‘১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিচার না হলে
শুধু জামায়াত নেতাদের বিচার কেন?
পাকিস্তানের খ্যাতনামা সাংবাদিক, টেলিভিশন উপস্থাপক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক হামিদ মীর বলেছেন, অনেক পাকিস্তানিই প্রশ্ন করেন- যদি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদেরই বিচার না হয়, তবে কেবল জামায়াতে ইসলামীর কেন? তবে পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষই যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখে।
তিনি বলেন, আমরা ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তিকে অগ্রাহ্য করতে পারি না। ভারতের কারাগারে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। ওই চুক্তির আওতায় ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে হস্তান্তরের দাবি প্রত্যাহার করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ তাদের বিচার করতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান স্বীকৃতি দেয়ায় বাংলাদেশ তার অবস্থান বদলায়।
গত রোববার কালের কণ্ঠকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বুধবার কালের কণ্ঠে হামিদ মীরের ওই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে। এখানে সেই সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুরে ধরা হলো।
প্রশ্ন: গত বছরের মার্চ মাসে ঢাকায় শেরাটন হোটেলের বারান্দায় বসে আপনার সাক্ষাৎকার নেয়ার সময়ের একটি ঘটনা বলতে চাই। আপনি কালের কণ্ঠের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা নিতে আসা আরো কয়েকজন পাকিস্তানি আপনার কাছে এসে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। এরপর আপনি আমাদের বলেছিলেন, তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। কারণ বাংলাদেশ নিয়ে আপনার বক্তব্য আবার না ‘পাকিস্তানবিরোধী’ হয়ে যায়! বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা নেওয়ার পর আপনি পাকিস্তান ফেরার পর কি কোনো সমস্যায় পড়েছিলেন? আপনার সেদিনের সহযাত্রীদের মতো আপনি কি আজও বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা করছেন?
হামিদ মীর: প্রথমে আমি বলব, ২০১৩ সালে আমি পাকিস্তানের ‘হিলাল-এ-ইমতিয়াজ’-এর জন্য মনোনীত হয়েছিলাম। এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ওই পুরস্কার নেওয়ার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশ সরকারও আমার বাবা অধ্যাপক ওয়ারিস মীরকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা জানানোর জন্য মনোনীত করে। ঢাকায় যেদিন বাবার সম্মাননা দেওয়া হবে সেদিন পাকিস্তানেও আমার পদক নেওয়ার কথা। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, বাংলাদেশেই আসব। আমার বাবা ১৯৭১ সালে সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন। বাবার পক্ষে আমি তাঁর সম্মাননা নিলাম। আসমা জাহাঙ্গীর, সালিমা হাশমিসহ অন্যরাও সেদিন সম্মাননা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু যখন আমরা পাকিস্তানে ফিরে যাই তখন আমি কিছু লেখক ও টেলিভিশন উপস্থাপকের রোষানলে পড়ি। আমি কেন পাকিস্তানের বড় পুরস্কারের প্রতি অনীহা দেখিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলাম- এটিই তাঁদের ক্ষোভের কারণ। তাঁরা রেগে গিয়েছিলেন। কেন আমি বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি করি? কেন আমি নৃশংসতায় জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তার বিচার দাবি করি?
সামাজিক গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে হুমকি আসতে শুরু করে। বাংলাদেশের সম্মাননা নেওয়া অন্য পাকিস্তানিরা সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলোতে আমাকে সংঘবদ্ধ আক্রমণ করা হয়েছে। কারণ আমি অন্যদের তুলনায় বেশি জনপ্রিয় ছিলাম।
গত ১৯ এপ্রিল করাচিতে আমার ওপর হামলা হয়। ছয়টি গুলি আমার শরীরে লাগে। এখনো আমার শরীরে দুটি গুলি রয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা আমাকে হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মিস্টার মীর, আমরা জানি যে আপনি সব সময় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিরোধিতা করেছেন। আর আপনি সমর্থন করেছেন সাবেক স্বৈরশাসক মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচারকে। তবে আপনি অবশ্যই মনে রাখবেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে আপত্তিকর কথা বলার কারণেই আপনার ওপর হামলা হয়েছে।’
প্রশ্ন: বাংলাদেশিরা, বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্ব করে। যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, কারো দানে বা দয়ায় হয়নি। পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালকে কিভাবে দেখে? ১৯৭১ সাল কি এখনো পাকিস্তানের জন্য বড় ইস্যু? আমার মনে হয়, আপনারা যাঁরা নৃশংসতা, গণহত্যার বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা চাননি যে পাকিস্তান ভেঙে আলাদা রাষ্ট্র হোক। এ ধারণা কি ঠিক?
হামিদ মীর: ১৯৭১ সাল পাকিস্তানে কোনো ইস্যু নয়। একাত্তরের বাস্তবতা জানেন এমন সুশিক্ষিত পাকিস্তানির সংখ্যা খুব কম। বাকিরা মনে করেন, ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তানে আক্রমণ করে এবং বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। যখন আমরা তরুণ প্রজন্মকে সত্যটা শেখাতে চাই তখন ডানপন্থীরা আমাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেন।
আমরা মনে করি, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল। পাঞ্জাবিদের অনেক আগেই বাঙালিরা ‘পাকিস্তান মুভমেন্ট’ শুরু করেছিল। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ যখন সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সম্মান দেখাতে অস্বীকৃতি জানাল তখন সংখ্যাগরিষ্ঠরা পাকিস্তানকেই বিদায় জানিয়ে দিল। ১৯৭১ সালে আমি স্কুলে যেতাম। আমার দুটি বিষয় ভালো মনে আছে। আমার মা-বাবা সামরিক অভিযানের বিরোধী ছিলেন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হওয়ার পর তাঁদের মন খুব খারাপ ছিল। তবে তাঁরা আমাকে বলেছিলেন, বাঙালিরা বিশ্বাসঘাতক নয়।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সাল বাংলাদেশের জন্য বড় ইস্যু। বাংলাদেশ সরকার গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এ দাবি পূরণ করা পাকিস্তানের পক্ষে কতটা সম্ভব? ঐতিহাসিক ক্ষত কাটিয়ে উঠতে এটি কতটা সহায়ক হতে পারে?
হামিদ মীর: প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়। ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ মনে করেন, বাংলাদেশের কাছে দুঃখ প্রকাশে কোনো ক্ষতি নেই। রেলপথমন্ত্রী খাজা সাদ রফিক ও সরকারের আরেক মিত্র সিনেটর হাশিল বিজিনজু বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে সংসদে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু গত বছর আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি তাঁদের জন্য কিছু সমস্যার সৃষ্টি করেছে। মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে সরকারকে বিবৃতি দিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে চাপ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাতে অস্বীকৃতি জানান। তথ্যমন্ত্রী পারভেজ রশিদ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছিলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান নাক গলাতে পারে না। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর দুজন সদস্য যখন কাদের মোল্লার সমর্থনে জাতীয় পরিষদে প্রস্তাব উপস্থাপন করলেন তখন সরকারদলীয় সদস্যরা নীরব থাকলেন। আর এতেই প্রস্তাব গৃহীত হলো। প্রধানমন্ত্রী সেদিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রায় হওয়ার পর সরকার এখন আবার চাপে পড়েছে।
নিসার আলী নিজামিকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চুপ থাকতে বলেছেন। কৌতূহলের বিষয় হলো, অন্যতম বিরোধী নেতা ইমরান খান বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে এই ইস্যুতে নীরব। এর কারণ হলো, খাইবার পাখতুন প্রদেশে তিনি জামায়াতে ইসলামী জোটের শরিক। নওয়াজ শরিফের সরকার টিকে গেলে তারা একদিন বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবে বলে আমি আশা করি।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধ ও এর পরবর্তী সময়ে ভারতের ভূমিকাকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
হামিদ মীর: ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছিল মুক্তিবাহিনীর জন্যই। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি জেনারেলের আত্মসমর্পণ দলিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ভারতের সেনাবাহিনী এ ধারণাই দিতে চেষ্টা করেছে যে তারাই বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু তা ঠিক নয়।
প্রশ্ন: যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে আসা যাক। এ বিচার সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মত কী? পাকিস্তানিরাই বা একে কিভাবে দেখে?
হামিদ মীর: বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের ট্রাইব্যুনাল পাকিস্তানে বড় কোনো ইস্যু নয়। বড় সব দল এ বিষয়ে নীরব। কেবল আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এর বিরোধিতা করছেন।
প্রশ্ন: হ্যাঁ, আপনাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অনেক কথাই বলছেন। বাংলাদেশ এর প্রতিবাদও জানিয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার কি আপনারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করছেন না?
হামিদ মীর : পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষই যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখে। দ্বিতীয়ত, আমরা ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তিকে অগ্রাহ্য করতে পারি না। ভারতের কারাগারে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। ওই চুক্তির আওতায় ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে হস্তান্তরের দাবি প্রত্যাহার করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ তাঁদের বিচার করতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান স্বীকৃতি দেওয়ায় বাংলাদেশ তার অবস্থান বদলায়।
বি জেড খসরুর ‘দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিংক’ বইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সরকারি নথির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ব্যবহার করেছে। ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার বিষয়ে নীতি বদলাতে ভারত বাংলাদেশকে চাপ দেয়। কারিগরিভাবে ১৯৭১ সালের সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন মূলত পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তারা। জামায়াতে ইসলামী কেবল তাঁদের সহযোগিতা করেছে।
অনেক পাকিস্তানিই প্রশ্ন করেন, যদি সেনা কর্মকর্তাদেরই বিচার না হয়, তবে কেবল জামায়াতে ইসলামীর কেন? তবে এটিও উল্লেখ করার মতো বিষয় যে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে জনমত সৃষ্টিতে জামায়াতে ইসলামী ব্যর্থ হয়েছে।
প্রশ্ন: পাকিস্তান ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করেনি। এখন কিছু পাকিস্তানি রাজনীতিক এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তান- দুই দেশের জামায়াতই বলছে, ১৯৭১ সালের ঘটনাবলির সমাধান ১৯৭৪ সালেই হয়ে গেছে। আপনিও কি তাই মনে করেন?
হামিদ মীর : না। হামুদুর রহমান কমিশন ১৯৭১ সালে বাঙালিদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানো কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। পাকিস্তানে তাদের কারোরই বিচার হয়নি।
প্রশ্ন: যুদ্ধাপরাধ, নৃশংসতার কথা তো পাকিস্তানি লেখকদের বইয়েও স্থান পেয়েছে।
হামিদ মীর : জেনারেল নিয়াজি ১৯৭১ সালে ধর্ষণকে উৎসাহিত করেছিলেন- এর সাক্ষ্য দিচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার লেখা বই ‘অ্যা স্ট্র্যাঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। ওই বইয়ের তথ্য নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কখনো ভিন্নমত পোষণ করেনি। আসলে ওই বইটি শর্মিলা বোসের মুখে চপেটাঘাতের শামিল। আরেকটি বই, মেজর জেনারেল আবু বকর উসামা মিথার লেখা ‘ফ্রম বোম্বে টু জিএইচকিউ’তে ১৯৭১ সালে নৃশংসতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। পাকিস্তানিদের লেখা এসব বই খুনি ও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের বিচার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে আপনার বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ঘৃণ্য অপপ্রচার শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের টেলিভিশনের সঙ্গে আপনার কথোপকথনকে ভারতীয় টেলিভিশনের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথোপকথন বলে নতুন মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর কারণ কি শুধুই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার অবস্থান?
হামিদ মীর : গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে যোগাযোগ আছে এমন কিছু পাকিস্তানি সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন। গত বছর বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপ তাঁরা ব্যবহার করছেন। অথচ ওই মিথ্যাবাদীরা দাবি করছেন যে আমি ভারতের কিছু টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেছি।
এআরওয়াই চ্যানেলের টিভি উপস্থাপক মুবাশির লুকমানসহ এসব ব্যক্তি বলছেন, হামিদ মীর ভারতের হয়ে কাজ করেন। আসলে তাঁরা আমাকে ঘৃণা করেন। কারণ আমি সব সময়ই গণতন্ত্রের সমর্থক ছিলাম। ওই মুবাশির লুকমান ২০০৭ সালে সাবেক স্বৈরশাসক মোশাররফের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর সরাসরি সম্প্রচারিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি প্রকাশ্যেই সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণ করতে বলেছিলেন। তিনি বিচারকদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছিলেন এবং বর্তমানে আদালত অবমাননার অভিযোগ মোকাবিলা করছেন। আমি এমন কিছু শক্তির নিশানায় পরিণত হয়েছি যারা চায়, সেনাবাহিনী পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করুক। আমি প্রকাশ্যেই এর বিরোধিতা করছি। কারণ আমি মনে করি, আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান পাকিস্তানের অবশিষ্ট অংশকেও ভাঙবে।
প্রশ্ন: বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে দেখেন?
হামিদ মীর : বাংলাদেশ অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে একই সঙ্গে আমি মনে করি, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত- সবার জন্যই অভিন্ন সমস্যা হয়ে উঠছে। উগ্রবাদকে পরাজিত করতে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে অবশ্যই হাত মেলাতে হবে। আমাদের শান্তির শত্রুদের পরাজিত করতে অবশ্যই যৌথ কৌশল নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই