সপ্তাহজুড়েই সারা দেশে রেড অ্যালার্ট

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে সপ্তাহ জুড়েই রাজধানীসহ সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে পহেলা বৈশাখের আগের দিন আজ (সোমবার) সারা দেশে জামায়াতের হরতাল ডাকার বিষয়টি মাথায় রেখেই রেড অ্যালার্ট থাকছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র।

এদিকে নববর্ষের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে গতকাল র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আলাদাভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তাদের মূল বার্তা ছিল অনেকটা একই ধরনের।

বেলা সাড়ে ৩টায় রমনার বটমূলে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করে র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে র্যাব প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে পুরো এলাকার ওপর নজর রাখবে। বিশেষ টহলে থাকবে র্যাবের হেলিকপ্টার। মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাবের বিশেষ দল থাকছে। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশীবাজার, চানখাঁরপুল, হাইকোর্ট মাজার হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।

জানা গেছে, আজ বিকাল ৫টা থেকে রমনা পার্কসহ আশপাশের রাস্তায় যানবাহন চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সর্বসাধারণকে চলে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। কোনো ধরনের ভাসমান দোকান ও হকার বসতে দেওয়া হচ্ছে না। এসব এলাকায় যাতায়াতকারীদের গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের জামার পকেটে প্রয়োজনীয় মুঠোফোন নম্বর বা যোগাযোগের ঠিকানা লিখে দিয়ে রাখতে অনুষ্ঠানস্থলে গমনাগমনকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে কেউ হারিয়ে গেলে তাকে পাওয়া সহজ হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ইলিশ কিংবা যে কোনো ধরনের খাবার গ্রহণের আগে মানের পাশাপাশি মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্র জানায়, বিশেষ নিরাপত্তা-বলয়ের মধ্যে থাকছে রমনা বটমূলসহ রাজধানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল। আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দেবে এবং রমনার ঝিলে প্রস্তুত থাকবে নৌবাহিনীর ডুবুরি দল। ডগ স্কোয়াড, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, পুলিশ ও র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে আর পুরো এলাকায় বসানো হয়েছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা। থাকছে ওয়াচ টাওয়ার। সেখানে শক্তিশালী বাইনুকুলার সংযোজিত বিশেষ রাইফেল নিয়ে পাহারায় থাকছে র্যাব ও সোয়াট। এসব রাইফেল দিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও অনায়াসে আঘাত করা সম্ভব।

এর আগে বেলা আড়াইটায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নগরীতে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। রমনা পার্ক এলাকায় হাতব্যাগ বা অন্যান্য ব্যাগ বহন, ধূমপান ও গাছে ওঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামীকাল বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শেষ করতে আয়োজকদের অনুরোধ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানানো হয়, উত্তর দিক থেকে আসা গাড়ি এবি হাউস থেকে হলি ফ্যামিলি রাস্তায়, পূর্ব দিক থেকে আসা গাড়ি জিরো পয়েন্ট থেকে আবদুল গনি রোড ও মৎস্য ভবন থেকে সেগুনবাগিচার কার্পেট গলি পর্যন্ত, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা গাড়ি জগন্নাথ হল থেকে পলাশীর রাস্তায় এবং পশ্চিম দিক থেকে আসা যানবাহন আজিজ সুপার মার্কেটের পাশের রাস্তায় পার্ক করা যাবে। আজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ডিএমপি কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের রমনা বটমূলের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের কথা রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই