সৌদি রাজ পরিবারে বিদ্রোহের সুর!
চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, অস্থিতিশীল তেলের বাজার এবং হজ পরিচালনায় চরম অব্যবস্থাপনার জন্য খোদ সৌদি রাজপরিবার থেকে এবার সৌদি বাদশার অপসারণের দাবি উঠেছে । সৌদি বাদশাহ সালমানের অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির এক জ্যেষ্ঠ যুবরাজ। ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুবরাজ জানিয়েছেন, রাজপরিবারে বাদশাহ সালমানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে ওই যুবরাজের নাম প্রকাশ করা হয়নি।তার পরিচয় সম্পর্কে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের নাতি।
যুবরাজ জানিয়েছেন, শিগগিরই বাদশাহর চার অথবা পাঁচভাই সালমানের পদত্যাগ নিয়ে বৈঠকে বসবেন। ধারনা করা হচ্ছে, নতুন প্রজন্মকে তারা ক্ষমতায় আনতে চলেছেন। এনিয়ে নতুন প্রজন্ম বেশ উৎফুল্ল।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি বাদশা আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পর স্থলাভিষিক্ত হন তার সৎভাই ৭৯ বছর বয়সী সালমান।সালমানের সিংহাসনে উত্তরাধিকারী হিসেবে যুবরাজ পদে রয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী বিন নায়েফ এবং তার ডেপুটি হিসেবে ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমান।
ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো ও তেলের দরপতনের ঘটনায় বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ বছরখানেক ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছেন। এর মধ্যেই চলতি বছর হজ মৌসুমে ঘটেছে দুটি বড় দুর্ঘটনা। ক্রেন ভেঙে পড়ে গিয়ে কয়েকশ ব্যক্তির মৃত্যু। এর কয়েকদিন পরেই পদদলিত হয়ে সাড়ে সাতশর বেশি হাজি মারা যান। এতে হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা প্রকটভাবে ধরা পড়ে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ে রাজপরিবার।
সাক্ষাৎকারে যুবরাজ জানান, চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি বাদশাহকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের আহ্বান জানিয়ে দুটি চিঠি লিখেছেন। বাদশাহর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল নয়। বাস্তবে তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান রাজ্য চালাচ্ছেন।
দেশটির আদিবাসী নেতারাসহ সর্বস্তরের জনগণই সালমানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তীব্র চাপ দিচ্ছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তেলের দর ৫০ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় সৌদি আরব আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ থেকে অন্তত সাত হাজার কোটি ডলার তুলে নিয়েছে। তার ওপর বাদশাহ সালমান সিংহাসনে বসার পর থেকেই সৌদি আরবের প্রশাসনিক ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি। তার ওপর ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতার মুখে দেশটির নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, চলতি বছর সৌদি আরবের বাজেট ঘাটতি হবে প্রায় ১০ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
সৌদির আল হায়াত পত্রিকার সাবেক সম্পাদক খাইরাল্লাহ খাইরাল্লাহ জানান, দেশটির তেলের মূল্য নির্ধারনের দায়িত্বে রয়েছেন যৌথভাবে বাদশা সালমান এবং তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান। অপরদিকে উত্তরাধিকার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ রয়েছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে।
সৌদির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সারিতে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তবে এর মধ্যেই বেশ কিছু বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি।
মন্তব্য চালু নেই