শিরশ্ছেদের জন্য জল্লাদ চাই সৌদিআরবের
যুদ্ধ সংঘাতে প্রতিদিন বিশ্বে অগুনতি মানুষ মারা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে চলমান যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ক্রমশ মাত্রা ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর মাঝেও কিছু মৃত্যু মানুষের চিন্তার রাজ্যে বাড়তি জায়গা করে নেয়। সামাজিক দৃষ্টিকোনে যাকে অপরাধ বলে স্বীকৃতি দেয় এবং সেই অপরাধের কারণে যখন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তখন সেটা স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি গুরুত্ব পায়। আর এই বাড়তি গুরুত্ব পাওয়ার কারণও সেই অপরাধ সংক্রান্ত সত্য-মিথ্যার আপেক্ষিকতা। একটা সময় ছিল যখন সামান্য অপরাধের জন্যও বর্বর কায়দায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো। কিন্তু সময়ের এবং মানুষের সভ্য হওয়ার প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার কায়দায় অনেক পরিবর্তন আসে। আগে যেখানে ধারালো তলোয়ার দিয়ে শিরশ্ছেদ করা হতো, এখন সেখানে দড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় অপরাধীদের। একটা সময়ে বর্তমান আধুনিক ইউরোপে অনেক বর্বর কায়দায় মানুষকে হত্যা করা হতো, গিলোটিন এর মধ্যে অন্যতম।
কিন্তু আজও পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে মধ্যযুগীয় কায়দায় অপরাধীদের হত্যা করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র সৌদিআরব। তবে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয় যে, শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দান একদিকে যেমন তাদের ঐতিহ্য, তেমনি অপরাধীর অনেক কম কষ্ট হয় এই পন্থায়। বিশ্বের অনেক দেশে যখন অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেখানে সৌদি কর্তৃপক্ষ যতই তাদের কাজের পক্ষে যুক্তি দিক না কেন, তাতে কিন্তু মৃত্যুদণ্ড লাঘব হচ্ছে না।
সম্প্রতি সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যমে আরও নতুন আট জল্লাদ নিয়োগের ব্যাপারে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। দেশটির সবচেয়ে ভয়ানক পেশা এবং সবচেয়ে কম মজুরি ও কোনো সরকারি সুবিধাই দেয়া হয় না এই কাজের জন্য। তবুও বিগত বছরগুলোতে দেশটিতে শিরশ্ছেদের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সৌদি সরকারকে নতুন জল্লাদ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিশেষত প্রকাশ্যে অপরাধীদের শিরশ্ছেদের জন্যই এই জল্লাদদের ব্যবহার করা হয়। এর আগে নিয়োগ ছাড়াই জল্লাদদের নিয়োগ দেয়া হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে জল্লাদ না পাওয়ায় বিজ্ঞাপন দিতে হয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষকে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা না লাগায় যে কেউ চাইলে এই কাজের জন্য দরখাস্ত করতে পারবে।
সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড দাতা দেশগুলোর মধ্যে সৌদিআরব তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। চীন এবং ইরানের পরেই আছে সৌদিআরবের নাম। আর এর পরের দুইটি দেশই হলো ইরাক এবং যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই দেশগুলোকে দীর্ঘদিন ধরেই মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছে। কিন্তু অনেক দেশ সেই আহ্বানে সাড়া দিলেও এই পাঁচটি দেশ কোনো সাড়া দেয়নি। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে উল্লিখিত দেশগুলোর রাজনৈতিক অবস্থা মোটেও স্থিতিশীল নয়। ২০১৪ সালে যেখানে সৌদিআরবে ৮৮জন অপরাধীর শিরশ্ছেদ করা হয়, সেখানে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই ৮৮জন অপরাধীর শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। যদিও অ্যামনেস্টির দেয়া দাবি অনুযায়ী গত বছর সৌদিআরবে ৯০জনের শিরশ্ছেদ হয়েছিল।
সৌদিআরবে চলতি বছর যাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই পাকিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়া, জর্ডান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, চাদ, ইরিত্রিয়া, ফিলিপাইন এবং সুদানের বাসিন্দা। কেন সৌদিআরবে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়েছে সেব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানানো না হলেও বিশেষজ্ঞদের দাবি, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদিআরবের কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতি হওয়ার পর থেকে দেশটি হার্ডলাইনে অবস্থান নেয়ায় অনেক বেশি মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
মন্তব্য চালু নেই