সাতক্ষীরার খবর (১৮/৬/১৪)

আব্দুর রহমান,সাতক্ষীরা ॥
## সাতক্ষীরা জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের দ্বি-মাসিক সভা
জেলা প্রতিনিধি : জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের দ্বি-মাসিক সভা অনুষ্ঠিত। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের চৌরঙ্গী মোড়স্থ প্রীপ ট্রাষ্ট কার্যালয়ে এ্যাডভোকেট শাহনওয়াজ পরভীন মিলি’র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন- জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সাধারন সম্পাদক পারভীন নাসিমা আক্তার শিল্পী, কোষাধ্যক্ষ মিসেস শাহিদা সুলতানা, সদস্য আমেনা রহমান, রেবেকা খাতুন, ফারহা দিবা খান সাথী, তানজিলা খাতুন, দ্বিপালী রানী ঘোষ, খায়রুন্নেছা, রীতা রানী, শিল্পী রানী মহলদার প্রমুখ। আলোচনা সভায় জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের ব্যাংক একাউন্ট খোলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে নারীদের বিভিন্ন দক্ষতামূলক প্রশিক্ষন, আদিবাসীদের নিয়ে মতবিনিময় ও বার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

## সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ৫০ লাখ টাকার ভারতীয় শাড়ি ও থ্রীপিচ উদ্ধার
জেলা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্তে ৩টি মোটরসাইকেলসহ ৫০ লাখ টাকার ভারতীয় শাড়িও থ্রীপিচ উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় সীমান্তের কলারোয়া সদর, তলুইগাছা ও কাকডাঙ্গা এলাকা থেকে এসব মালামাল উদ্ধার করা হয়।
তবে, এসময় চোরাকারবারীরা মালামাল ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় বিজিবি সদস্যরা তাদেরকে আটক করতে সক্ষম হয়নি।
উদ্ধার হওয়া মালামালের মধ্যে রয়েছে- বিপুল পরিমান ভারতীয় উন্নতমানের শাড়ি, থ্রী-পিচ, থান কাপড় ও তিনটি মোটরসাইকেল।
সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শাহজাহান সিরাজ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তলুইগাছা, কাকডাঙ্গা ও কলারোয়া ফাড়ির টহলরত বিজিবি সদস্যরা চোরকারবারীদের ধাওয়া করে উক্ত বিপুল পরিমান ভারতীয় মালামাল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তিনি আরো জানান, উদ্ধারকৃত মালামালের মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
এসব মালামাল উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক থানায় মামলা হয়েছে ।

## সাতক্ষীরার দেবহাটার সখিপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত-১, আহত-২
জেলা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখিপুর মোড়ে সাতক্ষীরা-শ্যামনগর মহাসড়কে মঙ্গলবার দুপুরে ট্রাকের ধাক্কায় মটর সাইকেল আরোহী এক গৃহবধু নিহত হয়েছে। নিহতের নাম ময়না খাতুন। এ ঘটনায় মটরসাইকেল চালক তার স্বামী মোশাররফ হোসেন ও একমাত্র ছেলে মারুফ হোসেনও মারাত্মক আহত হয়েছে। তাদেরকে সখিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বাড়ী সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামে। দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেসবাহউদ্দীন জানান, শ্যামনগর থেকে মোশাররফ হোসেন তার স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে মটরসাইকেল যোগে সাতক্ষীরায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সখিপুর মোড়ে সাতক্ষীরা থেকে ছেড়ে আসা পন্যবাহী একটি ট্রাক মটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ময়না খাতুন ছিটকে পড়ে গাছে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

## সাতক্ষীরায় কারিগরি শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত
জেলা প্রতিনিধি :বেকারত্ব দূরীকরন,আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার লক্ষ্যে সাতক্ষীরায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সপ্তাহ’১৪ পালন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সাতক্ষীরা জেলার কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রশাসন।
সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী জি. এম আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোদাচ্ছের আলী, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী , নিত্যানন্দ সরকার প্রমুখ। বক্তারা বলেন,যে দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তি যত বেশি, সে দেশের জনগনের মাথাপিছুু আয় তত বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত মাত্র ৫ ভাগ। বিধায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কারিগরি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সংবাদ সম্মেলনে কারিগরি শিক্ষা সপ্তাহ’১৪ উপলক্ষে সপ্তাহ ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়।

## বেতনার ধ্বংসযজ্ঞ শেষ পর্যায়ে! নদী ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে খাল
জেলা প্রতিনিধি :খননের নামে ভরাট হয়ে যাওয়া ৩/৪’শ ফুট চওড়া বেতনা নদীর মাঝ বরাবর সরু খাল কাটা হচ্ছে। আর সেই খালের মাটি দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে উঁচু পাড়। দেখলে মনে হবে ঠিকাদাররা ১০/১২ ফুট গভীর করে নদী খনন করেছে। কিন্তু বাস্তবে ২/৩ ফুটের বেশী কোথাও খনন করা হয়নি। বরং কোন কোন স্থানে পাশের মাটি কেটে উঁচু নিচু নদীর তলদেশ সমান করা হচ্ছে।
আবার কোন কোন স্থানে এখনো সেইভাবে কাজ শুরু না করেই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। বৃষ্টির উজানের পানির স্রোতে নদীর গভীরতা বাড়তে পারে এই প্রতীক্ষায়। সরজমিনে গেলে বেতনা পাড়ের এলাকাবাসী এমনই মন্তব্য করেছেন। এলাকাবাসী আরো জানান, নদীর বুক উঁচু হয়ে যাওয়ায় আগে উজানের পানি নদীর পাশ্ববর্তী বিল ও গ্রামগুলো দিয়ে প্রবাহিত হতো। পরে ভাটির দিকে এসে সে পানি আবার নদী দিয়ে প্রবাহিত হতো। এর ফলে সাতক্ষীরার বিনেরপোতা এলাকার উজানে জলাবদ্ধ হতো। কিন্তু বর্তমানে যা করা হচ্ছে তাতে অল্প দিনের মধ্যেই ভাটিতে আরো কয়েক কিলোমিটার এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। শুধু তাই নয় পানি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে সাতক্ষীরা শহরের বিজিবি ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টার, সাতক্ষীরা জেলা কারাগার, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। জানা গেছে, ২৫ কোটি টাকায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ঘণ ফুট মাটি কাটার এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত এক/দেড় কোটি ঘণ ফুটও মাটি কাটা হয়নি। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের প্রায় ২৫ কোটি টাকার অর্থায়নে ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সাতক্ষীরার বেতনা নদী খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সুপারিঘাটা হতে ঝাউডাঙ্গার ওয়ারিয়ার ব্রিকসফিল্ড পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার নদী খনন এবং নদী অববাহিকার আরো ১১টি খালের ৬ দশমিক ০৯ কিলোমিটার খননের জন্য ৮টি গ্রুপে ৮ জন ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, প্রকল্পের ডিজাইন অনুযায়ী মূল নদী সর্বনিম্ন ২.৯২ মিটার বা প্রায় ১০ ফুট এবং সর্বোচ্চ ৫.৮২ মিটার বা প্রায় ১৮ ফুট গভীর করে নদী খনন করতে হবে। নদীর নিচে চওড়া হবে ৬ হতে ১৬ মিটার বা ২০ ফুট হতে ৫০ ফুট। খননের পর নদীর উপরিভাগে চওড়া হবে ৩০ থেকে ৪৫ মিটার বা ১০০ থেকে ১৫০ ফুট। খননকৃত মাটি নদীর ১০০ থেকে ১৫০ ফুট দূরে ফেলতে হবে। নদীর ঢাল হবে ১ ঃ ২।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, সুপারিঘাটা থেকে দুটি গ্রুপের কাজ পল্টনের উপর লংবোম স্কেবেটর দিয়ে পানির মধ্যে খনন করতে হবে। অপর ৫টি গ্রুপের কাজ হবে নদী বেধে পানি শুকিয়ে স্কেবেটর দিয়ে এবং কোথাও কোথাও লেবার দিয়ে। কার্যাদেশ অনুযায়ী আগামী ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা।
এদিকে সরজমিনে গেলে মাটিয়াডাঙ্গার এলাকাবাসীরা জানান, গত এপ্রিল মাসে ঐ এলাকার নিযুক্ত ঠিকাদার ২/৩টি খনন যন্ত্র এনে নদীর এক পাশের চরের কিছু মাটি কেটে পাড় উঁচু করার কিছু কাজ করেছেন। মূলত সুপারিঘাটা হতে শাল্যে পর্যন্ত নদী গভীর করে খননের কোন কাজই হয়নি। শাল্যে পাকা রাস্তার মুখ থেকে বিনেরপোতা পর্যন্ত এলাকায় যেয়ে দেখা গেছে, কোথাও এক/দেড় ফুট কোথাও দুই/তিন ফুট নদী গভীর করা হয়েছে। আর সেই কাটা মাটি পাশে ফেলে পাড় বানিয়ে উঁচু করা হয়েছে। অর্থাৎ বেতনার মাঝে চিকন খাল কেটে নদী ভরাট করা হয়েছে। কোথাও নদীর সীমানার বাইরে মাটি ফেলা হয়নি। এদিকে বিনেরপোতা ব্রিজের নিকট দেখা গেছে, তিন/চার ফুট গভীর করে নদী খনন করে পাড় উঁচু করা হয়েছে। সেখানে নদীর পার্শ্ববর্তী পুরাতন ভেড়িবাধের বাইরে যে সমস্ত বাড়িঘরগুলো ছিল সেগুলো উঁচু মাটিতে ঢেকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঝাউডাঙ্গার ওয়ারিয়া ব্রিকসফিল্ড পর্যন্ত একইভাবে কাজ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় উজানের পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হওয়ায় বেতনা পাড়ের বিল ও গ্রামগুলোতে গত কয়েক বছর জলাবদ্ধতা হতো। মূলত নদী দিয়ে পানি না যেয়ে পানি যেত গ্রাম ও বিলগুলো দিয়ে। শাল্যে এলাকায় সেই পানি আবার নদী দিয়ে প্রবাহিত হতো। কিন্তু এখন নদী ভরাট করে খাল তৈরী করায় প্রস্থ কমে উপরের পাড় ১০০/১৫০ ফুটে এসে দাড়িয়েছে। যা নদীর পাশের গ্রামের সাথে তুলনা করলে প্রায় সমান সমান। অর্থাৎ উপরের প্রকৃত পাড় হচ্ছে ৭০/৮০ ফুট। নদী গভীর করা হচ্ছে না। আবার নদী খননের মাটি নদীর ভিতরেই ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ঢালও ঠিকমত হচ্ছে না। এরফলে খননকৃত মাটি দিয়ে তৈরী করা পাড় বর্ষায় আবার নদীতেই ভেঙে পড়বে। ভরাটকৃত চর দ্রুত দখল হয়ে যাবে। নতুন তৈরী পাড় বা বেড়িবাধ ভেঙে এলাকা পন্টাবিত হবে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা নদী বাঁচাও সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক আনোয়ার জাহিদ তপন বলেন, খননের নামে বেতনা নদী হত্যা করা হচ্ছে। নদীর মূল কাঠামো পাল্টিয়ে নদীর বুকে খাল তৈরী করা হচ্ছে। যেটুকু খনন করা হচ্ছে সেই মাটি দিয়ে পাড় না বানিয়ে যদি নদীর সীমানার বাইরে ফেলা হতো তাতেও খুব বেশী উপকার না হলেও ক্ষতি হতো না। কিন্তু যা করা হচ্ছে তাতে উপকার তো দূরের কথা ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশী।
অপর একটি সূত্র জানায়, প্রাক্কলন অনুযায়ী ৮টি গ্রুপে প্রায় ২৬ লাখ ৭৫ হাজার ঘণমিটার অর্থাৎ সাড়ে ১০ কোটি ঘণফুট মাটি কাটার কথা রয়েছে। সাতক্ষীরার বাজার দর অনুযায়ী সাড়ে ১০ কোটি ঘণফুট মাটি সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ কোটি টাকায় লেবার দিয়েই কাটা সম্ভব। সূত্রটি জানান, মূলত এ জন্যই ঠিকাদাররা প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে প্রতি গ্রুপে ৩২ ভাগ থেকে ৫২ ভাগ কম দরে কাজ নিয়েছেন। অর্থাৎ ২৫ কোটি টাকার কাজ দর কম দিয়ে ঠিকাদাররা নিয়েছেন মাত্র ১৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকায়।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম এ সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজ চলমান আছে। ইতোমধ্যে ৩০/৩৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, খননকৃত মাটি নদীর সীমানার বাইরে ফেলতে ঠিকাদারদের বলা হয়েছে। তবে অনেকস্থানে বাইরে মাটি ফেলার জায়গা নেই। তিনি বলেন, কাজ শেষ হলে নদী ডিজাইনে ফিরে আসবে।



মন্তব্য চালু নেই