সংকট নিরসনে চরমোনাই পীরের ৩ দফা

জনমনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও সঙ্কট সমাধানকল্পে গ্রহনযোগ্য উদ্যোগ নেয়ার দাবিতে-
আজ বেলা ১২.৩০ মিনিটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মুহতারাম আমীর হযরত পীর সাহেব চরমোনাই প্রদত্ত লিখিত বক্তব্য-
———————————————————————————————
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্। শত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ায় শুরুতেই সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
দেশের সামগ্রিক অবস্থা আপনারা ভাল করেই জানেন। দেশ যেন অশান্তির আগুনে জ্বলছে। রাজনৈতিক সংকট জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। প্রতিদিন মানুষ মরছে। প্রতিহিংসার আগুনে মানুষ জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে। হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটগুলো ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। প্রতিদিন স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হচ্ছে, কৃষি পণ্যসহ আমদানী রফতানীযোগ্য মালামাল সরবরাহে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে দাড়িয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মেহেনতি মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে ভয়ঙ্কর আতংক বিরাজ করছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকট ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় জনমনে চরম হতাশা দানা বাঁধছে।
অপর দিকে প্রতিদিন শত শত মানুষ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এমনকি দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিন-চারগুন মানুষ ইতিমধ্যেই বন্দি হওয়াতে উপচে পড়া বন্দিদের চাপে এক ধরণের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
অবরোধ, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও আর হামলা-মামলা এবং জুলুম-নিপীড়নে দেশবাসী আজ অসহায় ও দিশেহারা। দেশ এক অন্ধকার গহ্বরের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

সাংবাদিক ভাইয়েরা,
দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্যে এবং দেশবাসীকে এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্যে রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ উত্তরণের লক্ষ্যে আমরা বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছি। ইতিপূর্বে দেশের অভিভাবক হিসেবে মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে আমরা সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি। গত ১৯ জানুয়ারী খোলা চিঠির মাধ্যমে আমরা ক্ষমতাসীন সরকারকেও দায়িত্ব নিয়ে সংকট সমাধানে গ্রহনযোগ্য উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, সংকট সমাধানে কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহনতো দূরের কথা দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে ক্ষমতাসীনরা তা স্বীকার করতেও নারাজ। সরকার গায়ের জোরে এবং শক্তি প্রয়োগে বিরোধী মত দমন, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং বাক স্বাধীনতা হরণের যে পথ গ্রহন করেছে তা পরিস্থিতিকে আরও জটিলতর করে তুলছে।
সভা-সমাবেশ এবং মিটিং-মিছিলের মতো স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পথ রুদ্ধ করে দিয়ে সরকার বিরোধীদেরকে সংঘাত- সহিংসতার দিকে আরও উস্কে দিচ্ছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!

আমরা মনে করি দেশে যে একটি ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট চলছে তা ক্ষমতাসীন সরকারকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। সংকটের মূলে না গিয়ে শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সবকিছু সমাধান করে ফেলার হঠকারী চিন্তায় দিন দিন অশান্তি শুধু বাড়বেই, স্থিতিশীল পরিস্থিতি কিছুতেই ফিরে আসবে না।
অতএব ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি, দেশে বিরাজমান বিভীষিকাময় রাজনৈতিক মহাসঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করুন। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। নয়তো মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে যে কোন অশুভ পরিস্থিতির জন্য আপনারাই দায়ী থাকবেন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!

জনমনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে উদ্যোগ গ্রহনের দাবীতে আমরা কিছু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহন করেছি। যে কর্মসূচিসমূহ আপনাদের মাধ্যমে শান্তিকামী, মুক্তিকামী ও দেশপ্রেমিকসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে জানিয়ে দিতে চাই এবং তা বাস্তবায়নে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

কর্মসূচীসমুহ :
১. ৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় সাদা পতাকা নিয়ে মানব বন্ধন (গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী)
২. ৮ ফেব্রুয়ারী সারাদেশে জেলায় জেলায় সাদা পতাকা নিয়ে মানব বন্ধন।
৩. ১৩ ফেব্রুয়ারী সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় সাদা পতাকা নিয়ে মানব বন্ধন।

এরপরও সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়া না হলে সারা দেশের শান্তিকামী ও দেশপ্রেমিক সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে সাদা পতাকা নিয়ে ঢাকা অভিমূখে শান্তি অভিযাত্রা বা “মার্চ ফর পিস” কর্মসূচী গ্রহন করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষে আবারও যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে আমাদের সাথে সময় দেয়ার জন্য আপনাদের আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।



মন্তব্য চালু নেই