হাতির দাঁত দিয়ে চলছে অবৈধ ব্যবসা!
চীন নিয়ন্ত্রানাধীন হংকং হলো এশিয়ার লন্ডন। এমন কোনো জিনিস নেই যা এখানে যাওয়া যাবে না। বাঘের দুধ চাইলে তাও হংকংয়ের ব্যবসায়িরা এনে দেবে নির্ঘ্যাত। অবশ্য এর কারণও আছে, ঐতিহাসিক বিচার বিবেচনায় দেখা যায়, হংকংয়ের ভৌগোলিক সীমারেখা যুগ যুগ ধরেই জলদস্যু থেকে শুরু করে হরেক পদের কালোবাজারি চক্রে পরিপূর্ণ। তাই বর্তমান হংকংয়েও যে সেই আদি জলদস্যুরা নতুন পরিচয়ে নেই তা বলা যাবে না। এশিয়ার এই লন্ডন শহরের বিভিন্ন ভাস্কর্য বিক্রির দোকানগুলোতে একটু ঢু দিলেই তা বোঝা যায়।
সকলের চোখের সামনে হংকংয়ের ভাস্কর্য তৈরির দোকানগুলোতে বেশ জমকালো ভাবে সাজিয়ে রাখা হয় হাতির দাঁতের তৈরি নানা রকম উপাদান। বেশ খোলামেলা ভাবেই হাতির দাঁত বিক্রি করা হয়ে যায় এই দোকানগুলো থেকে। পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এই শহরে ভিড় জমায় স্রেফ বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য উপাদান কেনার উদ্দেশ্যে। শহরের ব্যস্ততম বাজারে হাতির দাঁতের তৈরি এসব জিনিস কিনতে পারা যায় অনেক সস্তায়, যার দাম পরবে মাত্র ১১ ডলার সমপরিমান এবং বৈধভাবেই এগুলো বিক্রি করা হয়।
১৯৮৯ সালের আগে হংকংয়ে ৪১৩ জনকে হাতির দাঁত বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল যদিও পরবর্তী সময়ে চীনা সরকার সেই চুক্তি রদ করে সকল প্রকার হাতির উপাদান বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এমনকি শহরটিতে হাতির দাঁতের সকল আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া হয় ফলে হাতির দাঁতের তৈরি জিনিসপত্র হংকংয়ের ভেতরেই বিক্রি করা হত। কিন্তু এক বছরের তদন্তের পর ওয়াইল্ড এইডের রক্ষক দল এই সিদ্ধান্তে আসলো যে, কিছু হংকং ব্যবসায়িরা লুকিয়ে অবৈধভাবে এ ব্যবসা করছে। ওয়াইল্ড এইডের একজন মুখপাত্র এলেক্স বলেন, হংকংয়ের হাতির দাঁতের ব্যবসায়িরা বৈধতার মুখোশ পরে অবৈধ ব্যবসা করছে।
তবে চীনা ব্যবসায়িদের চাহিদা যোগান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আফ্রিকার হাতির দাঁত শিকারী থেকে ব্যবসায়িরা পর্যন্ত। শিকারীরা শুধু মাত্র হাতির দাঁতের জন্য প্রায় দশ হাজার হাতি মেরে ফেলেছে। আফ্রিকার ওয়াইল্ড এইডের কর্মীরা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে যে, হাতি হত্যার বর্তমান হার কমাতে না পারলে আফ্রিকাতে হাতির সংখ্যা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, চীনের চাহিদা পূরণের জন্যই আফ্রিকা থেকে এগুলো সরবরাহ করা হত।
সম্প্রতি চীনের একটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ব্রিটেনের রাজপুত্র উলিয়ামের একটি বক্তব্য প্রচার করা হয় যেখানে তিনি চীনাদের হাতির তৈরি ভাস্কর্য না কেনার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি আরো বলেন ‘আমরা আমাদের সন্তানদের বলতে চাই না যে কবে আমরা শেষবারের মত হাতি দেখেছি। বরং আমরা বলতে চাই কিভাবে আমরা হাতিদের রক্ষা করেছি’।
আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যে হাতির দাঁত বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলেও আভ্যন্তরীন বিক্রি বৈধ বলা হয়েছিল ১৯৮৯ সালের একটি আইনে। ওয়াইল্ড লাইফের একজন কর্মী বলেন, হংকং যদি দেশিয় চাহিদা মেটানোর জন্য হাতির দাঁতের ব্যবসা করত তাহলে তাদের দোকানগুলোর সামনে ইংলিশ, স্পেনিস ভাষায় বিজ্ঞাপন দেয়ার কোন প্রয়োজন হত না। তার মানে বোঝা যায় পর্যটকরাই তাদের মূল গ্রাহক। এভাবে হাতির দাঁতের ভাস্কর্য তৈরিকে তিনি পাঁচারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। একটি গোপন ক্যামেরায় ধরা পরে যে, কিভাবে তারা বাইরের দেশগুলোতে বিশেষ করে চীনে হাতির দাঁতগুলো পাঁচার করে। তারা গ্রাহকদের সুরক্ষার সঙ্গে সীমান্ত অতিক্রমের নিশ্চয়তা দেয়। যদি তারা ব্যর্থ হয় তাহলে টাকা ফেরত দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয়।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও হাতির দাঁত পাঁচার রোধে নানান ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত মাসে এক সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং এর বৈঠক হয়। সেখানেও এই দুই দেশের প্রধানের মধ্যে হাতির দাঁতের পাচার রোধ করার নানা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।
মন্তব্য চালু নেই