হঠাৎই এক রিকশাচালক ৩৪ কোম্পানির প্রধান!

‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বিড়াল।’ সুকুমার রায়ের হ য ব র ল গল্পের মতোই শোনাতে পারে ভারতের এক রিকশাচালকের কাহিনী। অনেক সাধ্যসাধনা করে যেখানে নিজের একটা নতুন রিকশা কেনার স্বপ্ন দেখছিলেন, সেখানে রাতারাতি তিনি বনে গেছেন ৩৪টি কোম্পানির প্রধান। রূপকথার গল্প মনে হলেও অদ্ভুত এই ঘটনা সত্যিই ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর থানার প্রভাসনগরের গুরুগার্ডেন এলাকায়।

গত ২৯ জানুয়ারি ভারত সরকারের রেজিস্টার অব কোম্পানিজের রাজ্য শাখা থেকে একটি চিঠি এসেছিল রিকশাচালক কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়িতে। কোনোমতে নিজের নাম সই করতে পারা সেই রিকশাচালক চিঠিটি পড়িয়েছেন প্রতিবেশীদের দিয়ে। সেখান থেকে যা জেনেছেন তাতে চোখ কার্যত কপালেই উঠে গেছে কৃষ্ণপ্রসাদের। তিনি নাকি ৩৪টি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ডিরেক্টর পদে কাজ করছেন!

হঠাৎ করেই এত বড় একজন ক্ষমতাবান মানুষে পরিণত হয়ে যাওয়ার পর তো খুশিতে আটখানা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল রিকশাচালক কৃষ্ণপ্রসাদের। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। কোটি কোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে সেই রিকশাচালক এখন দিন কাটাচ্ছেন হাজতবাসের ভয়ে।

ঘটনা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি। কোম্পানির আইন অনুযায়ী একসঙ্গে ২০টির বেশি সংস্থার প্রধান পদে থাকার জন্য আইন লঙ্ঘনকারী হিসেবে সতর্ক করে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে তাঁকে। বলা হয়েছে, চিঠি হাতে পাওয়ার এক মাসের মধ্যে পছন্দমতো ২০টি কোম্পানিকে বেছে নিয়ে বাকি কোম্পানি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে। তা না করলে আইন লঙ্ঘনকারী হিসেবে ভারত সরকারের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয় তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

এই ঘটনা জানার পর রীতিমতো হতবাক হয়ে গেছেন রিকশাচালক কৃষ্ণপ্রসাদ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা খুব গরিব। এলাকার এক মালিকের কাছ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে কোনোমতে দিন পার করি। এসবের মানেই তো আমি বুঝতে পারছি না।’ বিস্ময়কর এই ঘটনার পেছনে এলাকার আরেক বাসিন্দা পবন মণ্ডলের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেছেন কৃষ্ণপ্রসাদ। বিষয়টি এরই মধ্যে শ্রীরামপুর থানাতেও জানিয়েছেন তিনি।

কৃষ্ণপ্রসাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রিকশা চালানোর সূত্রে পবন মণ্ডলের সঙ্গে কয়েক বছর আগে পরিচয় হয় তাঁর। তখন কৃষ্ণপ্রসাদের রিকশায় যাতায়াত করতেন পবন। বছর তিনেক আগে পবন কৃষ্ণপ্রসাদকে নিজস্ব রিকশা করে দেওয়ার জন্য ব্যাংকঋণের কথা বলেন। তারপর সেই ব্যাংকঋণ পাওয়ার জন্য চেয়ে নেন কৃষ্ণপ্রসাদের ভোটার কার্ড। কিছুদিন পরে ব্যাংকঋণের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করানোর জন্য কৃষ্ণপ্রসাদকে কলকাতাতেও নিয়ে যান পবন। এর পর থেকে মাঝে মাঝে কৃষ্ণপ্রসাদের ঠিকানায় কাগজপত্র এলে তা নিয়ে যেতেন পবন। সেই সময় তিনি সামান্য কিছু অর্থও দিয়েছিলেন কৃষ্ণপ্রসাদের হাতে।

ফলে সাম্প্রতিক এই ঘটনার পর সন্দেহের আঙুলটা পবনের দিকেই উঠিয়েছেন কৃষ্ণপ্রসাদ। শ্রীরামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন পবনের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পবন মণ্ডলকে গ্রেপ্তারও করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি চিঠি অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ২০ মার্চের মধ্যে মোট ৩৪টি কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব নেন কৃষ্ণপ্রসাদ। এদিকে কৃষ্ণপ্রসাদের অভিযোগমতো পবন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানতে পেরেছে, কলকাতার বড়বাজারে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে পবন। ওই সংস্থারই বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান পদে বসিয়েছেন কৃষ্ণপ্রসাদের নাম। এভাবে বড়সড় ব্যাংক জালিয়াতি কৃষ্ণপ্রসাদের নামে করা হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই