১০ দফায় বাধা না দিতে সন্তু লারমার হুঁশিয়ারি

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতির পূর্বঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচিতে বাধা না দিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।

শুক্রবার রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৯তম বর্ষপূর্তির আলোচনায় তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।

সন্তু লারমা বলেন, চুক্তির পর ১৯ বছর অতিবাহিত হলো। আমি মনে করি না, এটি আর বাস্তবায়ন করবে। এখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এসেও যদি পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নের কথা বলেন, আমি তার কথা বিশ্বাস রাখতে পারি না। কারণ সেই বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলেছি।

পার্বত্য চট্টগ্রামকে অতিমাত্রায় উপনিবেশে পরিণত করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা বন্দিখাঁচার মধ্যে আছি। এখানে পুরোটাই সেনানিবাস। সেখানে সরকার-শাসক গোষ্ঠীর শ্যৈন দৃষ্টি, অবিশ্বাসের দৃষ্টি। সেখানে আছে লাঞ্চনা আর বঞ্চনা। সেই বাস্তবতায় চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আগেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। জনসংহতি সমিতি ঘোষিত ১০ দফা দাবির প্রত্যেকটাই বাস্তবায়নযোগ্য। এসব দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকার কী ভাষা প্রয়োগ করবে জানি না। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার যদি অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করে, অন্তরায়ে তৎপর থাকে তাহলে পার্বত্যাঞ্চলে বর্তমানে যে পরিস্থিতি আছে তা থাকতে পারে না, থাকবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

জনসংহতি সমিতির পূর্বঘোষিত মধ্যে হচ্ছে- হরতাল (তারিখ ঘোষিত হয়নি) জলপথ, স্থলপথ, প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কার্যালয় অবেরোধ, অর্থনৈতিক অবরোধ, জনগণ কর্তৃক সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত অফিস বর্জন, জনগণ কর্তৃক আদালত বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস বর্জন, পর্যটন বর্জন ও অবৈধ পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন প্রতিরোধ, অবৈধভাবে জমি অধিগ্রহণ ও বেদখল প্রতিরোধ, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী জুম্ম-স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম প্রতিরোধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী জুম্ম রাজনৈতিক দালাল ও প্রতিক্রিয়াশীলদের সামাজিকভাবে বর্জন ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ।

চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ যা করছে তা বিশ্বাঘাতকতার শামিল। সরকার এই চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়। সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সহিংসতা শুরু হবে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। সেখানে এমন পর্যায়ে যাবে তাতে হয় সন্তু লারমা থাকবেন, না হয় নতুন নেতৃত্ব আসবে।

মালয়েশিয়ার একটি রাজ্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া মুসলিম অধ্যুষিত একটি বড় রাষ্ট্র। তাদের একটি আদিবাসী অধ্যুষিত প্রদেশে প্রবেশ করতেও দেশেরই অন্য এলাকার মানুষদের আনুষ্ঠানিক ভিসা নিতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঢুকতে বাঙালিদের ভিসা নিয়ে যেতে হবে, এমন অবস্থা যেন না হয়। সেই অবস্থায় কি আমরা যেতে চাই? চাই না।

মেসবাহ কামাল আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের উপনিবেশ হয়ে যাচ্ছে। বঞ্চনাবোধ থেকে এটি হচ্ছে। আমি মনে করি পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশকে ৯টি প্রদেশে বিভক্ত করা উচিত। যাতে সব প্রদেশে স্বায়ত্বশাসন থাকবে।

ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, আওয়ামী লীগ আজ খন্দকার মোশতাকের আওয়ামী লীগে (দলে) পরিণত হয়েছে। দলটি আজ আওয়ামী মুসলিম লীগে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস ও বেহাতের কারণে এই রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আপনারা নগদ নগদ অস্ত্র সমর্পণ করলেন। কিন্তু যাদের কাছে সমর্পণ করলেন তাদের কাছ থেকে নগদ কিছু পেলেন না। এ ভুল আর হবে না। সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন করতে হবে।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য নুর আহমেদ বকুল, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সাধারণ সম্পাদক সিমন চিসিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, দীপায়ন খীসা প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই