শেষ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুললেন সাকা

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেষ পর্যন্ত ফাঁসিতেই ঝুলতে হলো বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে।

শনিবার মধ্য রাতের কোনো এক সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। কারাগারের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ফাঁসি কার্যকরের নির্দিষ্ট সময় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে তার মরদেহ বহনের জন্য কারাগারে প্রবেশ করেছে চারটি অ্যাম্বুলেন্স।

এক সময়ের প্রবল প্রতাপশালী এই সাংসদ যিনি নিজেকে সব সময়ই মনে করতেন আইনের ঊর্ধ্বে, ফাঁসির মধ্যদিয়ে তার সব দম্ভ চূর্ণ হলো। দেশের এই শীর্ষ মানবতাবিরোধীর ফাঁসি কার্যকর করার মধ্যদিয়ে কিছুটা দায়মুক্ত হলো বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে চার দশকের বেশি সময় আগে চট্টগ্রামে রাউজানে যেসব মুক্তিযোদ্ধা ও সংখ্যালঘু সাকা চৌধুরীর হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাদের ক্ষোভ সামান্য হলেও প্রশমিত হলো।

গত বুধবার আপিল বিভাগ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। আর ওই রায়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যায় আইনি লড়াই।

রিভিউ খারিজ হওয়ার পর প্রাণভিক্ষাই ছিল সাকা চৌধুরীর একমাত্র পথ। কিন্তু প্রাণভিক্ষা নিয়ে সাকা চৌধুরী টালবাহানা করতে থাকেন। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি ক্ষমা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। তবে সেই সুযোগ তিনি পাননি।

আজ দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে সালাউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রাণ ভিক্ষার ব্যাপারে জানতে চান। পরে সালাউদ্দিন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন।

প্রাণভিক্ষার সেই আবেদন প্রথম যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতামত দেয়ার পর নথি যায় আইনমন্ত্রীর কাছে। আইনমন্ত্রীও মতামত দেয়ার পর প্রাণভিক্ষার ফাইল নিয়ে যাওয়া হয় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের। রাত ৯টার দিকে আইনসচিব বেরিয়ে আসেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে। রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করার পরই শুরু হয় দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া।

ডাকা হয় তার পরিবারের সদস্যরা। রাত রাড়ে ৯টার দিকে মূল ফটক দিয়ে তাদের কারাগারে প্রবেশ করানো হয়। শেষ দেখার পর রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে যান। এ সময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘এ সরকার যেহেতু বাবাকে নির্বাচনে হারাতে পারেনি তাই একটু পরে হয়তো তার জানটা কেড়ে নেবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রাণভিক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাবা (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) আমাদের বলেছেন- এই বাজে কথা (প্রাণভিক্ষা) তোমাদেরকে কে বলেছে?’

উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়ার পর ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাকার আইনজীবীরা। আপিল আবেদনে মোট ১ হাজার ৩২৩ পৃষ্ঠার নথিপত্রে বিভিন্ন ডকুমেন্টসহ ২৭টি গ্রাউন্ড ছিল।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে (অভিযোগ নং- ৩, ৫, ৬ ও ৮) তাকে ওই শাস্তি দেয়া হয়। এছাড়া তিনটি (অভিযোগ নং- ২, ৪ ও ৭) অভিযোগে তাকে ২০ বছরের ও দুটি (অভিযোগ নং- ১৭ ও ১৮) অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই বছরের ১৮ নভেম্বর ওই অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ২৩টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই