গৌরনদীবাসী যে কারণে উন্নয়ন বঞ্চিত

সরকার দলীয় সকল সহযোগী সংগঠনের একজন নেতা

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বরিশালের গৌরনদী উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র হারিছুর রহমান একাই সকল সহযোগী সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের আখের গোঁছাতে তিনি উন্নয়নমূখী কাজ না করে শুধু ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নেয়া ও স্থানীয় সংসদ সদস্যর প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজে মোটা অংকের টাকা কমিশনের নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

সূত্রমতে, মেয়র হারিছের বেপরোয়া কমিশন বানিজ্যে কয়েক কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ বন্ধ থাকায় গৌরনদীবাসী সরকারের সকল প্রকার উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তার এ কাজের প্রতিবাদ করায় ইতোমধ্যে একাধিক সরকারী অফিসে হামলা, ভাংচুর ও দলের প্রকৃত নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে প্রশাসন দিয়ে হয়রানী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও তিনি (হারিছ) এলাকার বির্তকিত ব্যক্তিদের দলে যোগদান করিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের দমন করার মিশনে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। চলমান হরতাল-অবরোধে বিরোধী দলের নিস্কিয় প্রবীণ নেতাকর্মীদেরও পুলিশ দিয়ে হয়রানী করতে ভুল করেননি সু-চতুর মেয়র হারিছ। তার এ বেপরোয়া কর্মকান্ডে দীর্ঘদিন থেকে শান্তির এলাকা হিসেবে পরিচিত গৌরনদীতে সকল দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাঝে এখন চরম অশান্তি বিরাজ করছে।

বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে মেয়র হারিছুর রহমান ও তার ক্যাডার বাহিনীর প্রভাব বিস্তারের অসংখ্য ভয়ঙ্কর কাহিনী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাধারন ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন, গৌরনদী উপজেলার টেন্ডার হওয়া ও প্রক্রিয়াধীন উন্নয়ন কাজগুলো মেয়র হারিছুর রহমানের মোটা অংকের টাকা কমিশন দাবির কারনে থমকে রয়েছে। মের্সাস ইসলাম ব্রার্দাস নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগী ঠিকাদার রাশেদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গৌরনদীর নলচিড়ার কান্ডপাশা ও বাটাজোর বটতলা এলাকার দুটি রাস্তা ও ব্রিজের প্রায় দুই কোটি টাকার কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পেয়ে অতিসম্প্রতি তিনি কাজ শুরু করতে যান। কিন্তু মেয়র তার কাছে পুরো কাজের ৩০% কমিশন দাবি করেন। তার দাবি উপেক্ষা করে কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য দোয়া-মিলাদের আয়োজন করা হলে মেয়র হারিছ কর্তৃক নলচিড়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি শাহজাহান কবীরের মাধ্যমে মিলাদ অনুষ্ঠান পন্ড করে দিয়েছেন। একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারীদের অভিযোগে আরো জানা গেছে, মেয়র হারিছ নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি দাবী করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতিটি কাজের কমিশন দাবী করে আসছেন।

সূত্রে আরো জানা গেছে, ইতোমধ্যে মেয়র হারিছুর রহমানের মোটা অংকের টাকা কমিশনের দাবির মুখে মেসার্স খন্দকার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে পাওয়া গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড (এনএইচডব্লিউ) থেকে সরিকল জিসি ভায়া গৌরনদী বন্দর সড়ক উন্নয়নের জন্য ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার ৭৩৮ টাকার কাজ, মেসার্স এস.এম এন্টারপ্রাইজের অনুকুলে গৌরনদী উপজেলা সদর থেকে কাজিরহাট ভায়া বিল্বগ্রাম বাজার সড়ক উন্নয়নের ২৭ লাখ ২৭ হাজার ৬৭৬ টাকার কাজ, মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্সের অনুকুলে বাটাজোর জিসি হইতে পিঙ্গলাকাঠী বাজার ভায়া পশ্চিম চন্দ্রহার জিপিএস সড়ক উন্নয়নের ৭৮ লাখ ৫ হাজার ১৫৯ টাকার কাজ, সরিকল জিসি হইতে সাহেবেরচর বাজার ভায়া নলচিড়া বাজার সড়ক উন্নয়নের ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮৫ টাকার কাজ, গৌরনদী বন্দর জিসি হইতে মুলাদী জিসি ভায়া কুতুবপুর বাজার সড়ক উন্নয়নের ৫১ লাখ ২২ হাজার ৬৯৫ টাকার ৩টি কাজ, রুপালী কনষ্ট্রাকশনের অনুকূলে মাহিলাড়া-পয়সারহাট ভায়া -ছয়গ্রাম সড়ক উন্নয়নের ৭০ লাখ ২২ হাজার ৪২ টাকার কাজ শুরু করতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা।

উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেন, সরকারের চল্লিশ দিনের চলতি কর্মসূচীতে স্থানীয় সংসদ সদস্যর প্রতিনিধি হিসেবে পৌর মেয়র হারিছ নিজেকে দাবি করে তাদের কাছে ১০% কমিশন দাবি করেন। তার দাবিকৃত কমিশনের টাকা না দেয়ায় ইতোমধ্যে বিএনপি সমর্থিত এক প্রবীণ চেয়ারম্যানকে নাশকতা মামলায় জড়িয়ে কারাভোগ করিয়েছেন মেয়র হারিছ। অপরদিকে মেয়র হারিছ তার বড় ভাই আকবর হোসেন ফারুকের নামে মাহিলাড়া থেকে নলচিড়া সড়ক কার্পেটিং করনের কাজ বাগিয়ে নিলেও নানা অজুহাতের কারনে শুরু করতে পারছেন না। এছাড়াও উপজেলার ছোট বড় একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ মেয়র হারিছের কমিশন দাবীর প্রেক্ষিতে থমকে রয়েছে। দলের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসন থেকে মেয়র হারিছের বড় ভাই হাবিবুর রহমান আ’লীগের মনোনয়ন নিতে ব্যর্থ হয়ে বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্থ করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুনাম ক্ষুন্ন করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।

কে এই হারিছ ॥ বর্তমানে বরিশাল উত্তর জনপদের অপরাধ জগতের এক ভয়ঙ্কর নাম মেয়র হারিছ। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় ২০১২ সালের আগস্ট মাসে মেয়র হারিছের সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে উপজেলা পরিষদসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ১৫টি মোটরসাইকেল। এর কয়েকদিন পরে পাওনা টাকা চাইতে গেলে গৌরনদী বন্দরের ব্যবসায়ী ও আ’লীগ নেতা ভোলা সাহাকে বেদম মারধর করে মেয়র হারিছ ও তার সন্ত্রাসীরা। একই বছর ত্রানের ব্রিজের টেন্ডার দাখিলকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা আ’লীগের নেত্রী সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী এবং মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগ নেতা সৈকত গুহ পিকলুকে লাঞ্ছিত করে অবরুদ্ধ করে রাখে হারিছ ও তার সন্ত্রাসীরা। ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ সকালে ঠিকাদারী কাজের বিরোধকে কেন্দ্র করে মেয়র হারিছের বড় ভাই আকবর হোসেন ফারুকের সাথে মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের বাগ্বিতন্ডার হয়।

এরজেরধরে ওইদিন দুপুরে মেয়র হারিছ ও তার সহযোগীরা পুলিশের উপস্থিতিতে সশস্ত্র অবস্থায় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদে হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর, ডিগ্রি কলেজ, মসজিদ, ক্লাব, ১০টি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান এবং তিনটি কাউন্টারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। একইদিন আইন শৃংখলা বাহিনীকে ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা সৈকত গুহ পিকলুর একমাত্র ছোট ভাই যুবলীগ নেতা সলিল গুহ পিন্টুকে নাটকীয়ভাবে র‌্যাব দিয়ে অস্ত্রসহ আটক করিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। গত ১ এপ্রিল পৌর মেয়র হারিছুর রহমানের সহযোগীরা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান পিকলু সমর্থিত ১৫ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে গৌরনদী বাসষ্টান্ডে বসে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।

মেয়র হারিছুর রহমানের বেপরোয়া কর্মকান্ডে একের পর এক সরকারী অফিস ভাংচুর, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের ছবি ভাংচুর, অফিসে ঢুকে সরকারী অফিসারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, সরকারী কর্মচারীকে কুপিয়ে জখম, মাদক সম্রাট থেকে শুরু করে চরমপন্থীদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে প্রতিবাদী জনপ্রতিনিধিদের প্রাণনাশের হুমকি, অস্ত্রের মহড়া, টেন্ডারবাজী, উন্নয়নমূলক কাজে কমিশনদাবী, কথা না শুনলে দলীয় নেতাকর্মীদের অস্ত্র মামলার নাটক সাজিয়ে আইন শৃখংলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ, দলের নেতাকর্মীদের কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম, সালিশ মিমাংসার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত, স্থানীয় প্রশাসনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ম্যানেজসহ বিস্তর অভিযোগের পরেও মেয়র হারিছের বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় আ’লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমেই যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর উপর।

দলের প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে কোনঠাসা করে রাখা ও তার (হারিছের) একক আধিপত্য বিস্তারের কারনে এখন নিস্ক্রিয় হয়ে পরেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানসহ নির্যাতিত নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে অভিযুক্ত পৌর মেয়র ও উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ হারিছুর রহমান বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই