সম্পর্কে ‘সু’‌যোগ, তাই যোগে সাড়া

কপাল ভাল যোগ-দিবসের! অন্তত ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’র তুলনায়!

এক সময় নরেন্দ্র মোদীর ডাকে সাড়া না দিয়ে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানের’ বিরোধিতা করতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যোগ-দিবস পালন নিয়ে তেমনটি হল না। আগামী ২১ জুন মমতার সরকারও রাজ্য জুড়ে সাড়ম্বরে যোগ দিবস পালন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই দিন প্রতিটি জেলা সদরে যোগাসন অভ্যাসের আয়োজন করবে রাজ্য সরকার। তবে মুখ্যমন্ত্রী নিজে কোনও অনুষ্ঠানে থাকবেন কি না, তা এখনও ঠিক হয়নি বলে নবান্ন সূত্রের খবর।

যোগ নিয়ে রাজ্যের এই অবস্থানের পিছনে অনেকেই মোদী-মমতার সম্পর্কে ‘সু’বাতাসের আবহটির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, মোদীর উদ্যোগে মমতার সাড়া দেওয়ার পিছনে রয়েছে দু’জনের সম্পর্কের উন্নতি। সে কারণেই রাজ্য এখন কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে বড় আকারে যোগ দিবস পালনে নেমেছে। তাঁরা বলছেন, যখন সুসম্পর্ক ছিল না, তখন এই মমতা-প্রশাসনই মোদীর ডাকা ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’ গোড়ায় সামিল হতে চায়নি। সরকারি কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, পাঁচ বছরে ৬৫০০ কোটি টাকা অর্থ সাহায্য পাওয়া যাবে জানার পরে রাজ্য ‘নির্মল বাংলা অভিযান’ নাম দিয়ে আলাদা প্রকল্প শুরু করে।

গত ১২ জুন বিধানসভায় তাঁর ঘরে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ‘‘প্রতি বছরই তো যোগ দিবস পালন হয়। এ বারও হবে। এর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই।’’ একই সঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘যোগ তো কারও নিজস্ব ব্যাপার নয়। এ দেশে বহু দিন ধরেই যোগের অভ্যাস হয়।’’ তাঁর দাবি, এ রাজ্যে নতুন যোগ কলেজ, হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে।

ঘটনা হল, গত ডিসেম্বরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে রাষ্ট্রপুঞ্জ ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। তার পরে নরেন্দ্র মোদীর সরকার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সারা দেশে ঘটা করে দিনটি পালন করা হবে।

রাজ্য সরকার যোগ-দিবস পালন নিয়ে কেন্দ্রের উদ্যোগকে বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ। অন্তত প্রকাশ্যে। যোগ নিয়ে কেন্দ্রের আহ্বানেই যে রাজ্যের তোড়জোড়, তা মানতে চাননি আয়ুয দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি জানান, বছর দুয়েক আগেই আলিপুরদুয়ারের তপসিখাতায় ৬৩ একর জমিতে আয়ুষ হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি ওষধি-বাগিচাও তৈরি হবে। এ ছাড়া, হাওড়াতে একটি যোগচর্চার কলেজ হবে। পাশাপাশি, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ ও নেচারোপ্যাথির স্নাতক পাঠক্রম চালুর উদ্যোগও অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে বলে দাবি আশিসবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘এ জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দ্রুত বৈঠকে ডাকা হচ্ছে।’’

যোগ দিবস পালন নিয়ে রাজ্যের তরফে তৎপরতা শুরু হয় গত মাসেই। ক্রীড়া দফতরের যুগ্মসচিব গত ২৮ মে জেলাশাসকদের চিঠি লিখে জানান, ‘রাষ্ট্রপুঞ্জ ২১ জুন দিনটি আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিনটি উদযাপনের জন্য কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় রাজ্যে সাড়ম্বরে যোগদিবস পালন করতে চায়। জেলাস্তরে তা পালনের জন্য জেলাশাসকদের নেতৃত্বে কমিটিও তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে’।

কমিটির ভূমিকা নিয়েও ক্রীড়া দফতরের যুগ্মসচিব জেলশাসকদের সবিস্তার জানিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘২১ জুন সকাল ৭ টা থেকে ৭টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসন অভ্যাসের আয়োজন করতে হবে। এর পর সারা দিন ব্যাপী বিভিন্ন সেমিনার, বৈঠক ইত্যাদিও করতে হবে’। ক্রীড়া দফতরের নির্দেশ, জেলা প্রশাসন এই কাজে স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, পুলিশ, এনসিসি, এনএসএস, নেহরু যুবকেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগাবে। যোগের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সুফল সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে এগুলি জরুরি বলে মনে করছে ক্রীড়া দফতর।

প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠানটি হবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। রাজ্য ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য (আয়ুষ) দফতর যৌথ ভাবে এর আয়োজন করছে। তবে বিভিন্ন যোগ প্রতিষ্ঠানকেই এই অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে দাবি। ওই অনুষ্ঠানে কলকাতার বেশ কিছু স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং সরকারি অফিসার যোগ দিতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। আয়ুষ এবং ক্রীড়া দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীরাও অনুষ্ঠানে থাকতে পারেন বলে সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলি আবার পৃথক ভাবে যোগের অভ্যাস করবে। আজ, শনিবারই বাগবাজারে যোগচর্চা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল এবং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। আগামী কাল, রবিবারের অনুষ্ঠানে কলকাতায় কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধন, খড়্গপুরে কেন্দ্রীয় যোগাযোগমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এবং আসানসোলে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় উপস্থিত থাকবেন। রেল, সেনা, আসমরিক প্রতিরক্ষা, ব্যাঙ্ক, আয়কর দফতর-সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে আলাদা করে যোগাভ্যাস হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।



মন্তব্য চালু নেই