শ্বশুর দিল কেরোসিন, স্বামী দেশলাই…

অ্যাপেনডিসাইটিসের যন্ত্রণায় কাতর গৃহবধূ। চিকিৎসার বালাই নেই। তার ওপর দিনরাত শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার। নানা কুকথায় জর্জরিত অতিষ্ঠ বধূর জীবন। ‘গায়ে আগুন দিয়ে মর!’ এমন কথাও শুনতে হয়েছিল তাকে। শেষে ধৈর্যের বাঁধা ভাঙল। ভাবলেন, মরেই যাই। শ্বশুর এগিয়ে দিলেন কেরোসিনভর্তি জার, স্বামী দেশলাই এগিয়ে দিলেন। ব্যস, সাঙ্গ হলো মাত্র ১৯ বছর বয়সী এক গৃহবধূর জীবন!

এমন নিষ্ঠুর মর্মবিদারক ঘটনা ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কালনার শিকারপুরে। পাষণ্ড শ্বশুরবাড়ির শিকার এই গৃহবধূটির নাম হেনা বিবি।

খোদ শ্বশুর কেরোসিনভর্তি জার আর স্বামী দেশলাই বাক্স এগিয়ে দেয়ায় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছিল হেনা বিবির। গায়ে আগুন দিয়েছিলেন ঘরভর্তি লোকের সামনে। কেউ বাধা দেয়নি। দাউদাউ আগুনে যখন পুড়ছিল তার শাড়ি-চামড়া-চুল, মরণ চিত্‍কারে ছুটে এসেছিলেন প্রতিবেশিরা। আর নির্বিকার দাঁড়িয়েছিল স্বামীর পরিবারের সবাই। প্রতিবেশিরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। নিয়ে যান হাসপাতালে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।

কালনার শিকারপুরের হেনা বিবির মৃত্যু হয় গতকাল রোববার ভোরে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায় শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। প্রতিবেশিদের অভিযোগ, অসুখ হওয়ার জন্য হেনাকে দায়ী করেছিল তারা। স্রেফ জানিয়ে দিয়েছিল, ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের খরচ দেওয়ার প্রশ্নই নেই। গায়ে আগুন দিয়ে মরাই ভালো বলে পুত্রবধূকে পরামর্শ দিয়েছিল শ্বশুর। রোববার রাত পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দায়ের না হলেও কালনা মহকুমা হাসপাতাল থেকে নিয়মমাফিক খবর পাঠানো হয়েছে পুলিশের কাছে।

মৃতার মামা সিরাজুল শেখ মিঞা বলেন, ‘অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ পরামর্শ দেয়, আগে রোগীকে বাঁচান, পরে অভিযোগ জানাবেন।’ মাস আটেক আগে মন্তেশ্বরের ভৈরবপুরের হেনা বিবির সঙ্গে বিয়ে হয় কালনার শিকারপুরের যুবক মিলন মল্লিকের।

সিরাজুল জানিয়েছেন, হেনা মৃত্যুর আগে তাকে বলেছিলেন, শনিবার সকালে কালনার এক চিকিত্‍সকের কাছে তাকে নিয়ে গিয়েছিল মিলন। চিকিত্‍সক এক্স-রে করতে বলেন। ফেরার পথে তাকে বাপের বাড়ি চলে যেতে বলে স্বামী। সেইসঙ্গে অসুস্থতার জন্য গঞ্জনাও দেয়। শ্বশুরবাড়িতে ফেরার পর সবাই অসুখের কথা শুনে তার সঙ্গে ঘণ্টা দুয়েক কথা বলেনি। দুপুরে খাওয়ার জন্যও ডাকেনি কেউ।

এর পর অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথা উঠলে তিনি তা বললে শ্বশুর-শাশুড়ি-স্বামী বা দেবর কেউ সাহায্য তো করেইনি, উল্টো শ্বশুর জামাত আলি মল্লিক তাকে কেরোসিনভর্তি জার এগিয়ে দিয়ে আত্মঘাতী হতে বলে৷। রাগে-দুঃখে-অভিমানে হেনা নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে নেন। দেশলাই চাইলে স্বামী হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এর পরই গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন হেনা। প্রতিবেশিরা প্রথমে তাকে কালনা মহকুমা হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন।

হেনা বিবির বাবা ইজাবুল শেখ জানিয়েছেন, জামাই মুম্বাইয়ে সোনার কাজ করে। দিন চারেক আগে বাড়ি ফেরে সে। ইজাবুল বলেন, ‘বিয়ের সময় জামাইকে দাবিমতো পণ দিয়েছিলাম। এবার মুম্বাই থেকে ফিরে ফোন করেছিল দিন চারেক আগে। বাইক দিতে বলল। কিন্তু তার আগে শনিবার খবর পেলাম মেয়ে আগুনে পুড়ে গিয়েছে।’

কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই বলেন, ‘মহিলাটির শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। জবানবন্দি দেয়ার মতো অবস্থায় থাকেন না এ ধরনের রোগী।’

মৃতের বাপের বাড়ির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্তের কাজ শেষ হলে থানায় এফআইআর করা হবে। বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পেলে অবশ্যই মামলা রুজু করা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই