সেই তরুণীকে বাংলাদেশে ফেরানোর নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গের আদালতের

গত চারবছর ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার লিলুয়া হোমে থাকা বাংলাদেশি তরুণীকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিল রাজ্যটির শ্রীরামপুর আদালত। মঙ্গলবার আদালতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে তাকে দ্রুত নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, কুমিল্লার বাসিন্দা বিসমিরা খাতুনকে ঢাকায় কাজ দেওয়ার নাম করে ভারতে পাচার করে দেয় রঞ্জিত সরকার নামে বনগাঁর এক যুবক। ভারতে নিয়ে ওই নাবালিকাকে তোলা হয় পশ্চিমবঙ্গের হুগলির চন্ডীতলা থানার অন্তর্গত চিকরণ গ্রামে রঞ্জিত সরকারের শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে বিক্রি করে দেওয়া হবে-গোপনে পাচারকারীদের এই কথা শুনেই তিনি যোগাযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। পরে তাদের সহযোগিতায় পুরো ঘটনা জানানো হয় পুলিশকে। এরপর ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিসমিরাকে উদ্ধার করে চন্ডীতলা থানার পুলিশ। পরে আদালতে তোলা হলে আদালতের নির্দেশে ওই নাবালিকাকে লিলুয়া হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

ওই নাবালিকাকে উদ্ধারের পাশাপাশি পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রঞ্জিত সরকারকেও ওইদিন আটক করা হয়। পরে তাকেও আদালতে তোলা হয়। কিছুদিন হাজতবাস কাটার পর জামিনে মুক্তি পায় পাচারকারী যুবক। কিন্তু হোমেই রয়ে যায় ওই নাবালিকা। অবশেষে মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বর্তমানে ১৮ বছর পেরনো ওই বাংলাদেশি তরুণীকে দেশে ফেরানোর নির্দেশ দেয় শ্রীরামপুর মহুকুমা আদালত।

এদিন খাতুন জানান, ‘আমি চাই বাবা-মায়ের বুকে ফিরে যেতে। দেশে ফিরে যাব এটা জানতে পেরে খুব ভাল লাগছে। আমি চাই আমার মতো আরও পাঁচটা মেয়ে যারা বাবা-মা থেকে দূরে চলে গেছে তারাও যেন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে দোষীদের ধরিয়ে দিতে সাহায্য করে। যাতে ওই পাচারকারীরা দ্বিতীয়বার কোন নারীর জীবন নষ্ট না করতে পারে।

তিনি আরও জানান, ‘ঢাকায় গার্মেন্সের কোম্পানিতে কাজ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আমায় এখানে নিয়ে আসে। আসলে আমাকে ওরা বিক্রি করতে চেয়েছিল, এটা জানতে পেরেই আমি গ্রামবাসীদের জানাই। এরপর তারাই পুলিশের কাছে খবর দেয় এবং ওই পাচারকারীকেও আটক করে। তবে তার আক্ষেপ বাড়িতে গিয়ে বাবাকে আর কোনদিনই দেখতে পাবেন না। কারণ ভারতে থাকাকালীনই দেশের বাড়িতে তাঁর বাবা মারা যায়।



মন্তব্য চালু নেই