে মনে করি। ২০০৯ সালে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, যদি জানতাম ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র নেই তাহলেও আমি মনে করি সাদ্দাম হোসেনকে সরিয়ে দেয়া যথার্থ ছিল।
মন্তব্য চালু নেই