শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীকে কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন বৌমা মানেকা
গান্ধী পরিবারে সদস্য হয়েও আজ মানেকা গান্ধী যেন সেই পরিবারের কেউ নন৷ অনেক ক্ষোভ অপমান নিয়ে ছাড়তে হয়েছিল মানেকাকে তার শাশুড়ির বাড়ি৷ তবে মানেকা যাওয়ার আগে একেবারে নাকের জলে চোখের জলে হয়েছিলেন কঠিন নারী প্রিয়দর্শনী (ইন্দিরা গান্ধী)৷ যে রেশ এখনও চলেছে৷
বড় ছেলে রাজীবের চেয়ে ছোট ছেলে সঞ্জয় ছিল মা ইন্দিরা গান্ধীর অধিক প্রিয়৷ কিন্তু সঞ্জয়ের মৃত্যু পর ইন্দিরা এবং মানেকা সম্পর্কের চিড় ধরেছিল৷ অচিরেই এলো পরিবারে ভাঙন৷ অবশ্য সেটা রাজনীতির হলেও রয়েছে রাজনীতির আড়ালে থাকা এক ভিন্ন কাহিনী৷
প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি হলেও তা আলাদা হবে কেন – সেখানেও ছিল শাশুড়ি-বউমার সনাতন বিবাদ। সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুর পর ইন্দিরাজির মনে হয়েছিল ছোট বউমা মানেকা তার পরিবারের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে না কারণ সে নেহরু-গান্ধীদের পরিবারের উপযুক্ত নয়।
১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর মেজর জেনারেল কাপুরের ছেলে ভিনু কাপুরের আসন্ন বিয়ে উপলক্ষে দেওয়া ককটেল পার্টিতে মানেকার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল সঞ্জয়ের ৷ এই মেজর জেনারেল কাপুর হলেন মানেকার পিসেমশাই এবং তার ওই পিসি ছিলেন এক ডাকসাইটে সুন্দরী। আবার ভিনু হলেন সঞ্জয়ের একেবারে স্কুলজীবনের বন্ধু। এদিকে ওইদিনটি ছিল আবার সঞ্জয়ের জন্মদিন। ফলে সঞ্জয়ের মন ছিল তখন একেবারে খুশিতে ভরপুর৷ তবে এটাও ঘটনা সঞ্জয় হাই স্পিরিটেড হলেও অ্যালকোহলিক ছিলেন না -পানীয় ছুঁতেন না।
পার্টিতে মেয়েদের দিকে নজর ঘুরছিল তার৷ যদি বুঝতেন কেউ একেবারে দেশের ফার্স্ট ফ্যামিলির সদস্য হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে আসছে তখনই তার সঙ্গ এড়িয়ে যেতেন। মানেকা তখন মাত্র ১৭ বছর বয়সের৷ দারুণ ফটোজেনিক এবং ইতিমধ্যেই এক তোয়ালে প্রস্তুতকারক সংস্থার হয়ে মডেলিং করেছেন। ওই পার্টিতে প্রথম দেখার পর সঞ্জয় ও মানেকা প্রতিদিনই দেখা করতে শুরু করেন। সঞ্জয় অবশ্য আর পাঁচজন যুবকের মতো রেস্তোরাঁ কিংবা সিনেমায় যেতে চান না৷ কারণ তেমন কোথাও গেলে তাকে যে চিনে ফেলবে অনেকেই ৷ ফলে নয় তিনি যেতেন মানেকাদের বাড়ি কিংবা মানেকাকে ডেকে নিতেন নিজেদের বাড়িতে।
১৯৭৪-এর গোড়ার দিকে মানেকা মুখোমুখি হলেন ইন্দিরা গান্ধীর। সে সময় একেবারে প্রধানমন্ত্রীকে সামনে মানেকা কার্যত নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন৷ তবে হবু শাশুড়িই পরিস্থিতি হালকা করতে বলেছিলেন- ‘সঞ্জয় যখন পরিচয় করিয়ে দেয়নি তাহলে তুমিই বলো তোমার নাম কি এবং এখন কী করো?’ যদিও মানেকার মা আমতেশ্বর আনন্দ দাবি করেন, তার মেয়েকে দিয়ে সঞ্জয়কে ফাঁদে ফেলার কোনও চেষ্টা তারা করেননি বরং ওই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক হবে না এমনটা অনুভব করে মেয়েকে ওদিকে যাওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করেন। এজন্যই তিনি মানেকাকে কিছুদিনের জন্য দিদিমার কাছে ভোপালে পাঠিয়ে দেন।
কয়েক মাস বাদে ভোপাল থেকে ফিরে আসেন মানেকা। তারপর ১৯৭৪ সালে ২৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর ১নং সফদরজং রোডের বাড়িতে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে দু’জনের এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান হয়। সেদিন শ্রীমতী গান্ধী নতুন বউমাকে সোনা ও ফিরোজা পাথরের একটি সেট এবং একটি তাঞ্চয়ই শাড়ি উপহার দেন। এর কয়েকদিন পর মানেকার জন্মদিন উপলক্ষে (২৬ আগস্ট ) তিনি তাকে ইতালীয় সিল্কের শাড়ি দেন। কিছুদিন পরে যখন সঞ্জয়ের হার্নিয়া অপারেশন হয়, তখন প্রতিদিনই বিকেল ও সন্ধেটা অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের একটি প্রাইভেট ওয়ার্ডে মানেকা আসতেন তাঁর প্রেমিককে দেখতে।
সুস্থ হয়ে সঞ্জয় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৭৪ সালের২৩ সেপ্টেম্বর সঞ্জয় ও মানেকার সিভিল ম্যারেজ অনুষ্ঠিত হয়।তখন শ্রীমতী গান্ধী বউমাকে বিয়ের উপহার দেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্টই উদারতা দেখিয়েছেন৷ সেই উপহারের তালিকায় ছিল একুশটি দামি শাড়ি, দুটি সোনার অলংকারের সেট, একটি লেহেঙ্গা ইত্যাদির পাশাপাশি একটি খাদির শাড়ি, যেটি জেলখানায় থাকার সময় খোদ জওহরলাল নেহরুর নিজের হাতে চরকায় তৈরি সুতোতে বানানো। তাছাড়া দেখা গিয়েছিল সনাতন ঐতিহ্যবাহী শাশুড়ির মতোই পুত্রবধূকে বরণ করে নিতে৷ কারণ ড্রেসিং টেবিলে শোপিস ইত্যাদিতে তাঁদের ঘর সাজিয়ে যেমন দিলেন, তেমনই বিয়ের পরদিন মানেকা কোন চুড়ি পরবে সেটাও ঠিক করে দেন প্রিয়দর্শিনী।
১৯৮০ সালের ২৩ জুন বিমান দুর্ঘটনায় সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়৷ এর কিছুদিন পরেই ইন্দিরাজিও নিজেই প্রস্তাব দেন মানেকাকে তার সচিব হিসেবে কাজ করার। কয়েকদিন পরেই ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারী মানেকার ঘরে এসে তাকে জানান, শ্রীমতী গান্ধী একটা বিষয় তাকে জানাতে খুব বিব্রত বোধ করছেন৷ কারণ মানেকাকে দেওয়া তার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তার বড় বউমা সোনিয়া হুমকি দিয়েছেন – অমন প্রস্তাব প্রত্যাহার না করলে স্বামী-সন্তান নিয়ে একেবারে ইতালি ফিরে যাবেন। তবে শুধু মানেকা বলে নয় শাশুড়ি হিসেবে সোনিয়ারই প্রতিও তিনি অবিচার করেছেন৷
বিশেষত সোনিয়ার অভিযোগ ছিল, তার প্রথম গর্ভাবস্থায় বিশালদেহী দেখাতো বলে শাশুড়ির চাপে পড়ে অতিরিক্ত ব্যায়াম করতে গিয়ে তার পাঁচ মাসের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। যদিও মানেকার অভিযোগ, সঞ্জয়ের বেঁচে থাকতেই তার শাশুড়ি বড় বউমার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করতেন৷ যার জন্য ঘড়ি ও কলমসহ নেহরুজির বিভিন্ন জিনিসপত্র দেশিয় বউমাকে দেওয়ার বদলে বিদেশি বউমাকেই দিতে দেখা যেত৷
অর্থাৎ সঞ্জয় যেমন তার অধিক পছন্দের পুত্র, তেমনই বউমা হিসেব সোনিয়াই ছিলেন তার অধিক পছন্দের। আর সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর একমাত্র জীবিত সন্তানের দিকে আরও বেশি করে ঝুঁকে পড়েন নেহরু কন্যা। তাছাড়া সঞ্জয়ের শাশুড়ি আমতেশ্বরের খবরদারিও তিনি পছন্দ করতেন না। ফলে সবদিক থেকেই ক্রমশ মানেকার উপর থেকে মুখ ফেরাচ্ছিলেন তিনি৷ দেখা যাচ্ছিল মানেকার উপস্থিতিও তার বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছিল৷ তখন থেকেই একেবারে শাশুড়ি সুলভ কারণে অকারণে ছোট বউমার দোষ ধরতে লাগলেন।
এই সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মিসেস মার্গারেট থ্যাচারের সম্মানে দেওয়া ভোজসভায় প্রধান টেবিলে রাজীব ও সোনিয়াকে প্রধান অতিথির সঙ্গে বসানো হলেও মানেকাকে বসানো হল শ্রীমতী গান্ধীর ব্যক্তিগত সচিব আর.কে. ধাওয়ানসহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনের সঙ্গে। কারণ নাকি সে টেবিল সৌজন্য জানে না৷ এরপর শাশুড়ি-বউমা সম্পর্কের এতটাই অবনতি হতে থাকে যে ঘনিষ্ঠ মহলে একে অপরের আচরণ নিয়ে নিন্দা করা শুরু করে দেন৷
ফলে অনেকেই জল্পনা শুরু করে দেয় – এক নম্বর সফদরজং রোড থেকে মানেকার চলে যাওয়া হাতেগোনা কটা দিনের অপেক্ষামাত্র। তখনও ইন্দিরা গান্ধী কখনও ভাবতে পারেননি তিনি ছাড়া অন্য কেউ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে অর্থাৎ তার জন্য অপেক্ষা করছিল এক নোংরা বিস্ময় – ন্যাস্টি সারপ্রাইজ।
শাশুড়ির কাছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মানেকা নেওয়ার পর ঠিক করেছিলেন, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময়কার শর্ত তিনিই নির্ধারণ করবেন। এজন্য রীতিমতো সতর্ক ভাবে দিনক্ষণ বাছলেন৷ ইন্ডিয়া ফেস্টিভালে যোগ দিতে ইন্দিরা গান্ধী লন্ডনে গিয়েছেন এবং রাজীব ব্যস্ত তখন নিজেকে তৈরি করার কাজে৷ খাবারের সময় মানেকার সঙ্গে দেখা হওয়া এড়াতে বাড়িতেই থাকছেন না রাজীব। সুযোগটি বুঝে তখনই মানেকা ও তার মা বাড়ি থেকে দলিল-দস্তাবেজ যা কিছু সরিয়ে ফেলার তা সেরে ফেললেন।
ভাই বোন যথারীতি তার ভ্যানটি নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেন এবং কোনও তল্লাশি ছাড়াই বেরিয়ে যেতেন। এই সময় মানেকা উত্তরপ্রদেশের নেতা আকবর আহমেদ (ডাম্মি)-কে নিয়ে সঞ্জয় বিচার-মঞ্চের গড়ে তুলে শাশুড়িকে অস্বস্তিতে ফেললেন৷ কারণ নিজেরই ছেলের আদর্শ প্রচারের জন্য গঠিত এমন সংস্থা যে ইন্দিরাজি অনুমোদন করেন না তা প্রকাশ্য কেমন করে বলবেন তা ভেবে পেলেন না তিনি। অন্যদিকে সঞ্জয় মঞ্চের উদ্বোধনী ভাষণে মানেকা দাবি করল এই ভাষণ শাশুড়ির অনুমোদন করেছেন৷ সেটি আবার রাজীব টেলিগ্রাফে মারফত লন্ডনে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠিয়ে দেন। এদিকে প্রিয়দর্শনীও বুঝলেন এই দুর্বিনীত পুত্রবধূকে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসেছে ।
অবশেষে ১৮ মার্চ ১৯৮২ লন্ডন থেকে ফিরলেন ইন্দিরা৷ তখন মানেকাকে জানান, তার সঙ্গে পরে কথা হবে। এদিকে পারিবারিক মধ্যাহ্নভোজনে তার আসার দরকার নেই, ঘরের খাবার পাঠান হবে বলে খবর এল মানেকার কাছে। দুপুর একটা নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য ডাক পড়ল৷ ওই ভাষণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শাশুড়ি তাকে জানিয়ে দিলেন তক্ষুনি বাড়ি থেকে চলে যাবার জন্য৷ তাকে বাপের বাড়ি পাঠানোর জন্য গাড়ি বলা হয়েছে বলে জানানো হয়৷ কিন্তু ওই মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলেন না মানেকা৷ গোছগাছ করার জন্য তিনিও কিছুটা সময় চাইছিলেন৷
তাই বাপের বাড়ি যেতে চান বলে জানান৷ কিন্তু তার শাশুড়ি জানিয়ে দেন পরে জিনিসপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷ এরপর মানেকা তার ঘরে ফিরে প্রথম যে-কাজটি করেছিলেন সেটা হল সঞ্জয়ের পুরানো বন্ধু ও কো-পাইলট কে.ভি. সিংকে ফোন করে পুরো ঘটনা জানান এবং সকলকে তা জানাতেও অনুরোধ করেন৷ কারণ তার আশঙ্কা ছিল, পরে সে কথা হয়তো কাউকে তিনি তা জানাতে পারবেন না। আর দেখা গেল ফোনের রিসিভার রাখতে না রাখতেই তার টেলিফোন ডেড এবং প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে তখনই মানেকার বন্ধুরা গণমাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ফলে রাত ৯টার মধ্যে বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ ফটোগ্রাফার ও রিপোর্টাররা ওই বাড়ির গেটের সামনে ভিড় করল৷৷ সংবাদ মাধ্যমে একথা চাউর হওয়ায় ইন্দিরা গান্ধী কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেন৷ এর কিছুক্ষণের মধ্যে মানেকার ভাই ও বোন সেখানে গেলে গেটে আটকে দেওয়া হল যা গত আট বছরে কখনও হয়নি৷ ইন্দিরাজির কাছে খবর গেল মানেকার বোন অম্বিকা সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছে৷
তখন তাদের গাড়ি বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হল এবং তারা মানেকার ঘরে গেল৷ সেখানে তারা দেখলেন কাঁদতে কাঁদতে মানেকাকে ট্রাঙ্ক গোছাতে। ঘরে ঢুকে মানেকার শাশুড়ি যথারীতি বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেন৷ কিন্তু সেই নির্দেশের প্রতিবাদ করে অম্বিকা জানায়, তারা যাবে না কারণ এটা মানেকার বাড়ি৷ তখন প্রিয়দর্শিনী পাল্টা জবাব দেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ফলে অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কেউ ঢুকতে বেরতে পারে না৷ কিন্তু তাতেও আম্বিকা না দমে উল্টে জানিয়ে দেয়- এটা সঞ্জয়ের বাড়ি এবং সঞ্জয়ের স্ত্রী হওয়ার সুবাদে এটা মানেকারও বাড়ি।
ফলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেও এভাবে কোনও নির্দেশ দিতে পারেন না। যা শুনে কিছুটা থতমত খেয়ে যান যেন নেহরু কন্যা৷ কাঁপা গলায় দাবি করেন, তিনি তাকে বেরিয়ে যেতে বলেননি এবং জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলেননি৷ যা শুনে দুই বোনই সাহস পেয়ে বলে ওঠে – ‘আপনি জীবনে কখনও সত্যি বলেননি।’ বিধ্বস্ত অবস্থায় তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে যথারীতি তাকে কোনওরকম পাত্তা না দিয়ে দুই বোন রয়ে যান এবং নির্লিপ্ত ভাবে খাবারে অর্ডার দিয়ে ভিডিওতে সিনেমা দেখতে থাকেন৷ পাশাপাশি চলে পরবর্তী ধাপের জন্য প্যাঁচ কষা।
এরপর প্রতিবারই ধাওয়ান যখন এসে মানেকাদের বাড়ি ছাড়ার কথা বলছেন, তখনই তারা একটার পর একটা নতুন-নতুন দাবি পেশ করতে থাকেন। আর মানেকা জানিয়ে দেন তাদের গোছান জিনিস পত্র কিছু তল্লাসি করতে চাইলে তা করতে হবে একেবারে গেটের বাইরে সংবাদ মাধ্যমের সামনে৷ পাশাপাশি তখন চলতে থাকল দুপক্ষের মধ্য গালিগালাজ ৷ সেই সময় অম্বিকাও যেভাবে তার বোনের শাশুড়িকে গালিগালাজ করতে থাকেন তা নেহরু কন্যা কোনও দিন শোনেননি। কার্যত লড়াইটা তার আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ায় সেদিনে তার চোখে জল এসে যায় ফলে অস্বস্তি এড়াতে তিনি ওই স্থান থেকে কার্যত পালিয়ে গেলেন।
অরুণ নেহরু ও রাজীব এসে নিরাপত্তা অফিসারদের ডেকে নির্দেশ দেন এবং দুই বোনকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার৷ বিচক্ষণ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তখন কাগজে-কলমে আদেশ চান। তখন অবশ্য এদের কেউই লিখিত নির্দেশ দিতে পারেন না৷ এদিকে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন দুই বোন৷ বলা হয় বাক্স পেঁটরা, কুকুর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে এবং মানেকা পুত্র ছোট্ট বরুণকে আগে রেখে আসতে হবে। একথা শুনে রাজীব নিরাপত্তা কর্তাদের কাছে প্রত্যাশিত দায়িত্ব নিতে বলেন।
যদিও তারাই প্রশ্ন তোলেন ‘তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলে তখন কী হবে? অরুণ নেহরু ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, স্থানীয় থানাকে বলা আছে তারা যাতে মানেকার কিংবা তার পক্ষে কারও অভিযোগ না নেয়। সে কথা শুনে বরং নিরাপত্তা কর্তারা তাদের সতর্ক করেন বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টা জানাজানি হলে হিতে বিপরীত হবে৷ পরিস্থিতি বুঝে রাজীব মায়ের কাছে ছোটেন পরামর্শ নেওয়ার জন্য। গান্ধী পরিবারের ওই শাশুড়ি অবশ্য বুঝে গিয়েছেন ম্যাচ বউমার নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে৷ একে একে জিনিসপত্র এবং কুকুর একটি গাড়িতে উঠে রওনা দিল৷ তারপর মানেকা পুত্র ঘুমন্ত বরুণকে তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হল৷
এরপর অভ্যাস মতো ইন্দিরাজি মানেকাকে লেখা একটি চিঠির ডিকটেশন দেন, তাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কেন তাকে বহিষ্কার করা হল। অবশ্য মানেকাও জবাব লিখতে বসে গেলেন এবং তা পাঠিয়ে দেওয়া হল সাংবাদিকদের কাছে। তারপর গভীর রাতে মানেকা ছেলে বরুণকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন গেটের বাইরে৷ জ্বলে উঠল একগুচ্ছ ফ্ল্যাশ লাইট৷ শাশুড়িকে আপাতত পিছনে ফেলে ‘অ্যাডভান্টেজ’ নিয়ে ফেলেছেন বৌমা৷ সূত্র : কলকাতা ২৪
মন্তব্য চালু নেই