সিরিয়া হামলায় ট্রাম্পের পক্ষে-বিপক্ষে কারা?

সিরিয়া সংকট সহসাই সমাধান হচ্ছে না। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো সমাধানের পথ না খুঁজে বরং নিজেদের অবস্থান জাহিরের তৎপরতায় সংকট আরও ঘণীভূত হচ্ছে।

সিরিয়া নিয়ে বর্তমানে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়। একপক্ষের মতে, একমাত্র প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনেই কাটবে সিরিয়া সংকট, যিনি সম্প্রতি নিজ জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ।

এই পক্ষ সম্প্রতি দেশটিতে মার্কিন সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্তকে যুগোপযোগী ও সাহসী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে।

তাদের মতে, বাশার আল আসাদ দেশটির ক্ষমতায় থাকবে কি না তা নির্ধারণ করবে দেশটির জনগণ।

অন্যদিকে রাশিয়ার মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

রাশিয়ার মতে, সিরিয়ায় মার্কিন হামলার ঘটনা কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের একটি আগ্রাসী মনোভাবের ফসল। স্বাধীন-সার্বভৌম সিরিয়ায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ কোনো হামলা বা অভিযান চালানোর অধিকার রাখে না বলেও তাদের দাবি।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সিরিয়ায় মার্কিন হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি মার্কিন আগ্রাসনের বিপক্ষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের দাবি তুলেছে রাশিয়া।

এসব নিয়ে সিরিয়ায় গত কয়েক বছর যাবৎ চলছে যুদ্ধ, সংঘর্ষ এবং হামলার ঘটনা। যার সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ, নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা।

২০১৪ সাল থেকে আইএসবিরোধী অভিযান চালানোয় তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র। বারাক ওবামার সময়কালে শুরু হওয়া সামরিক অভিযান বর্তমানের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনও জারি রেখেছে।

তবে আইএসবিরোধী বলা হলেও মার্কিন বোমা হামলা ও সামরিক অভিযানকে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী অভিযান বলেই আখ্যায়িত করা হয়।

মার্কিন হামলাকে সমর্থন জানিয়ে সিরিয়া সংকট সমাধানে আসাদকে সরে দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র সৌদি আরব, জর্ডান, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ইসরাইল, জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ও ন্যাটো।

অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। তার মতে, দেশটিতে মার্কিন সামরিক হামলা আগ্রাসন ছাড়া কিছুই না।

মার্কিন হামলাকে পুতিন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে চালানো হামলা বলেই মনে করেন বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

তিনি বলেন, সম্প্রতি সিরিয়ায় আইন লংঘন করে পরিচালিত মার্কিন হামলা যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। শুরু হবে নতুন করে টানাপোড়েন।

হামলার কারণে দুই দেশের সামরিক চুক্তি ও সহেযোগিতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান ভিক্টর ওজিরভ।

রাশিয়ার সঙ্গে একমত হয়ে আগ্রাসনের বিপক্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ইরান। দেশটি সম্প্রতি সিরিয়ায় পরিচালিত মার্কিন আগ্রাসনের চরম বিরোধিতা করেছে।

বৃহৎ পরাশক্তি হিসেবে চীনও মার্কিন আগ্রাসনের ঘোরবিরোধী। বরং আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের পক্ষে মত দেশটির।

এছাড়া উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকেও মার্কিন হামলার কট্টর সমালোচনা করা হয়েছে। মার্কিন যেকোনো ধরনের আগ্রাসনকে দেশটি নিজের জন্য হুমকি বলে মনে করে। তবে এর পাল্টা জবাব দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি রয়েছে কিম জং উনের দেশটির।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার মার্কিন সামরিক অভিযানে সিরিয়ার শায়রাত এয়ারফিল্ড লক্ষ্য করে ৫৯টি টমাহোক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন



মন্তব্য চালু নেই